বায়ার্ন মিউনিখ জার্মানির বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সফল ক্লাব! জার্মান: ‘FC Bayern München’ জার্মানির ব্যাভারিয়া প্রদেশের রাজধানী মিউনিখে অবস্থিত একটি জার্মান ক্রীড়া দল। দলটি ২টি আন্তমহাদেশীয় কাপ, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা, ১টি উয়েফা কাপ শিরোপা, ১টি উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ শিরোপা, ২০টি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, এবং ১৩টি জার্মান কাপ জিতেছে। বায়ার্ন মিউনিখ জার্মানির জনপ্রিয়তম দল। তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৩৫,০০০, যা বিশ্বে তৃতীয়। (২০১৪ পর্যন্ত, উইকিপিডিয়াতে আরো আপডেটেড তথ্য পেতে পারেন! :))
গত ২৬ বছরে ১৫ বার জিতেছে লীগ শিরোপা এবং ৪ টি ইউরোপীয় কাপ সহ তাদের দখলে রেকর্ড ২২ লিগ শিরোপা! সবগুলো ইউরোপীয় কাপ জেতা তিনটি ক্লাবের মধ্যে একটি তারা। অথচ মজার ব্যাপার হল একটি প্রভাবশালী ক্লাবের জন্য তাদের শুরুর ইতিহাস কিছুটা অদ্ভুত! তারা শুধুমাত্র ১৯৬৯ এর আগে জিতেছে মাত্র একটি খেতাব এবং এমনকি ১৯৬৩ সালে বুন্ডেসলিগা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল না তারা! শুনলে অবাক হতে হয়, ক্লাবটি একটি ব্যায়াম ক্লাব সদস্যদের দ্বারা ১৯০০ সালে গঠিত হয়। তারা ১৯৩২ সালে কোচ রিচার্ড কন (যিনি ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বি) অধীনে Eintracht Frankfurt ২-০ গোলে হারিয়ে তাদের প্রথম জার্মান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল।
হিটলারের শাসনের সময় দেশ ছাড়েন Kohn এবং ক্লাব প্রেসিডেন্ট কার্ট যিনি নিজেও ছিলেন ইহুদি ধর্মাবলম্বি। তাদের ডাকা হতে থাকে “ইহুদি এর ক্লাব” এবং তৃতীয় Reich এর সময়কালের এই প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য ক্লাবটির অনেক সময় লেগে যায়। এমনকি ১৯৫৫ সালে তারা Oberliga Sud (দক্ষিণ জার্মান শীর্ষ ক্লাব লীগ) থেকে রেলিগেটেড হয়! তারপরও ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মতো জার্মান কাপ জয়ী হয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ, কিন্তু সমস্যাসংকুল পথের শুরু যেন তখনই!
৫০ এর দশকের শেষ দিকে বায়ার্ন মোটামুটি দেউলিয়া! তাদের বিবেচনা করা হল না বুন্ডেসলিগার প্রথম সিজনের জন্যও! এমনকি DFB বেছে নিয়েছিল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দল ১৮৬০ মিউনিখকে! তবে অবশেষে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন। পরবর্তী দশক জুড়ে ক্লাব এবং জার্মান জাতীয় দলের হয়ে ইতিহাসে শক্তিশালী বলয় গঠন করেন Sepp Maier, Franz Beckenbauer, এবং Gerd Müller । সূচনা হয় বায়ার্ন মিউনিখ এর সত্যিকারের স্বর্ণযুগের।
শুরু হয় ট্রফির বন্যা! ১৯৬৬ এবং ১৯৭৬ এর মধ্যে তারা জিতে নেয় চারটি শিরোপা, চারটি জার্মান কাপ, ১৯৬৭ সালের কাপ উইনার্স কাপ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ এবং ১৯৭৪-৭৬ এর মাঝে টানা তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ। এফসি বায়ার্ন পর দশকে প্রায়শই FC Breitnigge বলা হয়েছে , যেমন Paul Breitner ও Karl-Heinz Rummenigge এর উপর তাদের নির্ভরতার জন্য। বায়ার্ন আশির দশকে ছয়টি শিরোপা এবং তিন কাপ জিতেছে , কিন্তু ইউরোপীয় সাফল্য তার অনুপস্থিতি সুস্পষ্ট ছিল।
ফুটবলপ্রেমী মানেই বোঝেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মাহাত্ম্য! ১৯৯৯ সালের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ০-১ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ইনজুরি টাইমে ২ গোল খেয়ে হেরে বসে তারা। অবশেষে স্প্যানিশ ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া কে প্যানাল্টি শুট আউটে হারিয়ে ২০০১ সালে তারা জিতে নেয় প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। ওই ম্যাচটি ছিল এমনই নার্ভ ব্রেকিং যে অনেকের মতে তা শ্রেষ্ঠ ফাইনাল গুলোর একটি! দেখে নিতে পারেন এই লিঙ্কে ক্লিক করেঃ
বায়ার্ন ফেলিক্স মাগাথ এর অধীনে ২০০৫-০৬ এ পরপর দুবার ডাবলস শিরোপা জিতে নেয়! সেই সুবাদে, ২০০৫ সালে তারা পায় তাদের বিখ্যাত মাঠ Allianz Arena।
এক লাফে বর্তমানে চলে আসা যাক। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, বায়ার্ন মিউনিখ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে ২০১৩–১৪ মৌসুমে গার্দিওলা ক্লাবের দায়িত্ব গ্রহন করবেন। পেপ গার্দিওলার ব্যাপারে কিছুটা না বললেই নয়। বিশেষ করে ম্যানেজার হিসেবে বার্সেলোনাকে তিনি এনে দিয়েছিলেন আকাশচুম্বী সফলতা! ম্যানেজার হিসেবে তার প্রথম মৌসুমে (২০০৮–০৯) বার্সা ট্রেবল জয় করে। তারা কোপা দেল রে, লা লিগা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জেতে। এতে করে, চ্যম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসে কনিষ্ঠতম ম্যানেজার হিসেবে এই শিরোপা জেতার কৃতিত্ব গড়েন গার্দিওলা। পরের মৌসুমে গার্দিওলা এবং বার্সেলোনা স্পেনীয় সুপার কোপা, ইউরোপীয়ান সুপার কাপ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতে। এতে করে, এক পঞ্জিকাবর্ষে সাম্ভব্য ছয়টি শিরোপার সবগুলোই জেতে বার্সা ও গার্দিওলা।
এই আর্টিকেলে বায়ার্নের ইতিহাস নিয়ে এত প্যাঁচাল পাড়ার একটাই লক্ষ্য ছিল। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে তাদের পথ পরিক্রমা কতটুকু কঠিন ছিল। কিন্তু তারা সব সময়ই এগুলো পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে যার মূলে ছিল প্রবল ইচ্ছাশক্তি, পরিকল্পনা, হার না মানার জার্মান মানসিকতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটা সৎ প্রচেষ্টা! এইতো, অনেক ধন্যবাদ সবাইকে!
(ছবি সংগৃহীত)
লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছেঃ জার্মান প্রবাসে – জানুয়ারী সংখ্যা