সেপ্টেম্বর ২০১১, অফিসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। হাতের কাজ শেষ করেছি অনেক আগেই। তবুও নিয়ম রক্ষার জন্য রাত দশটা পর্যন্ত থাকতে হবে কলিগ এর হাতে শিফ্ট হস্তান্তর করার জন্য। ফেসবুকেও ভাল লাগছে না। বসে বসে ভাবছি ব্যাচেলর শেষ করেছি এক বছরের বেশি হয়ে গেল, আর গত তিনবছরে ব্র্যাক, বেঙ্গল ইন, আইসিডিডিআর,বি তিনটা চাকরির অভিজ্ঞতাও হয়ে গেল। জব করে ব্যচেলর শেষ করতে পেড়েছি ,মাস্টার্সও পারব। গত সপ্তাহে বাবা বলতেছিল তার পেনশনের টাকাগুলোও ব্যাংকে পড়ে আছে। ইচ্ছে করলে আমি বাইরে গিয়েও মাস্টার্স করতে পারি। অস্ট্রেলিয়া আর কানাডা এর কথা ভেবেছিলাম কিন্তু স্পন্সর এর বিশাল এমাউন্ট এর কথা শুনে সে আশা আর বেশি দূর এগোয় নি। কি করে কি করি,লন্ডনে পড়তে যাওয়া বন্ধু ও বড়ভাইদের অবস্থার কথা শুনে দেশ ছাড়ার ইচ্ছা উবে গেল।
লন্ডনের এক বড়ভাই বলল জার্মানির জন্য চেষ্টা করতে। কিন্তু কি করে কি করবো। জার্মান এমব্যাসির ওয়েবসাইট ঘেটে মনভরার মত তেমন কোন ইনফরমেশন পেলাম না। তাহলে কি করা যায় ভাবতে না ফেসবুকে এলাকার এক ছোটভাই যে কিনা কানাডা, অষ্ট্রেলিয়ার জন্য চেষ্টা করছে এর মেসেজ, ”ভাই আগামী কাল ফ্রি আছেন? কয়েকটা এজেন্সিতে যাব অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারে কথা বলতে। বাবা যাএা বাড়ির জমিটা বিক্রি করে দিয়েছে। আপনিতো জার্মানির কথা ভাবতেছেন, তাহলে একসাথে কথা বলা যাবে।” কথায় আছে না যার মনে যা লাফিয়ে বেড়ায় তা। ওরসাথে টাইম ঠিক করে প্রথম আলো খুলে কয়েক পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল বিনা ”বেতনে জামানীতে পড়ুন। স্পট এডমিশন। জার্মান প্রতিনিধি এখন ঢাকায়। তার সাথে সরাসরি কথা বলতে এখনই ফোন করে আপনার সময় ঠিক করুন”। বড় বড় করে লেখা এডটা পড়েই ফোন দিতেই এসএসবিসিএল এর মিস্টার ফয়সাল ফোন রিসিব করেই তাদের প্রতিনিধির সাথে কথা বলার জন্য সময় আর তাদের অফিসের ঠিকানা দিল। পত্রিকার বাকি পাতাগুলো থেকে বিএসবি, ভিসা ওয়ার্ল্ড সহ বিনাবেতনে জার্মানিতে পড়ার আরো কয়েকটা এজেন্সির খোঁজ পেলাম।
ভাবলাম, সবার কাছ থেকে ইনফরমেশন নিয়ে বুঝতে পারবো আসল ব্যাপারটা কি। আর যেহেতু খরচ ও একটা বড় ব্যাপার, তাদের কাছ থেকে খরচের একটা আইডিয়া তো পাওয়া যাবে। এসএসবিসিএল নিয়ে কিছু কথা বলে নেয়া ভাল। আমি যতদূর পেরেছি,এজেন্সির মাধ্যমে যত এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্টুডেন্ট এসেসছে এসএসবিসিএল মাধ্যমে। আর এসএসবিসিএল এর ভিসাও পায় নাকি বেশি। কারনটা যদিও বলা হয় যে এসএসবিসিএল এর স্টুডেন্টরা বাংলাদেশ থেকে জার্মান এ১ কোর্সটা করে, তার পর ভিসা ইন্টার্ভিও দেয়া। আর এই কোর্সটার ক্লাস করানোর জন্য আগে জার্মানি থেকে টিচার আসত। কিন্তু এখন আর জার্মানি থেকে টিচার নেয়া হয় না। যতদূর শুনেছি (সত্যিটা যাচাই করার সুযোগ হয়নি) এখন ঢাকার গোয়েথে ইন্সটিটিউট এর কোন এক টিচার ক্লাস নেয়। বলে রাখা ভাল গোয়েথে ইন্সটিটিউশনের কিছু টিচার আবার জার্মান এমব্যাসির এ জব ও করে। আর ঐ টিচারও তাদের একজন। এখন অনেক ল্যাঙ্গুয়েজ স্টুডেন্টও তাই ভিসা পাচ্ছে । যাই হোক পরেরদিন সকালে রওনা দিলাম ফাঁদে পা দেবার উদ্দেশে। প্রথম গন্তব্য রাজধানীর কেন্দ্রস্থল মতিঝিলস্ত জীবন বীমা ভবন এ এসএসবিসিএল অফিস যেখানে একজন জার্মান থেকে আগত ইউরো এশিয়া নামক ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের প্রতিনিধি বসে আছেন। আমাদেরকে তার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে এজেন্সি এর ফাঁদে দ্রুত আটকাতে।
যাই হোক বেলা এগারটার আগেই মতিঝিলের সুউচ্চ বিল্ডিয়ের সপ্তম তলার সুসজ্জিত বিশাল অফিসে পৌছে রিসিপশনে যেতেই তাদের দেয়া কাগজে নাম, ফোন নাম্বার, কোন দেশে পড়তে যেতে চাই তা লিখে অপেক্ষা করছি জার্মান প্রতিনিধির সাথে দেখা করার জন্য। যেহেতু দেশের প্রথম সারির পত্রিকায় এড দিয়েছে, গত কয়েকদিন তাই আমার মত অনেকেই এসেছে জার্মান থেকে আগত এডমিশন প্রতিনিধির সাথে কথা বলে তার পরামর্শ নিতে। তো কিছুক্ষন পর আমার সাথে আরও কয়েকজনের ডাক পড়ল ভিতরে যেতে। পরিচয় পর্ব শেষে জানতে পারলাম আসলে যার সাথে কথাবলছি সে নিজেও জার্মানিতে মাস্টার্স করে এখন সেখানে জব করছে। সেও আমাদের মত অন্য দেশ থেকে গিয়েছে। একে একে সবার কাছেই জানতে চাইল কেন এবং কি জন্য জার্মানিতে যেতে চায়। সবার কথা শুনে সে একে একে পরামর্শ দিচ্ছে, যার সার-সঙ্খেপ এমনঃ জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে টাকা পয়সা লাগে না, শুধু এডমিনিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়, তাও প্রতি সেমিয্টারে একবার। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, জার্মান ভাষায় পড়তে হবে, মানে জার্মান ভাষা কোর্স করে বিশ্ববিদ্যালয়েতে যেতে হবে। আর এ কোর্স ব্যাচলর এর জন্য ৬ মাস, মাস্টার্স এর জন্য ৯ মাস।
আর বিস্তারিত বর্ননা মিস্টার ফয়সাল দিলেন যার সার-সঙ্খেপ অনেকটা এমনঃ ভাষা কোর্স এর জন্য প্রায় ৬৫০০ ইওরো আর তাদের প্রসেসিং ফি ৫০০০০ টাকা। আর বাংলাদেশে এ১ কোর্স করে তারপর ভিসা ইন্টার্ভিউ দিতে হবে। সবকিছু ওকে হলে, তাদের ফিস ৫০০০০ টাকা দিতে হবে। কিন্তু তাদের কে শুরুতে ১,৫ লাখ টাকা দিয়ে এ১ কোরস শুরু করবে। কোর্স শেযে ভিসা ইন্টার্ভিউ দিবে, ভিসা পেলে ব্লক থেকে ওদের ভাষা কোর্স ফি দিতে হবে। সব হিসাব নিকাশ করে দেখলাম প্রায় ১৩ খেকে ১৪ লাখ টাকার ব্যাপার যা আমার বাবার একাউন্টেও নাই।
যাক একটা আইডিয়াতো পেলাম। বিনামূল্যে পরামর্শ আর খরচের হিসাব সম্বলিত কাগজ হাতে নিয়ে যাচ্ছি আর এক এজেন্সি ভিসা ওয়াল্ড ওয়াইড এর দিকে। মনে মনে নিজের আর বাপের টাকার হিসাব মেলাচ্ছি। ভিসা ওয়ার্ল্ড এর অভিঙ্গতার বর্ননা আজ আর দিব না। আশা করি আগামী লেখায় তা পাবেন। (চলবে…)
লিখেছেন Anisul H Khan Based ,জুন ২০১৩
এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ১ )
এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৩ ) -বিশ্বাস এখানে ও সেখানে
এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৪)- খরচের আসল হিসাব
এজেন্সি – স্বপ্ন ও বাস্তবতা- (পর্ব ৫ )- ইনকাম এর হিসাব
এজেন্সি স্বপ্ন ও বাস্তবতা- পর্ব ৬ (ভুলের সূচনা)
এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৭) -বন্ধুত্বতা
এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৮ )- সম্মান আর ভালবাসা
এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৯ )– নতুন আত্মপরিচয়
এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ১০ )- স্বপ্ন ভাঙ্গার প্রহর
এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব১১ ) – বাংলাদেশি মেয়ের স্বপ্নভঙ্গ