আজকের লেখাটি যেদিনের ঘটনাসমূহ নিয়ে সেই দিনের আবহাওয়ার সাথে শিরোনামের মিল খুঁজতে গেলে লেখককে প্রতারক মনে হতে পারে। ভাদ্র মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই যদিও বেশ কিছু দিন আকাশ ভরা রোদ আর জমিনভরা উষ্ণতা তবু শুরুতেই বলি, বার্লিনের নীলাকাশে ওদিন কস্মিনকালেও ঝকঝকে রোদ ছিল না। গুমোট মেঘ থাকলেও গেল শনিবার বেশ গরমই ছিল, সাথে উড়ো বাতাস থাকায় দিনটা উপভোগ্যও ছিল। বলছি বার্লিন-ড্রেসডেনের মাঝে ক্রিকেট খেলা নিয়ে। বার্লিনের ঐতিহাসিক টেম্পেলহফের মাঠে গত শনিবারের খেলায় ড্রেসডেনকে হারিয়ে বার্লিন জয়লাভ করে।
টেম্পেলহফ বার্লিনের এক অতি ঐতিহাসিক মাঠ যা গ্রেট ফিল্ড নামেও পরিচিত। প্রায় বারো হাজার বছর আগে মানবজাতি কৃষিকর্ম শুরু করার পর হতে অষ্টাদশ শতাব্দী অব্দি বার্লিনের মানুষ এই মাঠে কৃষিকাজ করতো। প্রুশিয়ান রাজা ফ্রেডেরিক উইলিয়াম ১ এর আমলে ১৭২২ সাল হতে এই মাঠ ব্যবহৃত হতে থাকে সেনাদের প্যারেড হিসেবে। ১৯২৩ সালে এটি রূপান্তরিত হয় বিমানবন্দরে যা ২০০৮ সাল থেকে বন্ধ। এখন এই সুবিশাল মাঠে মানুষ আসে বৈকালিক ভ্রমণে, স্কেটিং করতে, ঘুড়ি উড়াতে, সাইকেল চালাতে, দল ধরে আড্ডা দিতে। করোনাকালীন সময়ে ওখানে ঈদের নামাজও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানিদের ক্রিকেট খেলার বর্তমান পীঠস্থান এই মাঠ। বার্লিনে কেউ বেড়াতে আসলে এই মাঠ দেখা হয়ই। এই মাঠেই শনিবার হয়ে গেল বার্লিন আর ড্রেসডেনের মাঝে ক্রিকেট খেলা।
দেশের মাটিতে তো নির্ঘাত, বিদেশের মাটিতেও বাঙ্গালি কিছু আয়োজন করবে, আর তা নিয়ে দু’কথা হবে না, মানাভিমান হবে না, ক্ষেত্রবিশেষে দু’চারজনের মাথা ফাটবে না- সে এক অকল্পনীয় ব্যাপার। বাঙ্গালিরা বিদেশে আসলে কি করে তা নিয়ে বেশ আগে একটা লেখা লিখেছিলাম এখানে পড়তে পারেনঃ “জার্মানিতে বাংলাদেশি কমিউনিটি- বিভাজনের খেলা“
আমি দর্শক হিসেবে সেখানে গেলাম খেলা দেখতে। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা যা আমি বুঝি না, ক্রিকেট তার মাঝে উপরের সারিতে। তাই আমি ওদের খেলার এদিক-ওদিক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাঠককুলের কাছে হাসির পাত্র হতে চাই না, তাঁদের বিরক্তির উদ্রেক করতে চাই না। তবে আমি যা লক্ষ করলাম তা দুটি দলের মাঝে অতি অনিন্দ্যসুন্দর সুসম্পর্ক। একটিও উত্তেজনামূলক ঘটনা না ঘটিয়ে খুবই সুন্দরভাবে খেলাটি শেষ হোল। একে অপরের প্রতি যে সম্মান, সিনিয়রদের প্রতি যে মর্যাদা, বিপক্ষের প্রতি যে কোমল ব্যবহার তা দেখে মুগ্ধ হলাম।
খেলা শেষ হওয়ার মুহুর্তেই বেরসিক বৃষ্টি। অথচ এ হওয়ার কথা ছিল না। কি থেকে কি হয়ে গেল, চোখের পলকে সবাই শেয়াল ভেজা ভিজে চুপসে গেলাম। মাঠ এতই বিশাল যে আশেপাশে যাওয়ার পথ নাই। ছোট ছোট গাছের তলে গিয়ে দাঁড়িয়ে খড়কুটো ধরে যেন বাঁচতে চাইলাম। লাভ হল না মোটেই। বেশ খানিকটা পরে বৃষ্টিদেবতার দয়া হল, আকাশ পরিষ্কার হল।
ড্রেসডেন হতে যারা কষ্ট করে এসেছিল, খেলা শেষে বার্লিন দলের পক্ষ হতে একটি রেস্টুরেন্টে তাঁদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। মেডেল আর ট্রফি প্রদান শেষে, খাওয়া পর্ব সেরে যার যার মতো সবাই বাড়ি চলে গেল এই ঐকমত্য করে যে আগামীতে বার্লিনবাসী ড্রেসেডেনে যাবে খেলতে। ড্রেসেডেনবাসী সেবার জেতার প্রতিজ্ঞা করে ওদের শহরের ট্রেন ধরলো। এভাবে সমাপ্তি ঘটলো একটি সুন্দর দিনের।
ধন্যবাদান্তে
জাহিদ কবীর হিমন
বার্লিন থেকে
সম্পাদক, জার্মান প্রবাসে, ০৮ ভাদ্র ১৪২৭
আরো পড়ুন
বার্লিনের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ ১- কোরিয়ান খাবার-উৎসব
বার্লিনের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ ২- মধুরেণ সমাপয়েৎ