পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখন সম্মিলিত ভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও ক্লিন এনার্জি নিয়ে নানারকম পদক্ষেপ নিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের কার্বন বা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এর মত আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ভাবমুর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাই এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সচেতন মানুষ নানারকম প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে । গতকাল (১লা ডিসেম্বর) অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং সুন্দরবন রক্ষার জন্য সংহতি জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরাতে পার্লামেন্ট ভবন এর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় উপস্থিত বাংলাদেশিদের হাতে Save Sundarban, Stop Rampal ইত্যাদি প্লেকার্ড এবং ব্যানার ছিল। বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ শেষে অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন অফিসে মাননীয় হাই কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
বিক্ষোভ এবং স্বারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান শাকিল, সিদ্দিকুর রহমান কমল, নিউটন মুহুরী, রাশা বিনতে মহিউদ্দিন, কামরুল আহসান খান, নাজনীন আনোয়ার, আশরাফুল আলম, রাজু সহ আরো অনেক বাংলাদেশী ও অস্ট্রেলিয়ান শুভানুধ্যায়ী।
প্রথম বারের মত বিশ্বনেতারা ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে (ডিসেম্বর, ২০১৫) চুক্তি সাক্ষর করে যে তারা বিশ্ব তাপমাত্রা কমাতে কার্বন নিঃসরণ কমাবে । সেই লক্ষে তারা জীবাশ্ম জালানী যেমন ঃ তেল, কয়লা যুগ এর অবসান এর মাধ্যমে ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশ বান্ধব টেকসই উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদন কারি দেশগুলোও চুক্তিতে সাক্ষর করে।বাংলাদেশ সেই জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫০ টি দেশের নেতারা সেই চুক্তিতে সাক্ষর করে। সেখানে বাংলাদেশের কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উতপাদন ফ্রান্সের এই ঐতিহাসিক জলবায়ু সম্মেলনে চুক্তির বিপক্ষে।কেননা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাতাসে কার্বন নিঃসরণ বাড়াবে যেটা সরাসরি গ্রিন হাউজ এফেক্ট এর জন্য দায়ী এবং সেটা পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধনাত্মক নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। ফলে বাংলাদেশের খুব কাছেই হিমালয় এর বরফ গলা পানি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নিচু অংশগুলোকে বন্যা ও লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে পড়বে ।
জলবায়ু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উন্নত দেশ গুলো উন্নয়নশীল দেশকে রিনিউয়েবল এনার্জি যেমন সোলার বিদ্যুৎ,পানিবিদ্যুৎ, উইন্ডমিল ইত্যাদি থেকে ক্লিন এনার্জি উৎপাদনে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার চুক্তি করে, এছাড়া ক্লিন এনার্জি উৎপাদনের বিনিয়গে ২৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এর কথা বলে যেটা পরবর্তিতে বিশ্বব্যাপী সাড়ে ছয় মিলিয়ন কর্মসংস্থান তৈরি করবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রত্যাশা এই আত্মঘাটি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে দেশে দেশে সম্ভাবনাময় ক্লিন এনার্জি ও পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে যুগোপযুগি ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে মানব কল্যাণ কর পদক্ষেপ নেওয়া ।
আগামী ৭ ই জানুয়ারী তেল, গ্যস ও বন্দর রক্ষার জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে গ্লোবাল প্রটেস্ট ডে ঘোষণা করা হয়। তাতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের কর্মসুচি রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা থেকে রাশা বিনতে মহিউদ্দীন, লেখক ও গবেষক পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ, ইউনিভার্সিটই ওফ হোয়েনহেইম, জার্মানি