ভাগ্যক্রমে পাশ করার কিছু দিনের মধ্যে দুইটা চাকরির অফার পাই। একটা দেশের নামকরা আরএমজি কোম্পানীতে অন্যটি ডিবিএল গ্রুপে। প্রথমটায় প্রধান দায়িত্ব হল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং টুল ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো আর দ্বিতীয়তায় ফেব্রিক ডাইয়িং এর প্লানিং ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা। ডিবিএলে বেতন ১৮০০০ টাকা অন্যটিতে ২০০০০ টাকা। প্রথমটিতে আমি আর বাবু , দ্বিতীয়টিতে আমি, বাবু, মিথি আর শর্মি নিয়োগপত্র পাই।

আমি আর বাবু পড়ে গেছি দ্বিধায়। দুইবন্ধুর কথোপকথন নিম্নরূপ:
আমি: চল, আমরা প্রথমটাতে জয়েন করি। মাসে দুইহাজার আর বছরে ২৪ হাজার টাকা বেশি পাওয়া যাবে।
বাবু: ঠিক কইছস, কিন্তু ডিবিএলে যাতায়াতের জন্য গাড়ি দেবে, আর অন্যটাতে লোকাল বাসে করে আশুলিয়ায় যেতে হবে।
আমি: তা ঠিক, শুনেছি শর্মি আর মিথিও ডিবিএলে কাজ করবে, চার সহপাঠী কাজ করলে অফিসকে ক্লাসরুম মনে হবে, কিন্তু ওরা নিয়োগ দেবে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে আর আশুলিয়ায় স্ট্যাটাস হবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার!
বাবু: ডিবিএলে কয়েকজন সিনিয়র আছে তার উপর আমাদের ডিপার্টমেন্টের সাথে ভাল খাতির আছে ওদের। চলতো, ঐখানেই জয়েন করি, কি আছে জীবনে!

বছরে ২৪ হাজার টাকা বেশি পাওয়ার মায়া ত্যাগ করে ডিবিএলে জয়েন করি আমরা। প্রথম সপ্তাহেই গাড়ি আর ডেস্ক পেলাম। একমাস ধরে তাদের স্পিনিং, নিটিং, ডাযিং আর গার্মেন্টস সেকশনের সাথে পরিচিত হলাম। ট্রেনিং এর ফাকে ফাকে একজন আইটি ম্যানেজার খুশি মনে আমাকে এক্সেল প্রোগ্রামিং শেখাতেন। গোটা বুয়েট জীবনে দুই একবার এক্সেলে বেসিক লেভেলে কাজ করেছিলাম। ধীরে ধীরে প্রোগ্রামিং এর প্রতি একটা ভাল লাগার জন্ম নিল।

এরপরে আমি আর বাবুকে ডাইয়িং এর দুই শাখায় প্লানিং এর দায়িত্ব দেওয়া হল। আমাদের দুইজনের বস হচ্ছেন ফরহাদ ভাই। উনি আমাদের চার বছরের সিনিয়র ছিলেন। একটু গম্ভীর স্বভাবের বন্ধুপ্রতীম মানুষ তিনি। পুরো প্লানিং এক্সেলে করতে হবে। ফরহাদ ভাই আমাদের আইডিয়ার গুরুত্ব দিতেন। ফলে কাজটা একটু জটিল হলেও মনের আনন্দে করতে লাগলাম। বুয়েটে যেখানে সি প্রোগ্রামিং কে যমের মত লাগত, সেখানে প্রোগ্রামিংর প্রেমে পড়ে গেলাম, যদিও এক্সেল আর সি আলাদা জিনিস। যতদিন সেখানে ছিলাম, অনেক ভালো লাগত কাজ করতে।

১০ মাস পরে জার্মানীতে আসার সুযোগ পাই। প্রোগ্রামিংটাকে আরো ভাল করে রপ্ত করতে মেকাট্রনিক্সকে মেজর করে মাস্টার্স করি। ভালই আছি এখন। কাজকে খেলা মনে হয়, একেই বোধহয় জব স্যাটিস্ফেকশন বলে।

শিক্ষা: প্রথম চাকরি আর কর্মস্থল অনেক দামি জিনিস যেটাকে টাকা দিয়ে বিচার করা যায় না। ২৪ হাজার টাকার মায়া ছাড়তে না পারলে হয়ত আজকের এই গল্প লেখা হতো না

mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

Leave a Reply