২০১২ সালে হুমায়ুন স্যার যখন কর্কট রোগের সাথে নিউইয়র্কেযুদ্ধ করে চলেছেন, সেই নিদানের কালেও তিনি লিখতেন প্রথম আলোয়। প্রথম আলোয় সাপ্তাহিক সেই লেখার শিরোনাম থাকত নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ। আমি তাঁকে নকল করে আমার লেখা শুরু করলাম।

গুনে গুনে আজ একশ পাঁচদিন হতে চলল ঘরে থাকার। নিঃসন্দেহে এটি সবার জন্যেই একটি ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতা। বুঝমান হওয়ার পর হতে টানা এতদিন ঘরে বসে থাকার অভিনব এই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আমাদের অনেকেরই কখনো হয়নি। প্রকৃত অর্থে আমরা প্রবাসীদের একরকম সঙ্গহীনই থাকতে হয়। করোনার কারণে সেটি আরেকটু ব্যাপ্তীলাভ করেছে।

বছরের এই সময়টাতে স্প্রী নদীর ধারে জার্মানির রাজধানী বার্লিন থাকে রোদে ঝলমল। গ্রীষ্মের শুরু হয়ে গেছে। এখানে রোদ মানে সেদিন ঈদ। পুরো শহরটি উৎসবে মুখর হয়ে উঠে। নদীর ধারে নির্মল পরিবেশে কনসার্ট, থিয়েটার, অপেরা, পথসঙ্গীতের পাশাপাশি বিভিন্ন মেলা, পানশালায় আড্ডা এসব যেন এক পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠে। নানা বয়েসী নারী পুরুষ কপোত কপোতীর মতো প্রেম করে, চুমো খায়, জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। কারো বলার কিছু নেই, হইচই আছে, হাঙ্গামা নেই। দিনের দৈর্ঘ্যও বেশ বড়, রাত প্রায় দশটা তবু আকাশে সুর্য্য, না তীব্র গরম, না শীত, তাই মানুষেরও আনন্দ প্রকাশেরও কোন সীমা থাকে না। করোনা এই মধুর সময়কে কেড়ে নিয়েছে। বার্লিনের আকাশে ঝকঝকে রোদ ঠিকই, কিন্তু রাজপথ এতদিন নিস্তব্ধই ছিল। লকডাউন শিথিল করার সাথে সাথে বার্লিনের প্রকৃতি পরিবেশ ধীরে ধীরে পুরনো চেহারায় ফিরছে। দল ধরে মানুষ ময়দানে ময়দানে খেলছে, পার্টি করছে, গাইছে নৃত্যগীতে মেতে উঠেছে। তবে অবশ্যই সব হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই। কড়াকড়ির কারণেই যেন মনে হয় কিছুটা প্রাণহীন, কোথায় যেন খানিকটা ঘাটতি। ইদাইং বার্লিনে এখানে সেখানে ছোট খাট মেলাও শুরু হয়েছে। 

জুন-জুলাই বার্লিনের জন্য বিশেষভাবে অন্যরকম। অপরূপ প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে এ শহরের মানুষ মেতে উঠে নানা উৎসবে। এসময়ে দুটি বিশাল আয়োজন পৃথিবীর নজর কাড়ে। কার্নিভাল আর বার্লিন প্রাইড। দুটি আয়োজনেই বাহারি পোশাকে সেজে আবালবৃদ্ধবনিতা নেমে যায় রাজপথে, বুনো আনন্দে চারিদিক মাতিয়ে তোলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে মানুষ এসে এতে যোগ দেয়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। প্রায় দুই দশক ধরে কার্নিভালে বাংলাদেশ অংশ নেয়। বাংলাদেশি কুলটুরাল ফোরামের আয়োজনে গত বছর আমি নিজে অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের হয়ে নৃত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। এবার এসবের কিছুই হল না, পৃথিবী সেরে উঠলে নিশ্চয়ই হবে। সেদিনের আশা আছি। 

এই সেই ব্রাজিলীয় টাইগটাশেন


অনলাইনে দেখলাম এক জায়গায় কোরিয়ান খাবারের উৎসব হচ্ছে। ভিয়েতনামিজ, কোরিয়ান ওদের খাবারের ভক্ত আমি বহুদিনের। কিন্তু ওদের খাবার মানেই প্রচুর কার্ব, তবু মাঝে মাঝে খাওয়া হয়। তাই খাবারের উৎসব দেখে চলে গেলাম বার্লিনের বন্ধু দম্পতি সুমন ভাই আর বুবলি আপুকে নিয়ে। দেখলাম খুব একটা ভিড় নেই, প্রতিটা স্টল যথাযথ দূরত্ব রেখে বসানো হয়েছে। যদিও নাম দেয়া হয়েছে কোরিয়ান খাবারের উৎসব কিন্তু সেখানে মেক্সিকো, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশও আছে। আমরা ঘুরে ঘুরে জার্মান কোরিয়ান আর ব্রাজিলের স্টল থেকে এটা সেটা কিনে খেলাম। ব্রাজিলের খাবার দেখতে যতখানি সুস্বাদু ছিল খেয়ে ততটাই বিরক্ত, পুরোটা আমরা শেষও করিনি। ওই অখাদ্যের নাম ছিল টাইগটাশেন (Teigtaschen)। অপরদিকে কোরিয়ান খাবারটা বেশ মসলাদার ছিল, খেয়ে ভাল লেগেছে।


১৪ আষাঢ় ১৪২৭
ধন্যবাদান্তে
জাহিদ কবীর হিমন
জার্মানীর বার্লিন থেকে

mm

By Jahid Kabir Himon

এডিটর (Editor): জার্মান প্রবাসে মাস্টার্স in Internet Technologies And Information Systems Leibniz University Hannover বর্তমানে বার্লিনের একটি কোম্পানিতে রোবটিক্স প্রোসেস অটোমেশনে (RPA) কাজ করছি

Leave a Reply