আমার ভার্সিটিতে প্রতি মাসেই ১টা কিংবা ২টা কলোকিয়াম টক হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন টপিকের উপর সায়েন্টিস্ট বা প্রফেসররা ২ঘন্টার একটা লেকচার দেন। প্রতিটা কলোকিয়াম শেষেই আমার মাথা ভন ভন করে ঘুরতে থাকে। কতো অদ্ভুত, অসাধারণ রিসার্চ হচ্ছে সারা দুনিয়ায়, আমরা তার কতোটুকুই বা খোঁজ রাখি। হঠাৎ মনে হলো, যদি একটু সামারি এখানে লিখি, হয়তো কেউ না কেউ ঐ টপিকে আগ্রহী হয়ে এখানে আসবেন, রিসার্চ করবেন, দুনিয়া কাঁপাবেন। একদম পিওর রিসার্চ করতে। আমাদের দেশের পড়াশোনা পরীক্ষা পাস এবং চাকরি নির্ভর, এটা আসলে খুবই স্বাভাবিক। একটা মোটামুটি গরীব দেশে রিসার্চ একটা বিলাসিতা। কিন্তু যেসব দেশের অনেক টাকা আছে, তাদের কাছ থেকে এই সুযোগটা না নেয়া বোকামি।
আজকের কলোকিয়াম টকের টপিক টা খুবই মজার ছিলো। সহজ ট্রান্সলেশনে যা দাড়ায় সেটা হলো রাস্তা খুঁজে বের করবো, সেটার জন্য কেমন ইন্টারেকশন দরকার, কেমন ডিজাইন দরকার, কমন স্পেসে কিভাবে ইনফরমেশন প্রসেস করবো।
আমি পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, নেশায় ডিজাইনার। আমরা যখনি একটা কিছু ডিজাইন করি, প্রথম যেই স্টেপটা নেই , সেটা হচ্ছে প্রব্লেম এর সল্যুশন খোঁজা। এটা হাজার বছরের পুরনো মেথড। পৃথিবীতে মানুষ যতো জিনিস ডিজাইন করসে, সবাই সেইম মেথড ফলো করসে। পিরামিড? মমি সংরক্ষণ। চার্চ? মানুষের উপাসনার জায়গা করে দেয়া। দুর্গ? নিরাপত্তা, অনেক দিন সারভাইভ করার ক্ষমতা। প্রবলেম সল্ভিং এর পাশাপাশি যেই বিশাল মুখ্য একটা বিষয় ছিলো সেটা হচ্ছে একটা এস্থেটিক ভ্যালু তৈরি করা। সৌন্দর্য, বিস্ময়, আনন্দ, গৌরব, এবং অনেক ক্ষেত্রে ভীতি তৈরি করা। এই এস্থেটিক ভ্যলু তৈরি করতে যেয়ে অনেক সময় একটা জিনিস উপেক্ষিত থাকে, সেটা হচ্ছে, কার জন্য ডিজাইন করতেসি? এখানেই আসে “ইউজার সেন্ট্রিক ডিজাইন’ টপিক টা। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, একটা রকেট থেকে শুরু করে দরজার নব পর্যন্ত ডিজাইন করার সময় একটা জিনিস সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি পায়, সেটা হচ্ছে ইউজার। সেখান থেকে আসে ইউজেবিলিটি। আমার মাস্টার্স ডিগ্রি টাইটেল “কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড মিডিয়া”। আমি যেই মড্যুল এ প্রায়োরিটি বেশি দেই সেটা হলো ইউজেবিলিটি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেস্টিং আর হিউম্যন কম্পিউটার ইন্টারেকশন। আমি এই সাবজেক্ট এর জন্য শুধু মাত্র এই একটা ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করে জার্মানিতে মাস্টার্স করতে আসছি। এবং এই ১ বছর ৩ মাসে এমন একটা দিন যায়নাই যেই দিন আমি নতুন কিছু শিখিনাই। আপনি যেই টপিক পছন্দ করেন, সেই টপিকেই যদি পড়াশোনার সুযোগ পান, জার্মানিতে মাস্টার্স আপনার জন্য একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে, এটা আমি লিখে দিতে পারি।
আবারো কলোকিয়াম এ ফিরে যাই। সিয়াটলের একটা বিখ্যাত মিউজিয়াম আসলে কতোটা ইউজার সেন্ট্রিক সেটা দিয়ে আলোচনা শুরু। একটা বিল্ডিং এর একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় কতো সহজে আপনি যেতে পারবেন, সেই ডিজাইন ততোটাই ইউজেবল। রিসার্চে ডেটা ছাড়া কোন কথা নাই। এই গোটা স্টাডি ডিজাইনটা করে ইউজেবিলিটি ইঞ্জিনিয়াররা। ইউএক্স টপিক টা এখন হট কেক,আসলে এই এখান থেকেই ইউএক্স শুরু। তারপর আসে অনেক গুলা ফ্যক্টর। কগ্নিশন, ভিশন, টুলস, ডেটা গেদারিং, এনালাইসিস এবং আরো অনেক কিছু। একটু খেয়াল করে দেখেন, এখানে কতো বাহারের মানুষ জড়িত। আর্কিটেক্ট, ডিজাইনার, ডেভেলপার, ইউজেব্লিটি ইঞ্জিনিয়ার, এবং লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, কগ্নিটিভ সায়েন্টিস্ট। আইট্র্যকার, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, গ্যালভানিক স্কিন রেসপন্স, স্পেস সিন্টেক্স ইউজ করে অ্যাপ ডিজাইন করে ডেটা কালেক্ট করে এবং তা এনালাইসিস করে একটা সিধান্তে পৌঁছান, বিল্ডিং/ সিস্টেম টা কতোখানি ইউজেবল! এস্থেটিক ভ্যলু এবং ইউজেবিলিটির ব্লেন্ডিং টাই এখানে চ্যলেঞ্জ এবং সবশেষে অসধারন একটা অভিজ্ঞতা।
যতোগুলা টপিক এর কথা বললাম, প্রতিটাই আসলে আলাদা আলাদা রিসার্চ এরিয়া, প্রফেশন। সবার একটাই উদ্দেশ্য, ইন্ট্যারেকশন এর আরো ভালো পদ্ধতি খুঁজে বের করা, ইউজার এর জন্য।
আমার প্রথম প্রজেক্ট ছিলো আইট্র্যাকার এবং গ্যল্ভানিক স্কিন রেসপন্স দিয়ে আইপ্যাড এপ্লিকেশনের কগ্নিটিভ ইউজ্যব্লিটি মেজার করা। এবারের প্রজেক্ট হচ্ছে ইন্ট্যরেক্টিভ থিয়েটার। মূলত হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারেকশন। আর আরেকটা টপিক হচ্ছে কগ্নিটিভ মডেলিং। ব্রেইনের সাথে ফিজিক্যাল ইন্ট্যারেকশনের রিলেশন নিয়ে কাজ।
আসলে প্রতিটা টপিক নিয়েই কিছু লিখতে হাত নিশপিশ করতেসে কিন্তু আর এনার্জি নাই।
আপনার যদি সত্যিই আগ্রহ থেকে থাকে, আমাকে ফেইসবুকে অ্যাড না করে নিজে নিজেই গুগল থেকে এসব ব্যপারে ডিটেইলস জানতে পারবেন। অসংখ্য ওয়েব ব্লগ, ফেইসবুক পেইজ এবং টুইটার একাউন্ট আছে যারা বিনামূল্যে এই নলেজ ছড়ায় দিচ্ছেন। আগ্রহ থাকলে আপনি নিজেই ওদেরকে খুঁজে পাবেন। প্রশ্ন থাকলে কোরা তে জিজ্ঞেস করবেন। ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখবেন। বিহেন্স, ড্রিবলে কাজ দেখবেন, পিন্টারেস্টে বোর্ড করে নিজের জন্য ইন্সপায়ারেশন রেডি করবেন। ( যেহেতু আপনি ফেসবুকে আমার এই লেখা পড়তেসেন, আমি ধরেই নিতে পারি আপনি সোশ্যাল। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক শুধু ফেইসবুকেই সীমাবদ্ধ না)।
আর শর্টকাট খুঁজলে আমাকে মেসেজ করে জিজ্ঞেস করবেন ” ভাইয়া, জার্মানি তে মাস্টার্স করবো। ব্লু কার্ড কতদিন লাগে, চাকরি কেমন, বেতন কেমন, আপনি কোথায় পড়েন, কিভাবে আপ্লাই করবো।” আপনার মেসেজটি ইগ্নোর করার জন্য আমি আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
পড়াশোনার টপিকের ব্যপারে কন্সটাল্টেশনেও আমি ভীষণ কাচা। জীবনে কোনদিন এ প্লাস পাইনি। অনেক ব্যকলগ খাইসি জীবনে। এমনকি এখানেও খারাপ রেজাল্টের কারণে স্কলারশিপের জন্য কখনো কন্সিডারড হইনি। প্লিজ, কোন বিষয়ে পড়লে ভালো হবে, কোন বিষয়ে চাকরির মার্কেট ভালো এসব আমি জানিনা। আমি শুধু আপনার জন্য কয়েকটা রিসার্চ এরিয়া প্রেজেন্ট করলাম। এর বেশি কিছু না। ওভেনে ফ্রোজেন পিৎজা রেখে আসছি। এইটাই লাঞ্চ এবং ডিনার। খিদা লাগসে। যাইগা।
ধন্যবাদ বিসাগ।