তামান্না ইসলাম বর্তমানে intel এ কর্মরত আছেন।
পিএইচডি ?????? …………………….. “আপু আপনি পিএইচডি করলেন না কেন?” “তামান্না, তুমি কাজটা ঠিক কর নাই, তোমার অবশ্যই পিএইচডি করা উচিত ছিল।” এই ধরনের প্রশ্ন, মন্তব্য গত ১৫ বছরে বহুবার শুনেছি। এমনকি কিছুদিন আগেও আমার বাবা ফোনে বললেন “সাগর (আমার ছোট ভাই) ডিপার্টমেন্টের হেড হয়ে গেল, আমার তোমার জন্য মনটা খারাপ লাগে মা, পিএইচডি টা করলা না।” আমার কি নিজের জন্য মন খারাপ হয়? সে প্রশ্নের উত্তরে পরে আসছি। তার আগে বলি, আমি কেন এমন সৃষ্টিছাড়া সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি কি আসলেই বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি? আমি আসলে যখন কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে কানাডা আসি মাস্টার্স করতে, সেই মুহূর্তে আমি খুব একটা দূরদর্শী ছিলাম না। আমার ভাবনা গুলো মাস্টার্স করা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। এর পরে কি করব সেই মুহূর্তে ভেবে দেখি নি। এর দুইটা বড় কারণ ছিল, প্রথমত আমি আমার পরিবারের আমার জেনারেশনের প্রথম সন্তান যে বাইরে পড়ালেখা করতে এসেছি, এখনকার ছেলে মেয়েদের কাছে শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য যে বাইরের জীবন, পড়া লেখা, চাকরী এসব সম্পর্কে আমার একেবারেই ধারনা ছিল না।
দ্বিতীয়ত, আমার সঙ্গে ছিল আমার দেড় মাসের সন্তান, যে ওই মুহূর্তে আমার চিন্তা চেতনার সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে ছিল। ‘৯৮ সালের ওই সময়ে টেলিকমের মার্কেট খুব ভাল। অনেকটা হুজুগে পরেই একগাদা ইলেকট্রিকাল এর কোর্স নিয়ে উঁচু মানের এক ইউনিভার্সিটিতে ওই দেড় মাসের বাচ্চা নিয়ে আমি আক্ষরিক অর্থেই হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। খানিকটা স্থির হয়ে আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি আসলে কি চাই। ভেবে দেখলাম, আমার বুয়েটে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝতে পেরেছি আমার পড়াতে ভাল লাগে না। অন্যকে বুঝাতে গেলেই মনে হয় “এত ব্যাখ্যা দিতে হয় কেন?” যদিও ছোট বেলা থেকে আম্মু নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়েছে শিক্ষকতার, কিন্তু আমার কাছে আমার নিজের ভাল লাগার দাম অনেক বেশী। সুতরাং পড়ানোর চিন্তা বাদ। বাকি থাকে রিসার্চ আর কর্পোরেট চাকরী। হয়তো ছোট বাচ্চার কারণে, হয়তো সঠিক কোর্স বা রিসার্চ টপিক সিলেক্ট না করার কারণে সত্যিকার অর্থে আমি তখন পড়া লেখার মজাও পাচ্ছিলাম না। আর পড়ালেখার মজা যদি পুরাপুরি না পাওয়া যায় তাহলে রিসার্চে যাওয়ার কোন মানে হয় না। সর্বোপরি পিএইচডি বিরাট এক কমিটমেন্তের ব্যাপার, পড়ালেখার মজা না পেলে সেই কমিটমেন্তের মধ্যে যাওয়া বোকামি।
আগেই বলেছি, আমি সারা জীবন নিজের সিদ্ধান্তের সময় নিজের ভাল লাগাকে দাম দিয়েছি সবার আগে, কে কি ভাববে, কে কি করে সেটা চিন্তা না করে। কোন কাজে আনন্দ না পেলে আমি সেই কাজ করতে পারি না শত চেষ্টা করেও। তাই নিজেকে আর জোর করি নাই। মাস্টার্স করেই চাকরীতে চলে আসলাম। আমি কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভবিষ্যৎটা পুরো চিন্তা না করে। সত্যিকার অর্থে চিন্তা করার মত জ্ঞান আমার ছিল না, নেটওয়ার্কও ছিল খুব ছোট (ইশ তখন যদি আড়িপাতা থাকতো!)। তবে পরবর্তী জীবনে যেটা আমি অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কেউ যদি কর্পোরেট জগতে ইঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজারিয়াল জব করতে চায়, তাহলে আমার মতে মাস্টার্স দিয়ে শুরু করাটাই সুবিধাজনক। এর কিছু কারণ আছে, প্রথমত, ইঞ্জিনিয়ারিং জবের জন্য মাস্টার্স এমনকি ব্যাচেলর এর জ্ঞানই যথেষ্ট। প্রতিটা কোম্পানির নিজস্ব টুল , ডকুমেন্ট, স্ট্যান্ডার্ড থাকে যেগুলা কাজ করতে করতে শিখতে হয়, তাই যত তাড়াতাড়ি শুরু করা যায়, সেগুলো তত তাড়াতাড়ি আয়ত্ত করা যায়।পুঁথিগত বিদ্যার চেয়ে এগুলা অনেক বেশি জরুরী, আর এগুলোকে আয়ত্ত করার জন্য ব্যাচেলর বড় জোর মাস্টার্স এর ব্যাকগ্রাউন্ড যথেষ্ট।
দ্বিতীয়ত, একটা জায়াগায় নিজেকে প্রমাণিত করা, প্রতিষ্ঠিত করা, নেটওয়ার্ক তৈরি করা এগুলো অনেক জরুরী। মাস্টার্স করে চাকরী শুরু করলে এগুলোর সময় অনেক বেশি পাওয়া যায়। কোম্পানির রিসার্চ গ্রুপেও অল্প কিছু পসিশন ছাড়া সব সময় পিএইচডি চায় না। উপরন্ত পিএইচডিদের চাকরীর ক্ষেত্র খুব সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। যেহেতু পিএইচডিদেরকে কিছুটা উঁচু পসিশনে, কিছুটা বেশী বেতনে হায়ার করা হয়, এদের কাছ থেকে এক্সপেকটেশন থাকে যে এরা এসেই বিরাট কন্ট্রিবিউশন করবে, কাজ শেখার সময় দেওয়া হয় খুব কম, অথচ যে কেউ নতুন চাকরীতে জয়েন করলে কোম্পানির যে নিজস্ব জ্ঞানের কথা আগে উল্লেখ করেছি সেগুলা শিখতে সবারই কম বেশী একই রকম সময় লাগে। আরেকটা ব্যাপার হল, কোম্পানির ভিতরে থেকে শুরুর দিকে উপরে উঠা সহজ, তাই মাস্টার্স আর পিএইচডি এর বেতন বা পসিশনের শুরুর যে গ্যাপটা সেটা কোম্পানির ভিতরে থেকে খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলা সম্ভব। আগের প্যারায় যা বললাম তার পুরোটা পেশা, অর্থ এসবের সাথে জড়িত, এর সাথে কেউ যেন আবার জ্ঞান পিপাসা, আত্ম তৃপ্তি এগুলোকে গুলিয়ে না ফেলে। পরের ব্যাপার গুলোকে আমি পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিতে চাই, অন্তত আজকের পোস্টে আলোচনা করব না।
আরও কিছু ব্যাপার আছে, যেমন পিয়ার প্রেশার। কিছুদিন আগে, Sandeepan দার একটা পোস্টে পড়েছিলাম যে উনি কেউকে বলছেন যে অনেক ভাল ছাত্ররা পিএইচডি না করলে পরে আফসোস লাগতে পারে যখন দেখে যে তার চেয়ে অনেক খারাপ ফলাফল করা ছাত্র পিএইচডি করে ফেলেছে। কথাটা হয়তো বেশির ভাগের ক্ষেত্রে সত্য, স্বাভাবিক অনুভূতি। আমরা নিজেরাই সবচেয়ে ভাল চিনি নিজেকে, এই ধরনের কষ্ট কতোখানি প্রভাব ফেলবে আমার নিজের উপর, নিজেকেই সেটা বুঝতে হবে। আমি যেমন জানি আমার উপরে এর প্রভাব শূন্য, তাই আমার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ ছিল এবং আজও আমার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন আক্ষেপ নাই। আমার এই অভিজ্ঞতা গুলো আমার নিজস্ব, রিসার্চ গ্রুপে বা ইউনিভার্সিটিতে, কলেজে পড়ানোর অভিজ্ঞতা কেমন সে ব্যাপারে অন্য কেউ বললে ভাল হয়, আমার অভিজ্ঞতা গুলো মোটামুটি শোনা অভিজ্ঞতা।
তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক ভেবে চিনতে নেওয়ায়ই ভাল, দূরদর্শীতা জীবনের এক মূল্যবান গুন। সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়, নিজের সব অভিজ্ঞতার পরও যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় “তোমার ছেলে মেয়েরা পিএইচডি করুক সেটা তুমি চাও?” আমি বলবো “হ্যাঁ”। আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি “কেন?” উত্তরটা হল “আমার চিন্তার আবেগ প্রধান অংশ এখানে ডমিনট করে। সেই অংশ ভাবতে চায় আমার ছেলে মেয়েরা অনেক বুদ্ধিমান। তবে আমার চিন্তার লজিকাল অংশ বলে ওরা যাই করুক, সেই কাজে যেন আনন্দ পায়, আত্ম তৃপ্তি পায়, জগতের মঙ্গল হয় আর সর্বোপরি ওদের সামগ্রিক জীবন সুখী হয় । ” তাই পিএইচডি এর হ্যাঁ/না সিদ্ধান্ত ওদের নিজেদেরকেই নিতে হবে। নিজের চেয়ে আপন আর কে আছে?
So if its possible to apply for P.hd without master’s to the usa universities so in that case what are the requeirments..??
yes it is possible.
[…] […]