ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম ও শিল্পোন্নত দেশ জার্মানী ৷ বাংলাদেশের তৈরী কাপড় আমদানীতেও পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ দেশ ৷ এখানে কাপড়ের দোকান গুলোতে গেলে দেখা যায় শতকরা ৬০ -৭০ ভাগ টিশার্টে “Made in Bangladesh” কথা টা লেখা থাকে ৷ এটা আসলে আমার একটা ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান ৷ আদতে সংখ্যায় সামান্য কম বেশি হতে পারে ৷ বড় কোন কাপড়ের দোকানে ঢুকে সবাই যখন টিশার্টের রং, ডিজাইন, প্রিন্ট, সাইজ দেখতে ব্যস্ত থাকে তখন আমি উল্টে পাল্টে দেখি কোথায় এটার তৈরী হয়েছে, মনে মনে আশা করি যেন বাংলাদেশের তৈরী হয় ৷ যখন দেখি টিশার্টের কোন অংশে ছোট্ট করে মেড ইন বাংলাদেশ (Made in Bangladesh) কথাটা লেখা আছে, প্রশান্তিতে বুকটা জুড়িয়ে যায় ৷ চিৎকার করে সাদা মানুষগুলাকে ডেকে ডেকে দেখাতে ইচ্ছা করে দেখো, দেখো, দেখে যাও তোমরা; এটা আমার দেশের তৈরী, আমার বাংলাদেশের তৈরী ৷
পারিনা, চিৎকার করে লোকজন জড়ো করাটা এদের কালচারের মধ্যে পড়েনা, নিজেকেই অনুভুতি টা সামলে বুকে আগলে রাখতে হয় ৷ আমার একটা পুরাতন বদঅভ্যাস আছে, যখন দেখি কোন টিশার্ট বাংলাদেশের তৈরী, মনের অজান্তে টিশার্টের ভেতরের সেলাই বরাবর আলতো করে হাত বোলাই ৷ কাপড়ের ভাজে যেখানে বাংলাদেশ নাম টা লেখা সেখানে স্পর্শ করি, কাপড়ের পড়তে পড়তে হাতের তালুর সংবেদনশীল ত্বক স্পর্শ করাই৷ অনুভব করি এই টিশার্ট টা আমার দেশের কোন না কোন ভাই বা বোন পরম মমতায় তৈরী করেছে, তারা হাত দিয়ে স্পর্শ করেছে, পরিশ্রমে ক্লান্ত আমার ভাই আমার বোনের নোনতা ঘামের একটা অংশ হয়তো টিশার্টে শুকিয়েও গেছে, হতে পারে তাদের এবং আমার স্পর্শ করার মুহুর্তটা ভিন্ন, এক মাস, কি এক বছর ৷ তবুও কেমন যেন এক প্রশান্তি ৷ আমার দেশ, আমার বাংলাদেশের গন্ধ পাই ৷ সেলাই এর মাঝে বাংলাদেশ দেখি, কাপড়ের পড়তে পড়তে, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব খোজার চেষ্টা করি ৷ কোন বাংলাদেশী ভাই বা বোনের হাতের স্পর্শ লেগে আছে, এটা ভাবতেই একটা মানসিক প্রশান্তি পাই ৷ বাংলাদেশের কোন না কোন একটা এলাকা, মেঠো পথ, আমার চেনা জানা, অচেনা মানুষ, জনপদ সব কিছুই এই টিশার্ট হয়তো ঘুরে এসেছে, সবচেয়ে বড় কথা এই টিশার্ট আমার বাংলাদেশ দেখে এসেছে ৷ কোন না কোন অলিগলিতে এই টিশার্টের জন্ম, বাংলাদেশের তাপমাত্রা, আদ্রতা, আবহাওয়া অনুভব করে এসেছে, মনের অজান্তে নিজেও সেটা অনুভব করার বৃথা চেষ্টা করি ৷
আবার ভাবি, কোন না কোন ভিনদেশী মানুষ হয়তো টিশার্টগুলা কিনবে, আমার দেশের মা মাটির গন্ধ তারা গায়ে জড়াবে, দ্বিধা দন্দ্বে পড়ি, ছোট্ট করে লেখা বাংলাদেশ নাম টা তাদের চোখে পড়বে তো? নাহ এরা এত ছোট্ট করে বাংলাদেশ কথাটা লিখেছে কেন? দুর থেকে টিশার্ট টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সাধারন ভাবে অনেক টা অচেনা বিদেশিদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ লেখা টা পর্যবেক্ষনের চেষ্টা করি, নাহ বোঝা যাচ্ছে ভালোই, গোটা গোটা অক্ষরে “Made in Bangladesh” ৷ চোখে পড়বেই পড়বে, একদিন দুই দিন তো আর গায়ে দিবেনা, চোখে পড়বেই লেখাটা ৷ তাদের আগ্রহ কি হবে? দেশ টা কেমন? একটু জানি ৷ ডিই উইকিপিডিয়াতে একটু ঢু মেরে দেখি ৷ আদতে আমরা ক্ষুদ্র একটা দেশের বড় সংখ্যার মানুষ ৷ আমাদের গায়ের চামড়া মুখের আকৃতি দেখলে এরা মোটামুটি নিশ্চিত থাকে আমরা হয় ইন্ডিয়ান নয়তো পাকিস্তানি ৷ কিন্তু যখন ই বলি না জ্বি না আমি বাংলাদেশি ৷ বাস্তবে দেখা যায় তারা ভ্রু কুচকে এমন একটা ভাব করে, এটা শোনার জন্য হয়তো অপ্রস্তুত ছিল ৷ তখন খুব দুঃখ হয়, নিজেকে অস্তিত্বহীন মনে হয় ৷
আসলে বাংলাদেশ নামটা সম্পর্কে পাড়া গায়ে বাস করা কম শিক্ষিত ভিনদেশি মানুষদের এখনো ধারনা কম ৷ মনে খুব আশা জাগে, তাদের পরনের পোশাক গুলার মধ্য দিয়ে হলেও আগে ভাগে জেনে নিবে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ আছে, এরপর আমাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো আর অপ্রস্তুত থাকবেনা; চমকে যাবেনা,অচেনা অজানা কোন নাম হঠাৎ শুনে ফেলেছে ৷ বাংলাদেশ নামটা শুনে অল্প সময়ের জন্য হলেও কল্পনা করবে, তাদের গায়ের টিশার্টটি তৈরী হয়েছে, পড়নের প্যান্ট, কাধের ব্যাগটা তৈরী হয়েছে, আমার বাংলাদেশে, আমাদের বাংলাদেশে ৷
মাহবুব মানিক
গবেষনা সহকারী
ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লাইড সাইন্স, মারসেবুর্গ ৷
হালে (জালে)
স্যাক্সোনী আন হাল্ট
জার্মানী ৷
Facebook ID:www.facebook.com/mahbub.manik1
লেখকের মতো আমিও এই আমার ৩৫ বছরের প্রবাস জীবনে ব্রেন্ড শপ গুলোতে মেইড ইন বাংলাদেশ খুজি !!!
কালাম ভাই, আপনার থেকেও আমরা লেখা আশা করছি। আশা করি আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সবার সাথে ভাগ করে নিবেন। 🙂