আমি যে ইউনিভার্সিটি তে কাজ করি, সেই শহরের মেইন ট্রেন স্টেশন থেকে বাসে করে ভার্সিটিতে যেতে হয়, দুরত্ব দশ মিনিটের ৷ এমনিতে সাধারনত বাসের মধ্যে টিকেট চেকার উঠেনা, তবে আজ দেখলাম দুজন উঠেছে ৷ হাতে স্ক্যানার মেশিন নিয়ে স্ক্যান করে করে টিকেট চেক করছিল ৷ এর মধ্যে লক্ষ্য করলাম একজন চিকন কালো লোক বাসের মধ্যে দড়ি ধরে দাড়িয়ে চোখ পিট পিট করে ঘুমের ভাব ধরেছিল ৷ আফ্রিকা মহাদেশের কোন দেশের হবে, হয়তো শরনার্থী ৷ প্রথমেই বুঝে গেছিলাম, তার কাছে টিকেট নাই ৷ এক্টিং করে বাঁঁচার ট্রাই করছে ৷

টিকেট চেকার তার কাছে গিয়ে আস্তে করে কানের কাছে ফিস ফিস করে টিকেট টা দেখাতে বললো, ঐ লোক দেখলাম মাথা নিচু করে সমানে চোখের পলক ফেলছে কিন্তু এমন ভাব ধরে আছে যেন মনে হয় উনি ঘুমাচ্ছে ৷ বাইরে থেকে দেখলে গভীর ঘুম ই মনে হবে ৷ আমি তার সামনেই বসে থাকাতে, নিচ থেকে চোখের পলক ফেলার ব্যাপার টা লক্ষ করতে পারছিলাম, এমন ভাব যেন কিছুই টের পাচ্ছেনা ৷ যখন দেখলো লোকটার ঘুম ভাঙ্গছেনা, টিকেট চেকার তাকে পাশ কাটিয়ে অন্য জনের কাছে চলে গেল, আমি ভাবলাম হয়তো লোক টাকে ছেড়ে দিলো ৷ কিন্তু না ৷ কিছুক্ষন পরেই ঐ চেকার আবারো তার কাছে এসে চোখের সামনে হাত নাচিয়ে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করলো, কাজ হলোনা ৷ লোকটা চেকার কে পাত্তাই দিচ্ছেনা ৷ অন্য যে টিকেট চেকার যে ছিল, এবার সে আসলো, একটু ভল্যুম বাড়িয়ে ডাকলো, টিকেট চাইলো প্রথমে জার্মানে পরে ইংলিশে ৷

মিনিট পাচেঁক টিকেট চেকারদ্বয় পুনরায় টিকেট চেকে ব্যস্ত ৷ সবার কাছে টিকেট দেখা শেষ ৷ এদিকে লোকটাকে লক্ষ্য করলাম ওভাবেই ঘুমের ভাব ধরে পড়ে আছে ৷ একজন চেকার ড্রাইভারের কানে কানে কিছু একটা বললো, ড্রাইভার ওয়ারলেসে কারো সঙ্গে কিছু কথা বললো, বাস টা একটা স্টপেজে দাড়িয়ে গেল ৷ গেট লক করে দিলো ৷ টিকেট চেকার ঘুমের অভিনয় করা ঐ লোকের দু পাশে দাড়িয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করছে, লোকটার হুশ ফিরেছে, তার ষড়ইন্দ্রিয় বলছে কিছু একটা বিপদ ঘটতে চলেছে ৷ তার অভিনয়ের পরিধি বেড়ে গেল, পাগলামী শুরু করলো, বাসের মধ্যে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরাতে যাচ্ছিল, যদিও জার্মানীতে যানবহনে সব ধরনের ধুমপান নিষিদ্ধ ৷ টিকেট চেকারদের একজন তাকে ইংলিশে নিষেধ করলো, বললো সিগারেট খাওয়া যাবেনা ৷ কালো লোকটা তাদের পাত্তাই দিচ্ছিলোনা ৷ সে সিগারেটের প্যাকেট সিটের নিচে ছোট ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে গেটের সুইচ টিপা শুরু করলো, উনি বুঝতে পারছে হাওয়া খারাপ ৷ এদিকে ড্রাইভার সব গেট লক করে রেখেছে, সে অনবরত সুইচ টিপে কোন ভাবেই আর দরজা খুলেনা, শেষে আবারো ঘুমের ভাব ধরলো ৷

ticket-germanprobashe

চেকার দুজন চুপ করে দাড়িয়ে, ঠিক গুনে গুনে মিনিট পাচেঁক পরেই নীল পোশাকে ষন্ডা মার্কা দুটো লোক হুটোপাটা করে চলে আসলো, ড্রাইভার দরজা খুলে দিলো, কিসের ঘুম কিসের স্বপ্ন, দুই হাতে মুঠো করে ধরে টানতে টানতে বের করে নিয়ে গেলো ৷ ঐ লোক দুটোর নীল পোশাকে পোলিৎসাই লেখা ছিল, মানে তারা পুলিশ ছিল ৷ একজন তাকে বের করে ধরে রাখলো, অন্যজন ঐ ডাস্টবিনে ও কি ফেলছে সেটা খুজে খুজেদেখতে লাগলো, বোম টোম আছে কিনা ৷ যাই হোক নাটকের এখানেই সমাপ্তি ঘটলো পুলিশ, টিকেট চেকার ও তাদের আসামী নিয়ে নেমে গেল, আমাদের বাস ছেড়ে দিলো ৷ আমি আমার অফিস রুমের ডেস্কে বসে ঘটনা লিখছিলাম ৷ কাহিনী শেষ করলাম, এখন পোস্ট করে দিলাম ৷😊

mm

By Mahbub Manik

Scientific researcher at Hochschule Merseburg and Ph.D. student at Martin Luther University of Halle-Wittenberg, Germany.

Leave a Reply