বেশ চিন্তায় ছিলাম ভিসা ইন্টারভিউ নিয়ে। মাসখানেক হলো গ্রুপ এ এবং এই ব্লগে বিভিন্ন ভাইয়া আপুদের ভিসা ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেয়া পোস্টগুলো ফলো করছিলাম। এতে করে অনেক সুবিধা হয়েছে, কি ধরনের প্রশ্ন করতে পারে বা কি কি অসুবিধা হতে পারে এগুলো বিষয়ে একটা আইডিয়া পেয়ে গিয়েছিলাম। অসুবিধাও হয়েছে একটু, এত লম্বা লম্বা আর প্রশ্নবহুল ইন্টারভিউ দেখে ভয়ই পাচ্ছিলাম, কি হয় না হয়। বেশি চিন্তায় শেষমেশ কোন পড়াশোনা বা বাড়তি প্রিপারেশন না নিয়েই চলে গেলাম ইন্টারভিউ দিতে। আর কথা না বাড়িয়ে কাজের কথায় যাই।
ইন্টারভিউ এর সময় ছিল ১৩ই আগস্ট সকাল ৯.৩০ টায়। এমব্যাসি পৌছে গিয়েছিলাম ৩০ মিনিট আগেই। বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ৯.৩০ টার কিছুক্ষণ পরেই আমার নাম ডাকলো। মোবাইল গেইটে রেখে, চেকিং সেরে ভিতরে ঢুকলাম।
ডয়েচ ব্যাংক এর একাউন্ট খোলার জন্য এর আগেও গিয়েছিলাম এমব্যাসি। তবে প্রথমবার কেউ গেলে একটু অবাক হতে পারেন দেখে। অনেকটা জেলখানায় আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করার জায়গা মনে হয় দেখে। দরজার উল্টোদিকেই ইট পাথরের দেয়ালে কাঁচ দিয়ে আটকানো জানালা, পাশাপাশি ছয়টা পার্টিশন করা। ওগুলো হলো একেকটা কাউন্টার, কাচের ঐ পাশে বসে ভিসা অফিসার, আর আপনি এই পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইন্টারভিউ দিবেন। ১-৩ নম্বর কাউন্টার হলো ফ্রেঞ্চ ভিসার জন্য, আর ৪-৬ নম্বর কাউন্টার জার্মান ভিসার জন্য। আর সামনেই অনেকগুলো চেয়ার আছে, যেখানে আপনাকে ২-৩ ঘন্টা কাটানো লাগবে।
ভিতরে ঢুকার পর প্রথম কাজ হলো হাজিরা দেয়া। একজন কর্মচারী গেইট এর কাছে দাঁড়িয়ে থাকবে নামের তালিকা নিয়ে, তার কাছে নাম জানালে সে আপনার হাজিরা নিবে এবং আপনাকে একটা ডকুমেন্ট লিস্ট দিয়ে দিবে। আপনার দ্বিতীয় কাজ হলো এই তালিকা অনুযায়ী অরিজিনাল ও ২ সেট ফটোকপি, মোট ৩ সেট ডকুমেন্ট সিরিয়াল মতো গুছিয়ে ফেলা। গুছানো শেষ হলে ঐ কর্মচারীকে জানাবেন, সে তখন আপনার কাগজপত্র নিয়ে ৪-৬ নম্বর কাউন্টারের যেকোন একটায় দিয়ে দিবে। এবার অপেক্ষার পালা।
প্রায় ২.৩০ ঘন্টা বসে থাকার পর ১২টায় আমাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকে। এতক্ষণ বসে থাকা খুবই টায়ারিং, কথা বলার ইচ্ছা আর থাকেনা, বিরক্তি চলে আসে। এজন্য চেষ্টা করবেন সকালে ভালো-মন্দ খেয়ে যেতে, যেন অনেকক্ষণ পর্যন্ত এনারজাইজড থাকতে পারেন এবং চেষ্টা করবেন অন্য আরেকজনের সাথে কথা বার্তা বলে চাঙা থাকতে। আর ইন্টারভিউ কিন্তু দেয়া লাগবে ইংরেজিতে। সুতরাং খুবই ভালো হয় যদি অন্য আরেকজন স্টুডেন্টকে কনভিন্স করে দুজন ইংরেজিতেই কথা বলেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আপনাকে যেমন প্রশ্নই করুক না কেন, এই কাজটা করলে আপনার কনফিডেন্স লেভেল অনেক বেড়ে যাবে উত্তর দেয়ার সময় এবং ইন্টারভিউ তুলনামূলক ভালো হবে।
যাই হোক, আমার ইন্টারভিউ এর কথায় আসি। যা যা কথা হয়েছে যথাসম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
VO: Good morning!
Me: Good morning ma’am.
VO: Mr. Ishtiaque?
Me: Yes.
VO: (Passing me my original documents, passport and one application form) Please write “I have received my passport and documents” and give your signature.
Me: (Wrote it and signed on the application form’s “for official use only” section)
VO: (Passing me the money receipt) 5600 tk please.
Me: (Passed the money)
VO: Thank you. Did you complete your bachelors and masters in Bangladesh?
Me: Only bachelors.
VO: From which university?
Me: MIST.
VO: But your certificate says Bangladesh University of Professionals.
Me: Yes, that’s because MIST is registered under Bangladesh University of Professionals.
VO: Yes, right. Now I remember. MIST is a good university.
Me: Yes ma’am.
VO: Okay, what is the name of your masters course?
Me: Mathematical Modeling of Complex Systems.
VO: How many semesters and credits do you have to complete in this course?
Me: It has 4 semesters and a total of 120 ECTS credits.
VO: You completed your bachelors in Mechanical Engineering?
Me: Yes.
VO: So, which sector do you want to specialize in?
Me: Robotics and Control Engineering.
VO: Alright. What was your major in bachelors?
Me: We don’t have any major in Mechanical engineering. We have various elective courses in final year, which we can select depending on our specialization choice. In my case, my elective courses were Robotics, Control engineering, Automotive engineering etc.
VO: Can you tell me the names of some courses you will be taught in masters?
Me: Yes. There are various modules like, Applied Differential Equations, Physics in applications, Autonomous mobile systems, Robotics and Computer Vision, Optimization etc. There are also some elective courses and seminars.
VO: Have you done any thesis? Or projects?
Me: Yes, I have worked on various projects since the beginning of my bachelors and also done a thesis in the final year.
VO: What was the topic of your thesis?
Me: It was “design and fabrication of a vapor absorption refrigeration system for vehicle cabin cooling”. In this thesis project my job was to design a control system using sensors and valves at various points.
VO: What were you controlling using this control system?
Me: We were controlling the temperature and pressures at various points. There were many pumps and valves. We were taking the data from temperature and pressure sensors and controlling those pumps and valves. Basically all kinds of refrigeration systems are controlled by these two parameters. There are many control systems available for Vapor compressor systems. But I wanted to make one for vapor absorption system within low cost so that the system can run efficiently.
VO: Okay. So tell me, if I want to make a robot, which components do I need to use?
Me: There are basically three components of the system. At first I need to give some input to the robot. For that we use various sensors. For example, in a line follower robot, we need to use LDRs. I also made a Gesture controlled robotic arm, where I used Flex sensors to give the input. After that we need a control system to process that data. We can use Arduino or simple PCB with micro-controllers to do that. After that we need to give output depending on the data, which is carried out by various motors or actuators. So, these three are the major components of a robot, Input, a controller and Output.
VO: Thank you Mr. Ishtiaque. Please give your fingerprints now.
Me: (Gave fingerprint in this serial – Right hand four fingers, left hand four fingers, both hands thumbs together)
VO: Thanks. Did you get your passport?
Me: Yes.
VO: Okay. It’ll take about 6 to 8 weeks to process this.
Me: My last date of enrollment is 16th October, will I get it before that?
VO: I don’t think it will take that long, you will get it sooner than that.
Me: Thank you!
আমার প্রথম দিকের উত্তরগুলো খেয়াল করলে দেখবেন ২-১ শব্দে দায়সারাভাবে উত্তর দিচ্ছিলাম। আর শেষের দিকে এসে গুছিয়ে উত্তর দিয়েছি। এর মূল কারন হলো ঐ ২.৩০ ঘন্টা বসে থাকা। ২.৩০ ঘণ্টা বসে বসে ঝিমালে আর ইন্টার্ভিউ দেয়ার এনার্জি বা মোটিভেশন থাকেনা। এজন্য না ঝিমিয়ে, আপনার সাথে অপেক্ষা করতে থাকা কারো সাথে কথা বলুন, ইংরেজিটা ঝালাই করে নিন, দেখবেন ইন্টারভিউ এর প্রথম লাইন থেকেই কনফিডেন্টলি কথা বলতে পারছেন। আর ভিসা অফিসার শুধু দেখতে চায় আপনার পূর্ববর্তী পড়াশোনার সার্টিফিকেট বা ট্রান্সক্রিপ্ট এ যা যা লিখা সেগুলো সত্য নাকি, আপনি রেগুলার স্টুডেন্ট নাকি। অনেকদিন আগে পড়া সব জিনিস, ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, তাই বলে আপনার সাবজেক্ট এর বেসিক কিছু প্রশ্নের উত্তর যদি দিতে না পারেন বা আপনার থিসিস এর টপিকটাও পরিষ্কার করে বলতে না পারেন, তখন আপনাকে এটা শুনা লাগতে পারে যে আপনার সার্টিফিকেট আসল নাকি। এরকম লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে না চাইলে হাল্কা কিছু প্রস্তুতি নিয়ে যাবেন।
আরেকটা বিষয় হলো, ভিসা অফিসার প্রশ্ন করলেও ইন্টারভিউটার চালক কিন্তু আপনি। কনফিউজড? এর মানে হলো, আপনার ব্যাচেলর বা মাস্টার্স কোর্স নিয়ে এবং যে বিষয়ে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন সেটা নিয়ে ভিসা অফিসারের চেয়ে আপনার জ্ঞান বেশি। উনাকে আপনি যেই কাগজপত্র দিয়েছেন তার উপর বেইজ করে আপনাকে প্রথম ৩-৪টা প্রশ্ন করবে, যেগুলো না পারার কোন কারণ নেই। এরপরের প্রশ্নগুলো হবে আপনি যা উত্তর দিচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে। আপনি কিসে স্পেসালাইজ করতে চান, কোন লাইন এ চাকরি করতে চান, পরিষ্কার করে বলুন। আপনার কোন বিষয়ে কনফিডেন্স বেশি, কি নিয়ে কথা বলতে পারেন খুব বেশি চিন্তা না করেই, সেগুলো পরিষ্কার করে বলুন। দেখবেন আপনার দেখিয়ে দেয়া পথে, আপনার সুবিধামতো বিষয়ে প্রশ্ন করছেন ভিসা অফিসার। এমন কোন কথা বলবেন না যেটায় আপনার জ্ঞান সীমিত, সেখান থেকে উলটাপালটা প্রশ্ন করে বসলে বিপদে পড়বেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, কনফিডেন্ট থাকবেন। আপনি সত্যি স্টুডেন্ট তো? পড়াশুনা করতেই যাবেন জার্মানি? সব কাগজপত্র অথেনটিক? তাহলে আপনার ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। নার্ভাস না হয়ে কনফিডেন্টলি সব প্রশ্নের উত্তর দিন, দেখবেন তাড়াতাড়ি আপনার ইন্টারভিউ শেষ। যারা বেশি ভয় পেয়ে, নার্ভাস হয়ে কোন প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারেনা, তাদের আরো বেশিক্ষণ ধরে একটার পর একটা প্রশ্ন করে যায়। সুতরাং, সব মিলিয়ে যেটা বলা যায়, আপনার ইন্টারভিউটা কেমন হবে, কতক্ষণ হবে, কিকি প্রশ্ন করা হবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলোর নির্ধারক আপনি নিজেই।
ভিসা ইন্টারভিউ সম্পর্কিত সকল পোস্ট
আশা করি আমার ইন্টারভিউ অভিজ্ঞতা ও রিয়ালাইজেশনগুলো অন্য কারো উপকারে আসবে। ধন্যবাদ পুরোটা পোস্ট পড়ার জন্য। বেস্ট অফ লাক!
আপডেট, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ঃ
১০ সেপ্টেম্বর ইমেইল এর মাধ্যমে ভিসা রেডি হওয়ার খবর জানায় এমব্যাসি থেকে। পাসপোর্ট ও ভিসা ফি দেয়ার রিসিপ্ট নিয়ে যেতে বলা হয় যেকোন ওয়ার্কিং ডে তে, দুপুর ২টায়। দেরি না করে পরেরদিনই চলে যাই। আগের মতই সব সিকিউরিটি পেরিয়ে ওয়েটিং রুম যেয়ে বসলাম। পাসপোর্ট আর রিসিপ্ট নিয়ে ভিতরে পাঠালো। ১৫ মিনিট এর মধ্যেই ডেকে পাসপোর্ট ফেরত দিল ভিসা সহ। ভ্যালিডিটি আগামি বছর মার্চ মাস পর্যন্ত। সবাইকেই ছয় মাসের ভিসা দেয়া হয়। সুতরাং ওটা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না 🙂 বাকি ব্যবস্থা জার্মানি যেয়ে করতে হয়। আল্লাহ্র রহমতে মাত্র ২৭ দিনে ভিসা পেয়ে গেলাম। ইনশাল্লাহ অক্টোবর এর প্রথম সপ্তাহে ফ্রাঙ্কফুর্ট এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো। সবাই দোয়া করবেন, ভালো থাকবেন 🙂
Valo chilo vai.