বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
আসসালামুয়ালাইকুম।সাহস করে আসলাম জব এপ্লিকেশন- সিভি নিয়ে লিখতে। আমার এই লেখাটি আমার ভার্সিটি এলাম্নাই এ্যাসোসিয়েশনের জন্য লিখেছিলাম, পরে ভাবলাম germanprobashe শেয়ার করলে অন্যরাও উপকৃত হতে পারবে। মানুষ মাত্রই ভুল, তার উপর আপনাদের অনেকেরই ছোট, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখবেন। আমি বিশ্বাস করি, নলেজ শেয়ার করলে কমে না, আল্লাহ্ যার রিজিকে যা বরাদ্ধ রেখেছে তাই হবে।
গত কয়েকদিনে অনেকের সাথে তাদের জব এপ্লিকেশন সমস্যা নিয়ে আলাপ হল। চেষ্টা করেছি যথাসাধ্য সাহায্য করতে। বেশীরভাগ ভাইয়া আপুই প্রথমে একটি স্মার্ট সিভির ফরম্যাট চায়। স্মার্ট সিভি আর কভার লেটার বলতে আমরা কি বুঝি ? আমি বুঝি, যে এপ্লিকেশনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চাওয়া সকল কোয়ালিফিকেশনের উত্তর থাকে। তার মানে প্রতিটা সিভিই আলাদা হওয়া উচিৎ বিজ্ঞপন অনুযায়ী।
উপরের বিজ্ঞপ্তিতে জব রেস্পন্সবিলিটির লম্বা একটা লিস্ট দেওয়া আছে, এই জবের জন্য এপ্ললাই করতে হলে আপনার সিভির পয়েন্ট গুলো তে এবং কভার লেটারে আপনাকে উল্লেখ করতে হবে যে আপনি এগুলা করতে সক্ষম, আর তখনই আপনি আপনার ঐ সিভিকে স্মার্ট সিভি এপ্লিকেশন বলবেন।
ভাবতেছেন ছেলে সুযোগ পেয়ে লেকচার মারতেছে। আগেই বলসিলাম, আমার লেখা গুলো আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। নিচের ছবিটা আমার জব এপ্লিকেশনগুলোর এর একটা ফোল্ডার মাত্র। প্রতিটা জব বিজ্ঞপ্তির জন্য আমি আলাদা সিভি, এপ্লিকেশন আর পোর্টফলিও ব্যাবহার করতাম। এমনকি সেম কোম্পানির ভিবিন্ন পজিশনের জন্য ভিবিন্ন ফোল্ডার। ( আমি বলছি না এভাবে এপ্লাই করে আমি বড় কিছু করতে পারছি, কিন্তু আমার কাছে এটাকে গ্রহণ যোগ্য উপায় মনে হয়েছে)
আল রাউন্ডার – সাকিব আল হাসানের আঁচর
একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের মেইন কাজ গ্রাফিক ডিজাইন করা, তার সাথে তার প্রিন্ট নলেজ থাকা হাই প্রাইওরিটি । ফেব্রিক নলেজ থাকা মিডিয়াম প্রাইওরিটি আর ফেব্রিক নিটিং নলেজ থাকা লো প্রাইওরিটি, মানে জানলে ভালো, না জানলেও ক্ষতি নাই। প্রতিটি এপ্লিকেশনের আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোনগুলা আপনার জন্য প্রাইওরিটি। কোনগুলা রাখবেন কোনগুলা ছাড়বেন। আমরা প্রাই বলি এক পেজের সিভি ভালো, এক পেজের সিভি করতে দিলে করতে পারি না, কারন আমরা সবাই সাকিব আল হাসান হতে চাই। বোলিং ফিল্ডিং সবকিছুতে ভালো হওয়া খারাপ না, কিন্তু স্মার্ট ওয়ে তে সেটা প্রেজেন্ট করতে হবে। জব রেস্পন্সিসিবিলিটির দিকে তাকান, ওরা কি চায়, আর আপনি কি উত্তর দিচ্ছেন?
চাক্রীদাতা বলল আপনি সাইকেল চালাইতে পারেন? আপনি বললেন আমি সাইকেল, ট্রাক, উড়োজাহাজ সব চালাইতে পারি, ধান ক্ষেতে মই ও দিতে পারি। অপ্রাসঙ্গিক এপ্লিকেশন আপনার বুঝার অক্ষমতা প্রকাশ করে। এখন অনেকই বলবেন, ভাই আমি তো নিজে আসলেই অল্রাউন্ডার, অথবা আমার তো একটা জব লাগবেই। অথবা যেটা তে আমি ভালো, ঐটাতে জব এর অফার কম। এক্ষেত্রে আমি, আমার পসিবল স্ট্রেংথ গুলা কে কেটাগোরাইজড করি।
যেমন ধরুন গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন জানা মেইন কুয়ালিটি, আবার প্রোডাক্ট ডেভেলপারের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন জানা অক্সিলারি কুয়ালিটি। অন্য দিকে প্রোডাক্ট ডেভেলপারের জন্য ফেব্রিক , সেমপ্লিং জানা মেইন কুয়ালিটি কিন্তু গ্রাফিক ডিজাইনারের জন্য অক্সিলারি। পড়াশুনার হিসাবে আমি টেক্সটাইল সেক্টরের ৩ টা সেকশনে কাজ করতে পারবো, ফ্যাশন ডিজাইনার, গ্রাফিক ডিজাইনার আর প্রোডাক্ট ডেভেলপার। সেই হিসাবে আমি ৩ ধরনের জব এপ্লিকেশন রেডি করে রাখি। বিশ্বাস না হলে নিচের ছবি দেখুন।
প্রতিটাতে জব পোস্ট অনুসারে ইনফরমেশন দেওয়া। এই ইনফরমেশন ও আপডেট হয়, জব রেস্পন্সিবিলিটির উপর। কি বুঝলেন? সব কিছু এক পাত্রে না ডেলে, যেখানে যা দরকার তাই ডাল্বেন।
স্বীকারোক্তি – আমি যাই লিখি, নিজের স্বল্প নলেজ থেকে, নিজের বুদ্ধিমত্তায় লিখি, যে কারনে অনেক ভুল, বেঠিক ইনফরমেশন থাকতে পারে, দয়া করে আপানদের মাথা খাটিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ রইলো। ভুলগুলো কমেন্টে তুলে ধরলে খুবই খুশি হবো, আমারও আপনাদের কাছ থেকে জানতে মন চায়, না বল্লে ভুল গুলো ঠিক করা হবে না।
নিজের ওজন সম্মেন্ধে সচেতেন থাকা
নাই ভাই, আমি মোটা মানুষ বলে ওজন নিয়ে বুদ্ধি দিতে আসি নাই। জব এপ্লিকেশনে আমরা নিজের ওয়েট না বুঝে কুয়ালিফিকেশন উল্লেখ করি। আপনি এপ্লাই করেছেন এসিস্টেন্ট মারছেন্ডাইজার এর পোস্টে, কিন্তু সিভিতে এক্সপারটিজ দিয়েছেন মারচেন্ডাইজ ম্যানেজারের। ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেলো না? একটা সময় আমরা সবাই মনে করতাম, এই রকম লিখলে আমাদের না নিয়ে যাবে কোথায়? আবার ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা কম থাকায়, অন্যদের সিভি কপি পেস্ট করার কারনে এই বিষয় গুলা থেকে যায়। নিচের বাক্য ২ টির দিকে খেয়াল করলে পার্থক্য বুঝা যাবে, কিভাবে ভুল ইংরেজি শব্ধ বাক্যের ভাব বদলায় দেয়।
1. Handling all aspect of collection building from brain storming, trend analysis, color forecast to final sampling.
2. Assist in collection building from brain storming, trend analysis, color forecast to final sampling.
এক নাম্বার বাক্যটি পড়লে মনে হয়, একজন ডিজাইন ম্যানেজার অথবা সিনিয়র ফ্যাশন ডিজাইনার এর কুয়ালিটি, কিন্তু আমরা অনেকই এন্ট্রি লেভেল জবের জন্য সেম বাক্য ব্যাবহার করি, যেখানে দ্বিতীয় বাক্যটি আমাদের ব্যাবহার করা উচিৎ। এখন অনেকেই বলবে ভাই , আমার ছোট ফ্যাক্টরিতে আমি একাই রাজা, মানে একাই সব কিছু করেছি। কথা কিন্তু সত্য। স্ট্যান্ডার্ড পলিসি না থাকয় সাপ্লায়ার ডিজাইনাররা অনেক কিছুই করে। এটা খারাপ না বরং আপনি অনেক শিখতেছেন, তবে এই লাগাম টা টেনে কন্ট্রোলে রাখাটাও শিখেন।আমি অনেকের জব এপ্লিকেশন দেখেছি, পড়ে মনে হল উনাকে তো ডিরেক্ট ডিরেক্টর বানায়া দেওয়া যাবে।
কিন্তু আবার বাস্তবে অনেককেই দেখেছি ওভার কুয়ালিফিকেশনের জন্য বাদ পড়ে যেতে। এমন কি আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। ফকির এপারেলসে আমি ট্রেইনী হিসাবে জয়েন করে ২ বছর পর যখন জব ছাড়ি, তখন ডিজাইন টিম লিডার ছিলাম। নিজের কুয়ালিটির ব্যাপারে আমার আত্মবিশ্বাস আছে, কিন্তু জার্মানিতে আসার পর যখন এন্ট্রি লেভেল জব গুলার জন্য এপ্লাই করতে থাকলাম, তখন নিজের এই ওভার কুয়ালিফিকেশন হাইড করে দিলাম।
আমি জানতাম, কোন ডিজাইনারই চাইবেনা তার চেয়ে পণ্ডিত কেউ তার সাথে জয়েন করুক। একজন এসিস্ট্যান্ট মারচেন্ডাইজারের এপ্লিকেশন পড়ে যদি তার সিনিয়র মনে করে এই ছেলে তো অতি পাকনা, আমার চেয়ে বেশী তার কুয়ালিফিকেশন, তাহলে তার নিয়োগের ব্যাপার টা কঠিন হয়ে যায়। তবে তাই বলে আমি বলছিনা আপনি আপনার গুণাবলি লুকিয়ে রাখেন, বরং বলছি এমন ভাবে লিখেন যেন সেটা অস্বাভাবিক মনে না হয়। Assist in, Have sound knowledge in, Proficient in এই জাতীয় বাক্যদিয়ে শুরু করুন। মনে রাখবেন, এন্ট্রি এবং মিড লেবেলের জব গুলোতে আপনার কাছ থেকে কোম্পানি চায় শেখার আগ্রহ, কঠোর পরিশ্রম, আনুগত্য, কেউই চায় না একজন এসিস্টেন্ট এসে পুরো বিজনেস হ্যান্ডল করুক, বরং এসব ক্ষেত্রে বেশী জানা শমসের হলে টীমে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। ( ক্ষেত্র বিশেষে অবশ্যই আলাদা।
“Seeking a challenging position that offers professional growth.” – কে জাতীয় সঙ্গীত বানিয়ে ফেলা।
ইন্টারন্যাশনালি জব এপ্লিকেশনে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ ব্যাপারটা কভার লেটার দ্বারা রিপ্লেস হয়ে গেছে, এটলিস্ট আমি তাই করি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় সবাই এটা ব্যাবহার করে, তাই আমি ব্যাবহার করতে ” না” বলবো না। এটা আপনার বিবেচনা, তবে যদি করেনই , চেষ্টা করবেন, সিম্পল বাক্যে নিজের মতো করে ১/২ লাইন লিখতে। কপি করে দিবেন না, প্লিজ।নিজের মতো করে লিখতে বলায় যারা ডোক গিলে ফেলেছেন তাদের জন্য নিচে একটা মন্ত্র লিখে দিলাম-
CV Career objective example – এই লাইন টা কপি করে ফেসবুকের পাশের ট্যাবে পেস্ট করে এন্টার করেন। ৫/৬ নমুনা দেখেন, নোট করেন, এর পর নিজের মতো করে লিখেন। আইডিয়া নিয়ে লিখলে গুনাহ হয় না, আমরা সবাই আইডিয়া নিয়ে লিখি।
ছবি দিবো কি দিবো না? বাঁকা না সোজা? ফর্মাল না ইনফরমাল?
আপনি যদি মার্ক জুকারবারগ হন, ছবি না দিলেও চলবে, মানুষ আপনাকে চিনে। আর যদি আমার মতো আমজনতা হন, তাহলে ছবি দিতে হবে। এখন কথা হল, কেমন ছবি দিবেন। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর নাই। কারণ আপনার ছবি দেখে আপনাকে মূল্যায়ন যিনি করবেন, এটা তার উপরও নির্ভর করে। এক্ষেত্রে আমি একটা উপায়ে কাজ করি। আমি তিন প্রকার ছবি রেডি করে রাখি।
১। ফর্মাল পাসপোর্ট ছবি (বাংলাদেশে ইউজ করছিলাম)
২।ক্যাজুএল ইনফরমাল ড্রেস ছবি (বেশীরভাগ এটা ইউজ করি, ডিজাইনার হিসাবে নিজের পোশাক আমার পারসোনালিটি প্রকাশ করে, সেই সুযোগ টা কাজে লাগাই)
৩।ক্যাজুএল ফর্মাল ড্রেস ছবি (কিছু পোস্ট আছে যেগুলাতে নিজের ফর্মাল ড্রেস একটা সিরিয়াস্নেস প্রকাশ করে, মারছেন্ডাইজার, বায়ার, বিজনেস রিলেটেড লোকদের জন্য এটা পারফেক্ট।)
২ নাম্বারে ক্যাজুএল এবং ইনফরমাল ছবি টাইপ ছবিই এখন সবাই ব্যাবহার করে। কারণ এটাতেই আপনাকে ন্যাচারল ভাবে বুঝা যায়। আমি আমার ফ্রেন্ড কে দিয়ে এই ছবি তুলাইছিলাম, জ্যাকেটটাও ধার করা ছিলো (জাকারিয়া আরিফ ভাইয়ের, উনি এখন টমটেইলরের হেড অফিসে টেকনোলজিস্ট হিসাবে আছেন, ভাইয়ের জন্য ভালোবাসা।)।
তারমানে আপনাকে হাজার টাকা দিয়ে ফটোগ্রাফার খুঁজে বের করতে হবে না, অথবা বিশাল প্রিপারেশন নিতে হবে না। সুন্দর একটা মুচকি হাসি দিয়ে এঙ্গেলে তুলে নিবেন।
যাই হক, এবার আসি ১ নাম্বার পাসপোর্ট ফটোর ব্যাপারে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ফ্যাক্টরির বেশীর ভাগ এইচ আর আধুনিক না, তাদের কাছে একটা ইনফরমাল পোজ মানে, এই ছেলে তো সিরিয়াস না, ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার দিলো নাকি, চাকরীর জন্য। আবার অনেকে আধুনিক হলেও কোট সুট ( নো টাই প্লিজ) পড়া ছবি ওয়ালা কে বেশী প্রফেশনাল মনে করে। সমস্যা হইছে আপনার আমার একটা চাকরী দরকার, তাই তাদের এই মনে করাটা ইম্পরট্যান্ট। তাই এপ্লিকেশন জমা দেওয়ার আগে খোঁজ নিয়েন, কে সেটা পড়বে ( যদিও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভব না জানি। ) এখন আমাকে ফ্যাক্টরিতে এপ্লাই করতে বল্লে আমি কোট পড়া ছবিটা ব্যাবহার করবো (৩ নাম্বার) । কিন্তু যদি কোন লিয়াজু অফিস, সোরসিং অফিস, বায়িং হাউজে এপ্ললাই করতে বলে, তাহলে আবার ২ নাম্বার ছবি টা ব্যাবহার করবো। ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি গুলাতে এপ্লাই করতে গেলে, আমি আরেক দফা কৌশল নেই ।যেমন স্পোর্টস কোম্পানি এডিডাসের জব এপ্লিকেশনে আমি নিচের ছবিটি দিয়েছিলাম, বুঝানোর জন্য যে আমি স্পোর্টস লাইক করি আর যেহেতু তাদের পোশাক পরি, তাই প্রোডাক্ট এর ব্যাপারেও আমার আইডিয়া আছে। এই এপ্লিকেশনের ভাইভা তে আমাকে আস্ক ও করছিলো, তুমি তো এডিডাস পড়ো, কোন ডিভিশন তুমার ভালো লাগে?
এখন আমি যদি Levi’s এর জন্য এপ্লাই করি, তাহলে ওদের ট্রাকার জ্যাকেট পড়া ছবি দিবো। ছোট খাটো ট্রিক করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করি। আপনি যখন কোন ফ্যাক্টরিতে এপ্লাই করবেন, ছবি ওদের টাইপে প্রোডাক্ট পড়ে না দেন, ভাইভা তে যাওয়ার সময় ঐ টাইপ প্রোডাক্ট পড়ে যেতে পারেন। একটু হলেও অন্যদের চেয়ে আগাই রাখবে।
সিভির ফরম্যাট, প্রফেশনাল বনাম আনপ্রফেশনালআমার মতে দুনীয়ার কোন জব এপ্লিকেশনই আনপ্রফেশনাল না, হয় সঠিক না হয় বেঠিক। আর এই সঠিক বেঠিক ব্যাপারগুলা কিন্তু অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। এখানে আমি আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে একটি সঠিক ফরম্যাট এর আইডিয়া দেওয়ার চেষ্টা করবো।
সিভি আসলে একটা দরখাস্ত আর প্রস্তাবনা, সেটা আমরা চাকরী দাতা কে দিয়ে বুজানোর চেষ্টা করি, তার কাজের জন্য আমাকে সে নিয়োগ দিতে পারে। এখন এই বুঝানোর উপায় টা কেমন? মাথা থেকে এতদিন যত সিভি দেখেছেন, লিখেছেন, তা দূর করে, নতুন করে ভাবুন। কিভাবে শুরু করা যায়?
একজন চাক্রিদাতার অবস্থায় নিজেকে বসান। কি জানতে মন চায় আপনার?
আচ্ছা এই এপ্লিকেন্ট এর অভিজ্ঞতা আছে ?
– হুম, অমুক কোম্পানিতে কাজ করছিলো, কি কি শিখসিলো (১.১)
আমার এখানে যেগুলা লাগবে, তার কিছু জানা আছে তার? ( ১.২) ( উপরে আলোচনা করছিলাম )
তার পড়াশুনার ব্যাকগ্রাউন্ড কি? (২)
– আচ্ছা মাস্টার্স করছে এই সাবজেক্টে। (২.১)
-অনার্স করছে, এই সাবজেক্টে। (২.২)
আর কি পারে ? কম্পিউটার সফটওয়্যার ? (৩)
– আচ্ছা এক্সেল, আর ফটোশপ পারে। (৩.১)
নরমালি উপরের এই ইনফরমেশন গুলাই আপনার প্রাইমেরি সিলেকশন এর জন্য যথেষ্ট। এখন অনেকেই বলবে ভাই, তাহলে, অরগানাইজেশনাল স্কিল, হবি, বয়স, ভাষা, ট্রেইনিং, এগুলা কেন দেই। এগুলা দেই কারণ, সেম পজিশনে আপনার মতো আরও অনেকে দরখাস্ত করবে, অল্মস্ট সেম কুয়ালিটি নিয়ে।ফাইনাল সিলেকশনে যখন নিয়োগকর্তার হাতে মাত্র ৫ টা সিভি থাকবে, বেচারা তখন ছোট খাটো ইনফো ধরে স্কোর করার চেষ্টা করবে।
আসুন এবার ভাবি, কোন অক্সিলারি ইনফরমেশন গুলা আপনাকে তার বুঝতে সহায়তা করবে।
– ভাষা (৪) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইংরেজিতে ভালো হলে বাকী চারজনের চেয়ে আপনি আগায় যাবেন।
– ট্রেনিং (৫) লিখার জন্য ৫/৬ টা হাবিজাবি ট্রেনিং ডুকাই নাম্বার পাওয়ার চেষ্টা না করে, রিলেভেন্ট দুইটা ট্রেনিং এর কথা উল্লেখ করে আপনি আগায় যেতে পারেন।
– অরগানাইজেশনাল স্কিল,(৬) ভার্সিটিতে ক্লাব করছেন, বা এলাকাতে স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন এই ইনফরমেশন দেওয়ার আগে রিলেভেন্সি ব্যাপারটা চ্যাক করবেন। আসলেই কি এটা স্কিল ছিলো ?
– এওয়ার্ড এন্ড অ্যাঁচিভম্যেন্ট ( ৭) যদি থাকে, লেম কিছু দিয়ে নিজের ওজন কমানোর দরকার নাই।
– ডেট অফ বার্থ আর এড্রেস (৮) উল্লেখ করবেন।
উপরের আলোচনা থেকে কিন্তু আমরা সিভির একটা ফরম্যাট পেয়ে যাই। ১ থেকে ৩ হোল মুল তথ্য। এগুলা দিতেই হবে। ৪ থেকে ৮ কিভাবে দিবেন এটা সিভির লেন্থ এর ব্যাপার চলে আসে। অনেকে বলে এক পেজে সিভি করো, অন্যরা বলে যথাসম্ভব ইনফরমেশন পারো দ্যাও । ভীব্রান্ত হওয়ার কিছু নাই, ব্যাপার টা ঠিক করা কিন্তু ইজি। আপনাকে এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে, আপনার ১ থেকে ৩ কতটুকু শক্তিশালী? ধরুন আমাদের ফার্স্ট ব্যাচের বেলাল ভাই ( বর্তমানে একটা একটা কোম্পানির সি ই ও,) উনার সিভিতে শুধু, তথ্য ১ এবং ২ দিলেই হবে। অনেক সময় শুধু উনাদের ভিজিটিং কার্ডই সিভির কাজ করে। অন্যদিকে ছোটখাটো মানুষ আমি, আমাকে ১,২,৩, এর সাথে আরও কিছু মালমসলা দিতে হবে।
আমার চেয়ে জুনিয়র, যার কোন কাজের অভিজ্ঞতা নাই, সে কি করবে? সে তখন সিরিয়াল ৮ পর্যন্ত দিবে, আরও কিছু থাকলে আরও কিছু এড করবে। সিভির উদ্দেশ্য কি ? নিয়োগকর্তা কে রাজি করানো, সেই রাজি করানোর জন্য কোন স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট (মন্ত্র) নাই , এটা আপনার উপর এবং তার উপর নির্ভর করে। তবে অবশ্যই উপরের ইনফরমেশন গুলো ইনক্লুড করা উচিৎ। তাহলে যা বুঝা গেলো, ফ্রেশারদের সিভি ২ পেজ হতেই পারে, অন্যদিকে একজন মারচেন্ডাইজার পজিশনে এপ্লাই করা লোক, যিনি অলরেডি ৪ জায়াগায় জবের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলেছেন, ১,২,৩ এর সাথে বেসিক কিছু ইনফরমেশন দিয়েই নিয়োগকর্তাকে রাজি করিয়ে ফেলতে পারবেন।
চলুন পোস্টমর্টেম করি। নিচের সিভিটা আমার অনার্স শেষ করার পর প্রথম সিভি, ২০১৪ এর ডিসেম্বারে বানাই। (এখন এটা দেখলে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে, অন্যরা লজ্জা দিয়েন না) । ফ্রেশার হিসাবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টার কোন ত্রুটি করি নাই। যদিও ঐ সময় বুঝার ক্ষমতা কম ছিলো, তারপরেও এই সিভি দিয়ে সব জায়গা থেকে ডাক পেয়েছিলাম। ( এখন এটা কেউ কপি করবেন না, আশাকরি এই আলোচনা থেকে আপনি আরও ভালো কিছু করার আইডিয়া পেয়ে গেছেন)
টোটাল ১৩ তা পয়েন্ট দিয়ে নিয়োগকর্তাকে রাজি করাইতে ট্রাই করছিলাম আর কি। :p
৫ বছর পুরাতন সিভি তো দেখলেন, আসুন এবার দুই বছর পুরাতন সিভি দেখি
(কুকিং বানান ভুল আছে, পরে ঠিক করসিলাম)
মাত্র ৩ টা ব্যাসিক পয়েন্টের এই সিভি দিয়ে আমি ইন্টারন্যাশনাল জব মার্কেটে ভালোই সাড়া পেয়েছিলাম, যতটুকু মনে পড়ে, C&A তে আমি এই সিভি দিয়ে এপ্লাই করসিলাম, তাছাড়াও এডিডাসেও এটা দিয়ে সিলেক্ট হইছিলাম।
এই সিরিজ লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু কোন সলিড থিউরি প্রেজেন্ট করা না, বরং নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে বাকীদের সাহায্য করা। কেউ ই জন্ম থেকে ওস্তাদ হয়ে আসে না, চেষ্টা করতে করতে সবাই শিখি আমরা। আমার অসংখ্য আযেবাজে সিভি আছে, অনেক বানান ভুল, কনসেপ্ট ভুল সিভি। গত ৩ বছরে আমার ট্রাই করা ভিবিন্ন সিভি গুলো দেখতে পারেন ন
আমি কারো সিভি দেখে বলিনা যে এটা আনপ্রফেশনাল, সব সিভিই প্রফেশনাল, তবে সঠিক সময়ে সঠিক সিভি কিনা সেটাই আসল ব্যাপার। আর এই সঠিক ব্যাপারটা বুঝতে লাগে নিয়মিত চর্চা আর এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি। আমি এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি, ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়, আপনিও চেষ্টা করেন।
সিভি নিয়ে এটাই শেষ পোস্ট ।অল্প কিছু টিপস ( জীবন থেকে নেওয়া ) –
– দুই কলামের সিভি পড়তে সুবিধা।
– ধর্ম আর রেজাল্ট দেওয়া অমুলুক।
– হাই স্কুল, প্রাইমেরি স্কুলের ইনফো দেওয়া অপ্রয়োজনীয়, তবে কেউ স্পেশাল স্ট্যান্ড এ পাশ করে থাকলে ট্রাই করা যেতে পারে।
– সিভিতে বেশী কালার ইউজ করলে হয়তো আপনার কম্পিউটারে দেখতে সুন্দর, কিন্তু ফ্যাক্টরির প্রিন্টারে বাজে রকম আসবে। তাই যত কম তত ভালো।
– যত ছোট করে ইনফরমেশন দেওয়া যায়, চেষ্টা থাকবে এক লাইনে শেষ করার।
– স্পেস, স্পেস, স্পেস – রাখুন, ২ লাইনের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রাখা খুবই ইম্পরট্যান্ট। হিজিবিজি সিভি মানুষ পড়তে চায় না।
– সেকশন গুলো তে ১৪, সাব সেকশনে ১২, রেগুলার প্যারা তে ১০ সাইজ ব্যাবহার করতে পারেন।
– শুধু মাত্র সেকশন হেডলাইন বোল্ড করবেন।
– ওয়ার্ডে করলে স্ট্যান্ডার্ড ফন্ট ব্যাবহার করেন, যেমন টাইমস নিউ রোমান।
– ডিজাইনাররা চাইলে মিনিমিলিস্টিক চোখের জন্য আরামদায়ক ফন্ট ইউজ করতে পারেন।
– সারা রাতে সিভি লিখে ভোর রাতে সেন্ড না করে, সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার পড়ে নেন, ঠাণ্ডা মাথায় অনেক অসঙ্গতি চোখে পড়বে।
– সিভির সাথে ৩ প্যারার কবার লেটার যোগ্য করবেন। ফন্ট এবং টেম্পলেট যেন সিভির সাথে মিলে।
– ডিজাইনার রা দের উচিৎ প্রতি পোস্টের যেন মডিফাইড পোর্টফলিও জমা দেওয়া, বেশী কষ্ট হলে, আপনার স্ট্যান্ডার্ড পোর্টফলিওর সাথে ৮/১০ পেজের ঐ জব রিলেটেড ট্রেন্ড রিসার্চ, মার্কেট রিসার্চ যোগ করে দিবেন।
– পারলে সিনিয়র কাউকে দিয়ে দেখাই নিবেন, উনার কমেন্টস গুলা গুরুত্ব সহকারে নিবেন।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ বাঁচাই রাখলে পরে কখনো কভার লেটার আর পোর্টফলিও নিয়ে লিখবো। কেউ পার্সোনালি সাহায্য চাইলে আমার মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো, ইনশাল্লাহ।
আল্লাহ হাফেজ।
Author : Mirza Mannan, Fashion Designer, C&A Mode GmbH & Co.