অনেক দিন ধরেই লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু লেখা হয়নি। আপনারা যারা বিদেশ থাকা ছেলেদের খারাপ বলেন কিংবা খারাপ ধারণা আছে তাদের জন্য বলছি। আপনাদের কি কোন ধারণা আছে, আমরা যারা বাইরের দেশে লেখাপড়া কিংবা চাকরি করি, তাদের দৈনন্দিন জীবনযুদ্ধ সম্পর্কে? খুব সহজে একটা মন্তব্য করে ফেলেন। কিন্তু ভেবে নাকি না ভেবে?
আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দূরে থাকার কষ্ট সম্পর্কে কি কোন ধারণা আছে? বাইরে থেকে আসার পর টেবিলে মায়ের হাতের খাবারটা খুব সহজে পেয়ে যান। কখনও ভেবেছেন বছরের পর বছর এইটা না পাওয়া কতটা যন্ত্রণার। খুব সহজে বলে ফেলেন যে ছেলে বিদেশে থাকে, কি না কি করে ! হ্যাঁ, আমরা অনেক কিছুই করি। সকাল বেলা উঠে নিজের নাস্তা নিজে করে কাজে কিংবা ইউনিভার্সিটিতে চলে যাই। আর দিন শেষে বাসায় এসে নিজের ডিনার নিজেই বানিয়ে খাই।
প্রতিদিন এভাবেই চলে।
হ্যাঁ, আমরা খারাপ। বাসায় যখন ফোনে কথা বলি তখন নিজেদের হৃদয়টা পাথর করে কথা বলি। ফোনটা রাখার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। চোখের কোণে অনেক সময় জল চলে আসে কিন্তু তারপরও সেটা নিজেকেই বুঝতে দেই না। মাঝে মাঝে বুক ফেটে কান্না পায়, তারপরও আমরা নিজেদেরকে নিজেরাই বোঝাই। মন শক্ত করে রাখি। ভাই, আমাদেরও মন চায় মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে, বাবার বকা শুনতে কিংবা ভাইবোনদের সাথে মারামারি করতে। কিন্তু আমরা অনেক খারাপ, তাই বিদেশে পড়ে আছি।
অসুখ হলে তো বাসার সবাই আপনাদের নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেয়। আমাদের অবশ্য আর সেটা হয় না। এখানে বন্ধুরা যতটুকু পারে সময় দেয়। আর যদি কেউ একা থাকে তাহলে তো কোন কথাই নাই। বিদেশে অসুখ করলে যে নিজেকে অসহায় মনে হই সেটা আপনারা বুঝবেন না। পরিবারকে ছাড়া ৬ মাস বিদেশে কোন হাসপাতালে থাকার অনুভূতি আপনি বুঝবেন না।
বন্ধুরা খুব সহজে বলে ফেলে ” আরেহ মামা তুই তো সেই ভাল আছিস। খুব তো ঘুরা ফেরা করছিস। কত্ত টাকা কামাইতেসিশ !! সেই মজা !”
হ্যাঁ, বন্ধুরা! আমরা আসলেই অনেক ভাল আছি। বড় কম্পানিতে চাকরি করি, ভাল ইউনিভার্সিটিতে পরি। অনেক মজা করি। কিন্তু তার বিনিময়ে নিজেদের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। নিজের সব কিছু নিজেকেই করতে হয়, অসুখ করলে দেখার কেউ নাই।
শেষ কথা হল, আমরা বিদেশে কি না কি করি সেটা যদি নিজের চোখে দেখতে চান, তাহলে চলে আসুন। দেখে যান আমরা কি করি। আর একটু নিজেদের চিন্তাধারার পরিবর্তন আনুন। আর অন্তত আমাদের নিয়ে কোন মন্তব্য করার আগে একটু ভেবে করুন।
লেখা পরে যারা ইমো(!) খাবেন, আই মিন ইমোশনাল হয়ে যাবেন, তাদের জন্য বলছি আমরা অনেক ভালোই আছি আপনাদের দোয়ায়।
vai osthir hoise