বিড়ম্বনা থেকে অপমান
১. জার্মানীরা নাক উচু জাতি। নিজেদেরকে সেরা ভাবতেই হয়ত পছন্দ করে। তবে তার মানে নয় যে ওরা অন্যকে অবজ্ঞা করে। বরং খুব হেল্পফুল। যদিও পৃথিবীর সবচেয়ে হেল্পফুল জাতি কারা, তা আমার জানা নেই। তবে, আমার আব্বা জাপানে ছিলেন। তার একটা উক্তি ছিল- জান্নাতে নিলে সবার আগে জাপানীদের নেয়া উচিত। তারা সেই রকম হেল্পফুল, ভদ্র।
২. এই জার্মান দেশে ইংরেজি দিয়ে চলা যায়। চলে যায় আর কি! কতটুকু ভালো চলে, যারা চলেন, তারাই ভালো জানেন। বেশিরভাগ জার্মান মানুষ হয়ত ইংরেজি বলতে পারেন। অনেক ভালো ইংরেজি বলেন। আমাদের চেয়ে অনেক ভালো। কিন্তু আপনি যদি ইংরেজিতে বলতে বলেন, তিনি বলবেন- My English is very poor. I can speak English very little. এই বলাটার মধ্যে বিনয় রয়েছে। -আমাদের মধ্যে কেউ কিছু পারলে, সেটাকে ১০ গুণ বাড়িয়ে জাহির করি। আর ওরা ভালো ইংরেজি জেনেও কতটা বিনয়ী। আমি খুব বিস্মিত হই।
৩. জার্মানরা খুব বিনয়ী। কিন্তু দেশপ্রেমের জায়গায় কঠিন। সেখানে আপনাকে ছাড় দিবেন না। ওরা ইংরেজি সহজে বলবে না। এই জার্মানে চলতে গেলে, থাকতে গেলে – আপনি অনবরত সিগন্যাল পাবেন- জার্মান ভাষা শেখো। প্রতি পদে পদে এই মেসেজ পাবেন। ইংরেজি মিডিয়ামে আপনার মাস্টার্স কিংবা উচ্চতর পড়াশুনা? ভাবছেন- ইংরেজি দিয়েই চলে যাবেন, চলতে পারবেন। তবে তা কতটুকু স্বচ্ছন্দে, সময়ই বলে দিবে।
৪. জার্মানীতে পা দেবার পর প্রথম কাজ ছিল ভর্তির জন্য আমার ভার্সিটির সেমিস্টার ফি দেয়া। ২য় কিংবা ৩য় দিন। ব্যাংক একাউন্ট নাই। গেলাম Sparkasse নামক ব্যাংকে। ভার্সিটির একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করব। ব্যাংকের বুড়ি ইংরেজি বলে না। শেষ অবধি ঠিকই ইংরেজি বললেন। কাজও হলো। বলছিলাম না? সিগন্যাল পাবেন- জার্মান শেখো।
প্রায় এক-দেড় মাস পর সিটি রেজিস্ট্রেশন অফিসে গেছি। মহিলা অফিসার জার্মান বলছেন। আমি ইংরেজিতে বলতে বলায়- উনি হেসে হেসে ইংরেজিতেই বলছেন- ‘আমি ছোটকালে ইংরেজি শিখেছিলাম। এখন ভুলে গেছি’। অথচ উনি নিশ্চিত ভাবেই ভালো ইংরেজি জানেন।
এভাবেই জার্মানরা আমাদের অনবরত সিগন্যাল দিচ্ছেন- ‘জার্মান শেখো।’ ভদ্রভাবে সিগন্যাল দেন। কিন্তু দিন কয়েক আগে সিগন্যালের ভাষাটা একট বেশি কর্কশ মনে হলো। রীতিমতো অপমান মনে হলো। একটি জায়গায় ইংরেজিতে কিছু জানতে চাওয়ায় ভদ্র মহিলার ক্রুদ্ধ প্রতি-উত্তর-
It’s not England, it’s Germany.