Disclaimers:
শুরুতেই একটু বলে দেওয়া ভালো, aptitude test পাস করার কোন নির্দিষ্ট উপায় আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি শুধুমাত্র আমার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করব, যদি কারো উপকার হয়। সুতরাং, এই লেখাটিকে aptitude test উত্তোরনের পদ্ধতি হিসেবে ধরে নিবেন না। তাছাড়া প্রত্যেক কোর্সের জন্য এই পরীক্ষা লাগে না। শুধুমাত্র, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের আবেদনকারীর যোগ্যতা হিসেবে aptitude test-এর কথা উল্লেখ করা আছে।
———————————————————————————————————————–
প্রথমেই আসি, aptitude test কি জিনিস – এটা খায় না মাথায় দেয়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সোজা বাংলায় বললে, আপনার ভেতরে কি আছে এটা পরীক্ষা করা হয় aptitude test- এর মাধ্যমে। আপনি বিশেষ কোন বিষয়ে ঝুনো নারকেল না মাকাল ফল, পরীক্ষকরা এটাই বের করার চেষ্টা করেন। অনেক সময় অনেক আবেদনকারীর মধ্যে ভালো শিক্ষার্থী খুঁজে বের করতে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিশেষ করে, আর্টসের সাবজেক্ট গুলোতে aptitude test বেশি দেখা যায়। কারণ, এসব বিষয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থীর চিন্তা-ভাবনার পদ্ধতি , তার পরীক্ষার ফলাফল থেকে বেশি গুরুত্ব পায়।
এবার বলি, aptitude test কিভাবে নেওয়া হয়। আমি দুইটা aptitude test দিয়েছিলাম, দুইটাতেই তিনটি করে ধাপ অতিক্রম করতে হয়েছিল – পোর্টফোলিও সাবমিশন, অ্যাসাইনমেন্ট/টাস্ক/অনলাইন পরীক্ষা এবং ইন্টারভিউ (অনলাইন অথবা ডিরেক্ট)। আবেদনের বিষয়ভেদে ধাপের সংখ্যা কম হতে পারে।
এবার আসি নিজের কথায় (এখন থেকে ভাবের শুরু, বেশি ভাব নিচ্ছি মনে হলে মাইন্ড করবেন না। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)। আমি বুয়েটে পড়াশোনা শুরু করি ২০০৯ সালে। ইন্টারে প্রবাহী পদার্থ আর বলবিদ্যা করতে বেশ বেগ পেতে হত। বুয়েটে আমার অবস্থা ছিল “পড়বি তো পড় মালির ঘাড়েই”। এমন একটা বিষয় নিয়ে শুরু করছি যার মূল টপিকস এই দুইটা – প্রবাহী পদার্থ ও বলবিদ্যা। ফলাফল, ডাব্বা পেতে শুরু করলাম। ওদিকে অনেক আগে থেকেই ফিল্ম, গেম ইত্যাদি নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। বুয়েটে আমার মতো কিছু বন্ধু পেলাম যাদের আগ্রহ আমার মতই। নিজেরাই নিজেদের মত করে গল্প বলা শুরু করলাম, গেম বানালাম। কিছুদিন চাকরিও করলাম। কিন্তু মনে হল, এভাবে অল্পবিদ্যা দিয়ে আর কতদিন? সুতরাং, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী হয়ে ওঠার আগেই কোর্স খুঁজতে শুরু করলাম। আমেরিকা, কানাডাতে পছন্দের বিষয় পেলেও স্কলারশিপ নাই, টিউশন ফীও অনেক (একটাতে দেখছিলাম ৮৪ হাজার ডলার/সেমিস্টার)। জার্মানিতে আবার টিউশন ফি নাই। সুতরাং, জার্মানিতে কোর্স খুঁজতে শুরু করলাম। অনেক খুঁজে দুই-চারটা মড্যুল পেলাম যেখানে পছন্দের বিষয়াদি পড়ায় এবং ইংলিশে। আবেদন করলাম, কিন্তু ভয় ছিল সায়েন্সের ছাত্রকে কি আর্টসে সুযোগ দিবে? ভাগ্য ভালো যে দিয়েছে।
নিজের এত বৃত্তান্ত বললাম, কারণ এটার সাথে aptitude test-এর প্রথম ধাপের সম্পর্ক আছে। এতক্ষণে আপনারা জেনে গেছেন যে আমার দেখানোর মত পোর্টফোলিও আছে। সুতরাং, সেই পোর্টফোলিওর জোরে দুইটা ইউনিভার্সিটি থেকে দ্বিতীয় পরীক্ষার জন্য ডাক পেলাম। পোর্টফোলিও বানানো খুব বেশি কঠিন না। নিজের কাজ গুলো গুছিয়ে জমা দিলেই হবে। তবে যেন খুব বেশি বড় না কিংবা দেখতে অগোছালো মনে না হয়। আমি আমার সাথে যারা পড়ছে…ওহ! বলতে ভুলে গেছি আমি Cologne Game Lab -এ গেম ডিজাইনের উপর ব্যাচেলর করতে আসছি। যাদের আগ্রহ আছে ওয়েবসাইটে দেখতে পারেন জায়গাটা কত অসাম (এই ইন্সটিটিউট নিয়ে আরেকদিন লিখব)। যাই হোক যা বলছিলাম, আমার সাথে যারা পড়ছে তাদের যে অনেক বেশি কাজ করা ছিল তা নয়, কিন্তু অবশ্যই গোছানো এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। ফলাফল, ১০০০+ জনের বেশি আবেদনকারীর মধ্যে ৮০০ জন পরবর্তী ধাপের জন্য ইনভাইটেশন পেয়েছিল। Hochschule Darmstadt-এর “Animation and Game”-কোর্সের জন্যও ডাক পেয়ে যাই দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য। যেহেতু দুইটা কোর্সই গেম রিলেটেড তাই আমার পোর্টফোলিওতে গেম রিলেটেড কাজগুলোই ফোকাস করেছিলাম।
এবার আসি দ্বিতীয় পর্বে, CGL-এ দ্বিতীয় ধাপ ছিল দুইটা অ্যাসাইনমেন্ট। তারা আমাদের একটা গেমের ডিজাইন করতে বলেছিল “ডেমোক্রেসি”-এর উপরে। সময় দিয়েছিল একমাস। সাথে একজন দার্শনিকের একটি প্রবন্ধ দিয়ে ওইটার সারমর্ম লিখতে বলেছিল (এইটা ছিল ইংলিশ পারি কিনা দেখার জন্য, এরা আবার IELTS চায় না)। একমাস ধরে একটা গেমের আইডিয়া বের করলাম। সেটাকে ওদের নির্দেশনা অনুযায়ী পিডিএফ বানিয়ে পাঠালাম ডেডলাইন পার হবার ঠিক আগে আগে। এতদিন সময় লেগেছিল, কারণ “গণতন্ত্র” আসলে গেমের জন্য খুব সহজ কিছু না। বেশ পড়াশোনা করতে হয়েছিল আইডিয়া বের করার জন্য। অন্যদের ক্ষেত্রে হয়ত নাও লাগতে পারে। যারা আগ্রহী তাদের জন্য একটা হিন্টস, গতবছর CGL-এর টপিক্স ছিল “empathy”। অর্থাৎ, এটা নিয়ে গেম আইডিয়া দিতে হয়েছিল। পরের বছর কি দিবে আমি নিজেও জানি না। সুতরাং, এক মাস বেশ খাটতে হবে এটার জন্য। অন্যদিকে ডার্মস্টাড থেকে একটা নির্দিষ্ট তারিখ দিল, ওইদিন অনলাইনে পরীক্ষা দিলাম দুইভাগে – লজিক্যাল ও অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি (ম্যাথমেটিক্যাল ও লজিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া) এবং আর্টিস্টিক অ্যাবিলিটি মানে ছবি আঁকাআঁকি। প্রথমভাগের পরীক্ষা ছিল এক ঘন্টার, দ্বিতীয় ভাগের পরীক্ষা ৬ ঘন্টার। প্রথম ঘন্টার পরীক্ষা দিলাম ভালো, কারণ আমি গণিত কমবেশি পারি। কিন্তু, দ্বিতীয় অংশের অবস্থা জঘন্য, কারণ আমি হাতে একদমই আঁকতে পারি না। তার উপর কাগজে কলমে তো আরো না। সেগুলোর ছবি তুলে আবার আপ্লোড করতে হয়েছিল ওদের সার্ভারে ডেডলাইন শেষ হবার আগেই।
এরপর অপেক্ষার পালা, দীর্ঘ একমাস পর CGL-এ তৃতীয় ধাপের জন্য ডাক আসল – ইন্টারভিউ, স্কাইপেতে। ৮০০ জন থেকে মাত্র ১১০ জনের লিস্ট পেলাম। তাও দিনটা পড়ল, বড় ভাইয়ার বিয়ের আগেরদিন। সারাবাড়িতে হইচই, বিয়ের সাজ সরঞ্জাম চলছে। আমি আবার দুরুদুরু বুকে ইন্টারভিউ দিতে বসলাম কম্পিউটারের সামনে – না জানি কিনা কি জিজ্ঞেস করে। তারা আসলে কঠিন কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। কেন পড়তে চাই, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অ্যাসাইন্টমেন্ট যে দিছি তার আইডিয়া আসল কোথা থেকে, গেমটা খেলার উদ্দেশ্য কি, থিয়েটার কিংবা এক্সিবিশনে যাই কিনা, সেখানে যেয়ে মনের মধ্যে কি ধরনের অভিজ্ঞতার জন্ম নেয় কিংবা কি শিখতে পারি ইত্যাদি। মোদ্দা কথা হল, অ্যাসাইনমেন্ট নিজে করছি না অন্যকে দিয়ে করাইছি এটা বের করা। নিজের সম্পর্কে সৎ থাকলে আর ভুলভাল ধারণা না দিলে এই ধাপটি অতিক্রম করা মোটেও কষ্টসাধ্য নয়। দুই ইউনিভার্সিটির ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন একই প্যাটার্নের ছিল। কিন্তু, ডার্মস্টাডে চান্স পাইনি। কারণ তো আগেই বলে দিয়েছি, আমি একদমই হাতে ছবি আঁকতে পারিনা। ১০০ তে ৫৭ পেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যক্রমে (অথবা নিজের মনোবলের জোরে), CGL-এ ৩৫ জনের মধ্যে টিকে যাই। বলাবাহুল্য, এই ইন্সটিটিউটে আমিই একমাত্র বাংলাদেশি।
এই হল আমার aptitude test এর অভিজ্ঞতা। তারপর শুরু করলাম ভিসা প্রসেসিং, ব্লক অ্যাকাউন্ট, ডর্ম খোঁজা ইত্যাদি। অবশেষে, তিন সপ্তাহ আগে জার্মানিতে পা রাখলাম। দুই সপ্তাহ হল ক্লাস শুরু হইছে। পড়ালেখা যে এত মজার, সেটা আগে বুঝিনি। হয়ত আমার ইন্সটিউটের কিংবা সাবজেক্টের কারণেই। সেটা নিয়ে আরেকদিন লিখব। কারণ, এখনও সবকিছু নতুন। আরেকটু অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তারপর লিখব। তাছাড়া প্রোফেসররা অনেকগুলো গেম এবং মুভির রেফারেন্স দিছে। গেমগুলো না খেললে কিংবা মুভিগুলো না দেখলে পরীক্ষায় পাস করা কিংবা শেখা কোনটাই হবে না। সুতরাং, যাই গা আজকের মত! গেম খেলতে বসি। আরেকদিন কথা হবে CGL নিয়ে।
You are a atom bomb of motivation. You are the sun for many students . You just taught us that don’t listen to your surround just go with your passion and dream. You are an icon. Best of luck vai.