ট্রিপের প্ল্যান:
সেমিস্টার মোটে শুরু হইছে, অধিকাংশ কোর্স অলরেডি শেষ- তার উপর কামলা নাই তখন। সুতরাং বেকার মানুষের যা করার কথা আমিও তাই করতেছিলাম। নেটে ভেরেন্ডা ভাজার কথা কইতেছি আর কি। তো নেটে প্রায়ই Ryanair আর Easyjet এ নজর রাখা হতো, দেখলাম মোটামুটি কম খরচে ক্রোয়েশিয়া, মাল্টা আর স্পেনের টিকেট আছে। ডর্মের অন্য বাংলাদেশি ভাইদের জানালাম। দেখা গেলো অনেকেই রাজি — প্রথম দিকে পাবলিক ক্রোয়েশিয়ার ব্যপারে আগ্রহী হলেও পরে কিভাবে যেনো মাল্টাই ফাইনাল হলো। ছোট্ট ট্রিপ- ৩ রাত ৪ দিনের।
টিপস:সস্তায় এয়ার টিকেট চাইলে Ryanair আর Easyjet এ চোখ রাখা ভালো, ঢাকা-কক্সবাজারের চেয়ে কম খরচে জার্মানি থেকে ইউরোপের আরেক মাথায় ট্রিপ দেয়া সম্ভব এই এয়ারলাইনগুলো দিয়ে। আর কম খরচে থাকার জন্যে hostelworld.com কিংবা airbnb।
যাত্রার শুরু:
ফ্লাইট ভোর সাড়ে ছয়টায়, কার্লশ্রুহের বাদেন-বাদেন এয়ারপোর্ট। ৬টার আগেই চেকইন করা লাগবে। যেহেতু যাচ্ছি উল্ম থেকে- যাত্রাপথ তাই অনেকটা এরকম: উল্ম থেকে ট্রেনে স্টুটগার্ট, সেখান থেকে ট্রেনে কার্লশ্রুহে, ওখান থেকে ট্রেনে বাদেন-বাদেন স্টেশন, তারপর বাসে এয়ারপোর্ট। আমাদের HMS Travel এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জনাব মাহফুজ (উনি বিখ্যাত মাহফুজ ফিল্টারের আবিস্কারক, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে গুগল করেন)। ও বার বার তাড়া দিচ্ছিলো একটা ব্যাকআপ কানেকশন রেখে রওনা হতে, যাতে কোনো বাস বা ট্রেন মিস হলেও আটকে না পড়ি। কারণ রাত ১১ টার পর সেদিন এয়ারপোর্টে যাওয়ার কোনো বাস ছিলো না। সুতরাং ডর্ম থেকে বেরিয়ে পড়লাম বিকেল ৪.১৫ তে। তারপর দীর্ঘ ট্রেন জার্নি। মাঝে কার্লশ্রুহেতে এক টার্কীশ স্টোরে ডোনারের উপর হামলা। শেষে রাত ১১টার আগেই পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্টে।
টিপস: Ryanair এ কেবিন লাগেজ হিসেবে দুটো ব্যাগ নেয়া যায় । এগুলোর সাইজ ওদের সাইটেই পাবেন। বড় ব্যাগে ম্যাক্স ১০ কেজি নেয়া যাবে। ছোটটায় টুকিটাকি — বইপত্র/ই-রিডার/ ট্যাব/ ল্যাপটপ ইত্যাদি নিতে পারেন। টুথপেস্ট/ সেভিং ক্রিম বা ফোম/ বডি স্প্রে বা পারফিউম কোনো কিছুই যেনো ১০০ এমএল এর বেশি না হয় (বোতল বা প্যাকের সাইজ)। এর চেয়ে বড় সাইজ বা পরিমাণ প্যাকে লেখা থাকলে সিকিউরিটি চেকিং এর সময় ওরা নিয়ে নেবে। পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখতে পারবেন।
এ নাইট ইন এয়ারপোর্ট (The Terminal মুভির জার্মান রিমেক):
গেলাম তো রাত ১১টার ভেতর, কিন্তু আগে থেকেই জানি রাত বারোটার দিকে এয়ারপোর্ট বন্ধ হয়ে যাবে (জ্বি, এই এয়ারপোর্ট রাত ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে!)। তো সবাই লাউন্জে ঘণ্টাখানেক ঝিমিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। কপাল ভালো ছিলো আমাদের, আমরা প্রথম গেটের ওয়েটিং রুম টাইপ একটা যায়গায় ছিলাম যেখানে বসার ব্যবস্থা ছিলো। অন্য গেটগুলোয় বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাত বাড়তে লাগলো, আর আমাদের কেউ কেউ চেয়ারগুলোতে শুয়ে বৃথাই ঘুমানোর চেষ্টা চালালো। একটু পরেই চারজন নেমে গেলো কার্ড খেলাতে। সানি ভাই চলে গেলো বাইরে — আমি মুগ্ধ হয়ে ঠান্ডা রাতে ওনাকে ঘন্টাখানেক লেফট-রাইট করতে দেখলাম। আমাদের লিভিং এনসাইক্লোপিডিয়া মামুন ভাই কার্পেটে কাগজ বিছিয়ে kindle নিয়ে শুয়ে পড়লেন — সেই পড়া উনি থামিয়েছিলেন ভোর ৪টার ১৫ মিনিট আগে! রাত ৩টার পর rag এর প্রয়োজনীয়তা এবং ক্ষতিকর দিক বিষয়ক আধঘন্টার তুমুল আলোচনা চললো, আমি নিশ্চিত সেই আলোচনার নমুনা দেখে (যদি সিকিউরিটি ভিডিও কেউ দেখে আরকি) পরের দিন সিকিউরিটির লোকজনের চোখ কপালে উঠেছিলো। পুরো এয়ারপোর্টে আমরা আট বাঙাল, একটা গার্ড পর্যন্ত ছিলো না।
টিপস: বাদেন-বাদেন এয়ারপোর্টে আমাদের মতো রাতে থাকতে হলে প্রথম গেটের কাছাকাছি থাকার ট্রাই করবেন, এটায় অন্তত বসার ব্যবস্থা আছে, অন্য গেটগুলোতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ জার্নি বাই এয়ারপ্লেন (বোয়িং কোম্পানির, ঢাকার ট্রান্সসিলভা বাসের উড়ালপংখী ভার্সন):
যেহেতু আমাদের সাথে বাড়তি লাগেজ কিছু ছিলো না, সুতরাং আমাদের চেকইন আর সিকিউরিটি চেকিং তাড়াতাড়িই হলো। অবশেষে ঢুকলাম বিমানে- মামুন ভাই, আমি আর প্রতীক পাশাপাশি সিটে। ফ্লাই করার একটু পরেই মামুন ভাইয়ের সাথে কোয়ান্টাম এনটাঙ্গেলমেন্ট নিয়ে সেইরাম হেভিওয়েট আলোচনা শুরু হইলো। ভাই বক্তা আর আমি শ্রোতা- ভাইয়ের অর্ধেক কথাই মাথার উপরে দিয়া গেছে (আমি বুঝি নাই), মাঝে দিয়া সামনে-পিছনের সিটের ইউরোপিয়ানগুলা ভাবছে না জানি আমরা কত্ত বড় পন্ডিত 😀 । আলোচনায় টায়ার্ড হইয়া ভাই ঝিমানো শুরু করলো, আমিও সিনিয়রের ট্রাম্পকার্ড দিয়ে প্রতীককে সরিয়ে জানালার পাশের সিটের দখল নিলাম (এইখানে প্রতীককে থ্যাংক্স দেয়া দরকার)। সম্ভবত আল্পসের উপর দিয়ে প্লেন যাচ্ছিলো, পুরো আড়াই ঘণ্টা ধরে পাহাড় আর সাগরই দেখলাম।
মাল্টার অবস্থান সিসিলি আর আলজেরিয়ার কাছাকাছি। ল্যান্ড করতেই একটা ধাক্কা খেলাম। যদিও এটা ইইউ কান্ট্রি, এয়ারপোর্টটা দেখতে কুয়েত সিটি এয়ারপোর্টের মতো লাগলো। ডিজাইনটা অনেকটা মুরিশ, আর রংটাও কেমন যেনো মনমরা — ম্যাটমেটে। ৯টার দিকে ল্যান্ড করে বাসায় কল দিলাম, নেটওয়ার্ক ভালো না- অযথা কিছুক্ষণ হ্যালো-হ্যালো করলাম। ৩০ সেকেন্ডে চার ইউরো গায়েব (রোমিং কল)। মাল্টার আকাশে মেঘের ঘনঘটা, সেই সাথে ঠান্ডা বাতাস। সূর্যের খোঁজ নেই। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই মনটা দমে গেলো। একটুর জন্যে বাস মিস করেছি- নেক্সট বাস এক ঘণ্টা পর।
টিপস: আপনার মোবাইল প্রোভাইডারের রোমিং তথ্যগুলো জেনে রাখা ভালো। আমার ক্ষেত্রে EU এর অধিকাংশ দেশে কোনো রোমিং চার্জ কাটে না, তাই মাল্টার রোমিং চার্জ চেক করতে মনে ছিলো না। এইসব ক্ষেত্রে স্কাইপ বা ভাইবার এ কিছু voip ক্রেডিট লোড করে রাখা ভালো।
দ্যা মাল্টিজ ওয়ে:
বাস এলো এক ঘণ্টা পর। ছোট্ট একটা দেশ, মাত্র ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার। বোঝার সুবিধার জন্যে লম্বা-চওড়ায় ১৭ কিলোমিটার ধরতে পারেন। এয়ারপোর্ট দেশের মাঝামাঝি, আর আমাদের হোস্টেল উত্তরে- রাজধানীতে। ধারণা ছিলো যেতে হয়তো ১৫-২০ মিনিট লাগবে, আর গিয়ে পৌঁছলাম প্রায় দেড় ঘণ্টা পর। একই রাস্তায় বাস যে কতোবার ঘুরলো — আল্লাহ মালুম। বাসগুলো জার্মান বাসের মতোই — কিন্তু লম্বায় অর্ধেক, এরা জার্মানদের মতো বাসের অতটা যত্ন নেয় না । টিকেট হলো সিঙ্গেল ওয়ান ওয়ে, অথবা সপ্তাহ বা মাসের জন্যে। কার্ডগুলো RFID, ড্রাইভারের সামনে একটা ডিভাইসে টাচ করে উঠতে হয়। টুরিস্ট এরিয়া হওয়ার জন্যে বাসে প্রচণ্ড ভিড় হয়, প্রতিটা বাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নেয় (আমার ধারনা ৫০+-৫ জন)। এর বেশি যাত্রী হলে তাদের পরের বাস নিতে হবে। জার্মানদের মতো বাসের টাইম চার্ট থাকলেও হয় বাস কিছুটা দেরি করবে অথবা আপনি প্রথম ২-১টা বাসে উঠতে পারবেন না ভিড়ের জন্যে। বার্সেলোনায় কিছু রাস্তা দেখে মনে হয়েছিলো কারওয়ান বাজার বা গুলিস্তানে চলে আসছি- ওটাই ছিলো ইউরোপে আমার দেখা ঢাকার সবচেয়ে বেশি মিল। কিন্তু মাল্টার কিছু রাস্তা পুরোপুরিই যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড আর মিরপুরের মতো। এমনকি ঢাকার রাস্তার হার্ডওয়ারের দোকানের মতো সাটার দেয়া দোকানও চোখে পড়লো অনেক। সাইনবোর্ডগুলোও অনেক জায়গায় একদমই ঢাকার মতো। রাস্তায় জ্যামও হয় মাঝেসাঝে। প্রায় সব বাড়ির রং ক্যামন যেনো ম্যাটমেটে ধূসর, ডিজাইন পুরোপুরি আফ্রিকান-আরব ধরণের । রঙিন বিল্ডিং একদমই চোখে পড়ে না। আরেকটা জিনিস না উল্লেখ করলেই নয়, মাল্টায় সবকিছুই জার্মানির তুলনায় কিছুটা সস্তা। ইউরো চলে, সুতরাং সাথে ক্যাশ থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। এখানে এটিএম বুথ চোখে পড়েনি অবশ্য, তবে যতদূর জানি – HSBC এর কিছু বুথ আছে এখানে। লোকজন সবাই ভালো ইংরেজি বোঝে এবং বলেও, সুতরাং ভাষা এখানে কোনো সমস্যা নয়।
টিপস: যদি দুই দিনের বেশি সময়ের জন্যে যান এবং আমাদের মতো ম্যাক্সিমাম এরিয়া কভারের প্ল্যান থাকে — তাহলে সপ্তাহ টিকেট (২১ ইউরো) কেনা উচিত। আর শুধু ক্যাপিটাল এর চারপাশে ঘোরার প্লান থাকলে সিঙ্গেল টিকেট কেনা সাশ্রয়ী হবে।
Day one: Valletta (aka Il-Belt), the capital
রাজধানীর আয়তন ০.৮ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু পুরো এরিয়াটাই বিশাল সব দুর্গপ্রাচীরে ঘেরা। তিন ঘণ্টায় পুরো রাজধানী দেখা শেষ (মিউজিয়ামগুলো বাদে)। দেশটা যদিও অনেক ছোট — কিন্তু এদের ইতিহাস অনেক পুরোনো এবং সমৃদ্ধ। সেই প্রস্তর যুগ (৫২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে এখানে মানব বসতি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো কিছু টেম্পল এখনো মাল্টায় দাঁড়িয়ে।
দেখে নিন Valletta এর কিছু ছবি:
প্রথম দিন বিকেলে Valletta ঘুরতে গিয়ে ঝড়ের মাঝে পড়লাম। আমাদের ট্যুর ম্যানেজার মাহফুজ জ্যাকেট না আনায় বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হলো। বাকিরা জ্যাকেটের কল্যাণে কোনরকম সামাল দিলাম। Valletta যদিও একদমই ছোট, কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর। একই সাথে পুরোনো আর নতুন, অগোছালো আর সুশৃংখলতার অসাধারণ মিশেল। রাতে আবার বের হলাম সবাই। এরই মাঝে ঠিক হলো পরের দিন রাতে হোস্টেলের কিচেনে রান্না হবে। মেন্যু — ভাত আর ভুনা মুরগি। নাজমুল আর সানি ভাইরা মসলা, পেয়াজ, মুরগি, চাল সব ম্যানেজ করলো।
Day two: Blue Grotto, Dingli Cliff, Mdina & Rabat
Blue Grotto জায়গাটা অনেক সুন্দর। কিন্তু যাওয়াটা ব্যাপক পেইন। হোস্টেল থেকে নাস্তা করে বের হয়েছিলাম সকাল ১০টার মাঝে, কিন্তু মাল্টিজ বাসের জ্বালায় দুনিয়া ঘুরে ক্যাপিটালেই পৌছলাম ১১.৩০ এর দিকে। তারপর আরেক বাসে ভর দুপুরে মেডিটেরেনিয়ানের পাড়ে Blue Grotto তে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় নৌকায় গুহাগুলোর ভেতর যাওয়া সম্ভব হলো না। শুরু হলো কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ফটোসেশন। মানুষ ৮ জন, ডিএসএলআর ৪ টা। সুতরাং মডেল আর ফটোগ্রাফার — কোনোটারই অভাব নেই।
শেষ দুপুরে রওনা দিলাম Dingli Cliff এর দিকে। জায়গাটা অদ্ভুত, অনেকটুক হাঁটতে হয় বাস স্টপ থেকে। চারপাশে মাঠ আর পাথর। তারপর হঠাত্ দেখতে পেলাম ক্লিফটা। দূরে নি:সঙ্গ একটা ওয়েদার স্টেশন, মেঘগুলো এতই কাছে — মনে হচ্ছিলো হাত বাড়িয়ে লাফ দিলেই ছোঁয়া যাবে। প্রচণ্ড বাতাস — আক্ষরিক অর্থেই উড়িয়ে নেয়ার মতো। স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে ছবি পর্যন্ত তুলতে পারছিলাম না। সামনে খাড়া নেমে গেছে মাটি। অনেক নিচে নীল সমুদ্র, দিগন্ত বিস্তৃত।
শেষ বাস ধরে চলে এলাম Rabat এ, এখানেই Mdina- the silent city। ১৫ শতক পর্যন্ত এটাই ছিলো পুরো মাল্টার রাজধানী। শুধু স্থায়ী ৩০০ অধিবাসীই গাড়ি নিয়ে এই শহরে ঢুকতে পারে। বিশাল সীমানা প্রাচীরে ঘেরা এই শহরটা অদ্ভুত সুন্দর। কেউ যদি Tomb Raider সিরিজের গেমগুলো খেলে থাকেন — তাহলে আপনার মনে হবে গেমেরই কোনও একটা প্রাচীন সিটিতে চলে এসেছেন। সরু গলি, অনেকটা রোমান আর্কিটেকচার, পুরোনো আমলের মতোই আলোক বিন্যাস- এক কথায় অসাধারণ এবং ইউনিক একটা সিটি।
অবশেষে হোস্টেলে ফেরা। সবাই রান্নায় হাত লাগালো, ঘণ্টাখানেকের ভেতর রান্না রেডি। মাল্টায় হোস্টেলে বসে নিজেদের রান্না ভাত আর ভুনা মুরগি — অসাধারণ। তালহা, মামুন ভাই, নিতাই দা আর নাজমুলের মত দক্ষ শেফদের রান্নায় মাল্টায় খুঁজে পেলাম দেশী স্বাদ।
Day three: Gozo (Azure Window), Island of Comino (the blue lagoon)
GoT এর কল্যাণে অনেকেই Gozo আর Azure Window দেখে ফেলেছেন। অসম্ভব সুন্দর দ্বীপটা। মাল্টা মেইনল্যান্ড থেকে যেতে হয় ফেরিতে করে। ফেরী ঘাটে যেতে যে জার্নিটা করা লাগছিলো — কঠিন বোরিং একটা বাস জার্নি, প্রায় তিন ঘণ্টা। অবশ্য এই ঘাটের কাছেই মাল্টার সবচেয়ে বড় আর সুন্দর কিছু বিচ, আমরা সময় বাঁচাতে ওদিকে নামিনি। Gozo তে পুরো সময়ই আমাদের ঘিরে ছিলো বিস্ময় আর মুগ্ধতা।
বিকেল চারটার দিকে স্পীড বোটে রওনা দিলাম Comino এর দিকে। ছোট্ট একটা দ্বীপ, কিন্তু এর চারপাশের লেগুনগুলো এক কথায় অপার্থিব। সবাই পানিতে নামলেও সাঁতার না জানায় আমি পানিতে নামলাম না, কপাল খারাপ।
তৃতীয় দিন শেষে সবাই ক্লান্ত, বাসেই একদফা ঘুমিয়ে নিলাম। রাতেই সব গুছিয়ে নিতে হয়েছে, সকাল ৯টার ভেতর এয়ারপোর্টে থাকতে হবে। মাঝরাতে আবার বের হলাম শেষবারের মতো শহরটা দেখতে। আমি, মাহফুজ, প্রতীক আর তালহা। অনেকক্ষণ ঘুরলাম, শেষে সমুদ্রের পারে বসে থাকলাম কিছুটা সময়। আবার কবে ভূমধ্যসাগরে আসা হবে কে জানে- ঢেউয়ের শব্দে সবাই আনমনা তখন।
ফেরা:
ভোর ছয়টায় মাহফুজের হাউকাউ এ জেগে ঘুমঘুম চোখেই রেডি হলাম সবাই। যে বাস ধরার প্ল্যান ছিলো সেটার কোনো খোঁজ পেলাম না। অন্য এক বাসে রাজধানীতে, সেখান থেকে সময় বাঁচাতে ট্যাক্সিতে এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্টে চেকইনের সীমিত সময়েই মামুন ভাইয়ের পোস্টকার্ড নিয়ে ছোটাছুটি… অত:পর ডয়েচল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা। তারপর সেই আগের মতই ট্রেন আর বাসের জগাখিচুড়িতে নিজ ঘরে ফেরা।
এই ট্রিপের মাঝে পেলাম স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত, দেখলাম অপূর্ব কিছু জায়গা, সময় কাটালাম অসাধারণ কিছু মানুষের সাথে। ট্রিপে রায়হান ভাইয়ের যাওয়ার কথা থাকলেও থিসিসের জন্যে শেষ মূহুর্তে উনি যেতে পারেন নি, ওনাকে মিস করেছি সবাই।
যারা ভবিষ্যতে যেতে আগ্রহী তাদের জন্যে: সর্বসাকুল্যে আমাদের খরচ ছিলো জন প্রতি ১৫০-২০০ ইউরো (সব ধরণের খরচ মিলিয়ে)।
দেখা যাক এর পরের ট্রিপ কোথায় হয়… সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন… Tschüss
ফটো ক্রেডিট: সানি ভাই, তালহা, মাহফুজ, মামুন ভাই, নিতাই দা, আর আমি নিজে…