জার্মানীতে নবাগত ছাত্রদের আবাসন সমস্যা ও আয়নাবাজি

১. আমার মরহুম দাদা একটা গল্প বলেছিলেন।

রাজা মশাই খেয়ালের বশে একবার এক নিরীহ বয়স্ক রাজ কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করলেন- পৃথিবীর সবচেয়ে মজার খাবার কোনটি?
কর্মচারী বললেন- হুজুর, ‘জাউ’। এই জাউ খেয়ে আমি একবার যে মজা পেয়েছিলাম!
রাজা মশাই নিজ কক্ষে আহারান্তে রাতে ঘুমানোর পূর্বে রাণীকে বললেন- কাল সকালে তার জন্য পরিচারিকারা যেন ‘জাউ’ রান্না করে।
হুকুমমত পরেরদিন সকালে জাউ রান্না করে রাজা মশাইকে খেতে দেওয়া হয়েছে। রাজামশাই মুখে দিলেন। একি! এ খাবারে কোন মসলা নাই, স্বাদ নাই। নুন নাই। আইল্যা আইল্যা লাগছে।
এ্ই খাবার নাকি পৃথিবীর সেরা খাবার। তাহলে কি কর্মচারীটি আামার সাথে মশকরা করেছে – রাজার মনে প্রশ্ন?
রাজামশাই ডাকালেন সেই কর্মচারীকে। ক্রোধের সাথে জানতে চাইলেন- এই খাবার কেমনে পৃথিবীর সেরা খাবার? আমি খেতে গিয়ে…..
কর্মচারী বললেন- রাজামশাই, আপনি জাউ কখন খেয়েছেন?
-আজ সকালে।
-কাল রাতে কি অন্য কিছু খেয়েছিলেন?
-হা, অন্যান্য রাতের মত কালকেও খেয়েছি।
– কিন্তু রাজামশাই, আমি দুই দিন কোন খাবার না পেয়ে না খেয়ে থাকার পর জাউ খেয়েছিলাম!

বোরিংগার ইংগেলহাইম ফাউন্ডেশনের বৃত্তি - Boehringer Ingelheim Fonds scholarship

 

২. গত ০২/১১/১৬ইং তারিখে স্টুডেন্ট ডর্মে আমার নিজের রুমে উঠেছি। এতদিন আমি অন্যত্র দুইটি স্টুডেন্ট ডর্ম ও একটি বাসায় ছিলাম। জার্মানীতে ছাত্রদের আবাসন সংকট মারাত্বক। এ বছর ছাত্রদের আবাসন সংকট নাকি সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে Bonn-এ। বাংলাদেশের পাবলিক ভার্সিটি মানেই কিছু আবাসিক হল। আর তাতে প্রায় ফ্রি-তেই থাকা যায়। তাতেই তো আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এখানে স্টুডেন্ট ডর্মে টাকা দিয়ে থাকতে হবে। প্রতিটি কক্ষের জন্য সুযোগ সুবিধার ভিত্তিতে মোটামুটি ২০০- ৫০০ ইউরো মাসিক ভাড়া।

আসার পর স্টুডেন্ট ডর্মের অফিসে গেছি রুমের জন্য।
-আপনি রুমের জন্য এ্যাপ্লাই করেছেন কবে?
– গত জুলাই মাসে, বাংলাদেশে থেকে।
চেক করে বললেন- আপনার আগে আরো অনেক আবেদনকারী আছেন। এই মুহুর্তে কোন রুম খালি নাই। আপনার সিরিয়াল আসলে জানানো হবে।

এক সপ্তাহ পর আবার গেলাম। তেমন কোন ভালো খবর নাই।

এই স্টুডেন্ট ডর্মে রুম পাওয়ার জন্য অনেকেই নাকি অভিনয় করে। যেমন – লাগেজ টাগেজ নিয়ে স্টুডেন্ট ডর্মের অফিসে ঢুকে বলে- ‘আমার থাকার কোন জায়গা নেই। আমার আজকেই রুম দিতে হবে’।

এই অভিনয়ে কাজ হয় কি না- সন্দেহ? আমারও ছিল। তবে অভিনয়ে কাজ হয় রে ভাই।

আামাকে আমার ক্লাসমেট বাংলাদেশি একজন ফ্রেন্ড বুদ্ধি দিলেন- আপনার যেহেতু স্কলারশীপ আছে, আপনি স্টুডেন্ট ডর্মের অফিসে একটু শক্ত কথা বলেন।

আয়নাবাজী একটু করে দেখা যাক।

গেলাম স্টুডেন্ট ডর্মের অফিসে। তাদের গল্প একই- হাতে রুম নাই। বললাম- আমি এতদিন হোটেলে ছিলাম। বাংলাদেশ থেকে সঙ্গে আনা সমস্ত ইউরো খরচ হয়ে গেছে। আমার Permanent address না থাকার কারণে জার্মানীতে আমি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারি নাই। তাই আমি আজো স্কলারশীপের টাকাও তুলতে পারি নাই। আমার হাতে কোন টাকা নাই। তাই আমাকে কালকে থেকে না খেয়ে থাকতে হবে। রুম না পাইলে বাংলাদেশে ব্যাক করা ছাড়া আমার উপায় নাই।
আয়নাবাজি কাজে লাগল। খোজাখুজি করে রুম একটা বের করে দিলেন।

student-dorm

জার্মানীতে পেীছানোর পর Accommodation নিয়ে গত ১ মাস কত যে টেনশন করেছি, তা আমার মত ভুক্তভোগী প্রতিটি ছাত্রই জানেন। যদি কেউ প্রশ্ন করে- জার্মানীতে আপনার সবচেয়ে আনন্দের দিন কোনটি?

এই নিরীহ ছাত্রের উত্তর- সেই দিন যেদিন আমি নিজের রুম পাইলাম। আরে ভাই, আমার ইদের দিন। আহা, কত শান্তি!

যেসব ছাত্র ভাইবোনেরা জার্মানীতে পা দিয়েই কপালগুনে রুম পেয়ে গেছেন কিংবা নিকট আত্ত্বীয়স্বজনের বাসায় থেকেছেন, তারা বুঝবেন না আমার শান্তি। রাজামশাই বুঝেন নি ‘জাউ’ এর স্বাদ!


Written by  Matiur Rahaman
mm

By Matiur Rahaman

Deputy Inspector General at Department of Inspection for Factories and Establishments। Studied English at University of Dhaka। বর্তমানে স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানিতে আছি।

Leave a Reply