আজকের এই লেখাটা অর্থাৎ মনের ক্ষোভ টা গত কয়েকটি বছর ধরে ঘুমিয়ে ছিল। সময় এতো দ্রুত যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করার সুযোগ পাইনি। চাকরি অথবা পড়ালেখা কিংবা অন্যান্য কাজে আমাদের দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ প্রবাসে জীবন যাপন করে। ক্ষুদ্র হলেও কিন্তু আমাদের দেশকে তুলে ধরার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আপনি যদি অন্য এক দেশের মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করেন তাহলে দেখবেন তার কাছে আপনার দেশের মান অনেক উপড়ে এবং সেই আমাদের দেশের গান গাইবে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। এক কথাই মার্কেটিং বলতে পারেন। আপনি তার সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ দেখাবেন, সেও আপনার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চাইবে। সম্ভাবনা এইভাবেই খুলে। কিন্তু কষ্টটা লাগে তখন যখন দেখি আমরা আমাদের সংস্কৃতি আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে গুলিয়ে ফেলি – ভাষা থেকে শুরু করে খাবার পর্যন্ত। আমার অনেক বন্ধু বলে আমাদের কালচার আর প্রতিবেশী দেশের কালচার same. আমি বার বার বলি কালচার সিমিলার হতে পারে but not same.
আমি পড়াশুনার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই দেশের বাইরে পাড়ি জমাই । কখনো UK আবার বর্তমানে জার্মানিতে। লন্ডনের শিক্ষা জীবনে আমার কিছু পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু হয়। আমার খুব ভালো বন্ধুও ছিল তারা। আমি হিন্দিতে ওদের সাতে কথাও বলতাম। তখন ফেইসবুক এ ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে বাংলা,ইংরেজি এবং হিন্দি লাগাতে পারলে এক বিশাল বেপার মনে হতো। আমার বয়স তখন ২০। যেখানেই আমরা যেতাম সবাই মনে করতো i am an indian. তার উপর আমার ধর্ম হচ্ছে হিন্দু। wallmart এ কাজের কারণে আমার ২ জন কলিগ এর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়। একজন হচ্ছে শ্রীলঙ্কান এবং আর একজন হচ্ছে সাউথ ইন্ডিয়ান(আমার চেয়ে ইংরেজি কম পারত)। তারা আবার তামিল ভাষাই কথা বলে। একদিন আমি সাউথ ইন্ডিয়ানরে বললাম “if you have problem with english then you can speak hindi with me, i know hindi as well.” জবাবে আস্তে আস্তে গুছিয়ে সে আমাকে বলল “i dont know hindi and i dont wanna know, doesn’t matter how many language i know only my mother language can give me happiness and english is enough to communicate and survive in this country.” নিশ্চুপ আমি তর্ক করার সাহস করিনি বরং সম্মান করেছি।
এইবার আসি সেই ভালো বন্ধু গুলার কাছে। আমি তাদের সাথে হিন্দি বলা বন্ধ করে দিই। উত্তর ছিল একটাই আমার ইংলিশ প্র্যাকটিস করতে হবে, হিন্দি নয়। আমি এমনকি তাদের কে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে এবং এর ঘটনা শুনাই।এরপর বলি যে “তোদের পারলে বাংলাও শিখা উচিত। তখন থেকে আমি তাদের কাছে racist. but i am proud to be a racist.
আমি জানি আপনারা যারা এই লেখাটা পরতেছেন তাদের মধ্যেই অনেকেই হিন্দি বলেন, খুব ভালো গুন। কিন্তু কিছু প্রশ্ন করি- যাদের সাথে কথা বলতেসেন তারা কি একবারের জন্য আপনার ভাষা শিখার চেষ্টা করেছে? আপনার কি কোন কারণেই মনে হয়না এই ভাষার কারণে তারা আপনাকে ডমিন্যান্ট করে- একটু খেয়াল করে দেখেন ? অথবা কালকে থেকে হিন্দিতে কথা বলা বন্ধ করে দেন , দেখেন তহ reaction কেমন হয়? আর একটা জিনিষ খেয়াল করে দেখবেন, প্রথম দেখাতেই আপনি বাঙ্গালি হইলেই আপনার সাথে হিন্দি তে কথা বলা শুরু করে দিবে। কেন জানেন? আমি শিওর এর উত্তর আপনার কাছে ভালো লাগবেনা।
UK এর শেষ সময়ে এবং জার্মানিতে শুরুর দিখে এমনকি বর্তমানেও আমার এই racism নিয়ে খুব সমস্যাই পরি। দেশের যেকোনো প্রান্তেই জাননা কেন বাঙ্গালি ১ জন পাইলে ইন্ডিয়ান পাবেন ২ জন। আমার ভার্সিটিতে মোটামুটি সবাই জানে আমি হিন্দি পারিনা। কেমনে বুজলাম জানেন? গতকালকে একটা পার্টি তে যাওয়া হয়, যাওয়ার পর এক নতুন পাকিস্তানি বন্ধু এবং আমি সিগারেট আড্ডাই- প্রথম প্রশ্ন সে আমাকে করলো “তুই কি একদম হিন্দি বুঝিসনা ?”। মনে মনে ভাবলাম যাক বাবা অন্তত কেন জানিনা এটার উত্তর দিতে হবেনা। যেখানেই যাই আমি কেন হিন্দি জানিনা এই প্রশ্নটা আমাকে লাথি মারে যদিও এর উত্তর আমার এখন মুখোস্ত হয়ে গেছে। দোষ করে কে আর লাথি খাই কে ! প্রশ্নটা কেন করে জানেন? আমি শিওর এর উত্তর আপনার কাছে ভালো লাগবেনা।
ভাষা নিয়ে আমার কোন কমপ্লেইন নাই কিন্তু নিজ ভাষার পরিচর্যা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। আপনি যে দেশে আছেন কিংবা থাকবেন সেই দেশের কালচার অবশ্যয় জানা উচিত। আপনার সাধ্যমতো পালন করাও উচিত তবে নিজের টা ভুলে গিয়ে নয়। আপনি যদি জার্মানিতে বসবাস করেন এবং আমার কমপ্লেইন এর দাবিধার হন তাহলে উপড়ের প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেন। আচ্ছা দাঁড়ান একটু গুছাই প্রশ্ন করি আবার – আপনি কি জার্মান কারো সাথে ওদের ভাষাই কথা বলার চেষ্টা করেছেন? তাদের reaction দেখে অনুভূতি কেমন? আপনার কোনো জার্মান বন্ধু একবারের জন্যও কি আপনার ভাষা শিখার চেষ্টা করেনাই? আপনার কি কোনো কারণে মনে হয় এই ভাষার কারণে তারা আপনাকে ডমিন্যান্ট করে? আপনি তাদের সাথে ওদের ভাষাই কথা না বললে reaction কেমন হয়? আমি শিওর এর উত্তর আপনার কাছে ভালো লাগবে।
আমার এই racism এর মানে এই নইযে আমি ইন্ডিয়ান দের ঘৃণা করি। বর্তমানে আমার একজন ভালো বন্ধু হচ্ছে ইন্ডিয়ানি- আমরা ইংরেজিতে কথা বলি আবার জার্মান ভাষাও চর্চা করি। তাছাড়া আগেই বলেছি “নিশ্চুপ আমি তর্ক করার সাহস করিনি বরং সম্মান করেছি। – সেও একজন ভারতীয়”!
আরো পড়তে পারেনঃ