শেকসপিয়ারেরম্যাকবেথযারা পড়েছেন তারা জানেন ক্ষমতার মোহে স্কটিশ রাজা ডানকানকে হত্যার অপরাধ চাপা দিতে কী করে ম্যাকবেথ একের পর এক খুন করে গেছেন। আর্থার কোনান ডোয়ালেরশার্লক হোমস বহু সিরিয়াল কিলারের কাহিনি সবার জানা। বই থেকে মুখ ফিরিয়ে যদি সিনেমায় তাকাই তবে নিয়ে টানটান উত্তেজনাকর কাহিনি আমরা বহু সিনেমায় দেখেছি। জোনাথান ডেমিরদ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বসএর সেই মনোবৈকল্যে আক্রান্ত নরমাংসভোজী খুনি যার থেকে স্বয়ং গোয়েন্দাদের সাহায্য নিয়ে খুনীমনের আদ্যপান্ত উদ্ধার করতে হয়। থ্রিলারের জনক আলফ্রেড হিচককেরসাইকোসিনেমার সেই মানসিক রোগী হোটেল মালিক নরম্যান বেটস যার নিজের ভেতর ছিল দুটি স্বত্তা, একটি তাঁর মা যিনি হোটেলের কাস্টমারদের হত্যা করতেন, আরেকটি স্বত্তা খুবই আলাভোলা যিনি মাকে বাঁচাতে চাইতেন। এসব তো শিল্প সাহিত্য বা নাটক সিনেমার গল্প। কিন্তু বাস্তবের গল্পও কি এর থেকে কম ভয়ংকর, কম গা শিরশিরে! লন্ডনের জ্যাক দ্য রিপারের কথা কে না শুনেছে, ১৮৮৮ সালে ছদ্মবেশে গভীর রাতে যে একের পর এক খুন করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তোলপাড় তুলেছিল যার নাড়ীনক্ষত্র আজও অজানা এক রহস্য। আমাদের ভারতবর্ষে পুরাকালে (বেশি পুরাকাল না, দুই আড়াইশ বছর মাত্র) ঠগীদের কথা আমরা শুনেছি যারা গভীর রাতে মানুষ ধরে হত্যা করতো, লুট করতো। এই ঠগীদের সর্দার ছিল থাগ বেহরাম (Thug Behram), উনিশ শতকের তিরিশের দশকে ব্রিটিশ কর্মকর্তার তদন্তে বেরিয়ে আসে তিনি ৯৩১ জনকে হত্যা করেছেন।

তবে আজ আপনাদের এমন এক সিরিয়াল কিলারের গল্প শোনাবো যা কোন সিনেমার রঙ্গিন পর্দা কাঁপায়নি, লোমহর্ষক বর্ণনা বইয়ের পাতা অলংকৃত করেনি, যিনি না এসেছেন আমেরিকা না ভারতবর্ষ থেকে। ইউরোপের হৃৎপিণ্ড জার্মানির এক কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার যিনি শতবর্ষ পূর্বে এই হ্যানোভারের মানুষদের ঘুম হারাম করেছিল। তার নাম ফ্রিটৎস হারম্যান(Fritz Haarmann) আমার হোস্টেল থেকে দুকদম ফেললেই তার কবর। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ২৭ টি শিশু কিশোরকে যিনি টুকরো টুকরো করে হত্যা করেছিলেন তার কবরের পাশে বাস করছি আজ প্রায় সাড়ে তিনবছর। কী সাঙ্ঘাতিক!

ফ্রিটৎস হারম্যানের জন্ম ১৮৭৯ সালে হ্যানোভার শহরে। ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে ধড় থেকে মাথা আলাদা করার মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর আগে তদন্তে বেরিয়ে আসে মাত্র ৪৫ বছরের অতীত জীবনের কাহিনি। তার বাবা ছিলেন অতি তর্কপ্রিয় বদরাগী খিটখিটে স্বভাবের, যদ্বরুণ হারম্যানের শিশুকাল অতি তিক্ত, নিরানন্দময় বিস্বাদে ভরা ছিল। অপরদিকে কিশোর বয়স থেকেই তার মাঝে সমকামিতার স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সেকালে জার্মানিতে এক সাঙ্ঘাতিক অপরাধ এবং হারম্যান এই সমকামিতার অভিযোগে বেশ বছর জেলও খেটেছিল। পরিবারবন্ধুহীন, ছন্নছাড়া জীবনে সে ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হয়ে গেল কিন্তু ওদিকে জড়িয়ে গেল ছোটখাট অপরাধমূলক কাজে। টুকটাক চুরিচামারি, একে তাকে ধরে লুট করা, আর তার ফাঁকে ফাঁকেই জেলে আসা যাওয়া। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ অব্দি অধিকাংশ সময় তার জেলেই কেটেছে। পুলিশের কাছে ধীরে ধীরে সে পরিচিত মুখ।

হ্যানোভারের কসাই ফ্রিটৎস হারম্যান

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষের দিকে (১৯১৮) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানির অবস্থা সকরুণ। চারিদিকে দারিদ্র আর অনাহারী মানুষের কদর্য হাহাকার। খুনখারাবি ধেই ধেই করে বাড়ছে। জার্মান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনকে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করে। পরবর্তীতে ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে ১৯১৯ সালের জুন মাসে একটি চুক্তি করা হয় যা ভার্সাই চুক্তি নামে পরিচিত। এর চুক্তি অনুসারে জার্মানির কোন আর্মি থাকতে পারবে না, কোন ধরণের অস্ত্রবাণিজ্যে অংশ নিতে পারবে না। এতে করে এদেশের পুলিশ বাহিনী অপরাধ রুখতে হিমশিম খেতে থাকে এবং বাধ্য হয় সাধারণ জনগণের মধ্য হতে সহায়তা নিতে। মোক্ষম সুযোগ ভেবে পুলিশ হারম্যানকে তাঁদের সোর্স হিসেবে নিয়োগ করে, যাতে হ্যানোভারে শহরের অপরাধজগতের মানুষদের ধরতে পুলিশের সুবিধে হয়। হারম্যানও এতে করে অল্প বয়সী তরুণদের কাছে আসার সুযোগ পায়। পুলিশের সহযোগিতায় হ্যানোভার সেন্ট্রাল স্টেশনে চোরাই মাল বিক্রির দোকান দেয়। চোর চুরি করে এই দোকানে এসে বিক্রি করে,  হারম্যান তার তথ্য গোপনে পুলিশকে দেয়, পুলিশ সেই চোরকে গ্রেফতার করে। এভাবেই চলছিল হারম্যানের দিনকাল।

এই কাজের ফাঁকে ফাঁকেই ভয়ংকর এক হত্যালীলায় মেতে উঠে হারম্যান। ১৯১৮ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত ২৪ জন মতান্তরে ২৭ জনকে হত্যা করে সে। অধিকাংশের বয়স দশ থেকে বাইশ। দিনের অধিকাংশ সময় সেন্ট্রাল স্টেশনে ঘুরাঘুরি করতো শিকার ধরার জন্যে। ঘাগু হারম্যান স্টেশনের মানুষকে দেখেই বুঝতে পারত কে কোন বিপদে আছে। হত্যার শিকার বেশিরভাগ শিশু কিশোর বাড়ি থেকে অভিমান করে পালিয়ে আসা। হারম্যান তাঁদের আশ্রয় খাবার দেয়ার কথা বলে তার বাড়িতে নিয়ে যেত। আতিথেয়তার এক পর্যায়ে হারম্যান তাঁদের গলার কণ্ঠনালীতে কামড় বসিয়ে দিত এবং শ্বাসরোধ হয়ে তাঁরা মারা পড়তো। পুলিশের কাছে জবানবন্দীতে এই কামড়কে সে বলেছিল ‘love bite’ (প্রেমচুম্বন)

খুন করার পর তাঁদের শরীর টুকরো টুকরো করে কেটে স্টাইনটোরের পাশে লাইনে নদীতে ফেলে দিয়ে আসতো।

কিংবদন্তী আছে হারম্যান এই মানুষদের হত্যা করে নরমাংস ভক্ষণ করতো। ধারণার কারণ হল, সে নিজেও এক সময় মাংস ব্যবসায় জড়িত হয়। তার নিজের কসাইখানায় হাড় ছাড়া পশুর মাংস বিক্রি করা হত। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর মুখে মুখে রটে যায় যে হারম্যান তার দোকানে মানুষের মাংস বিক্রি করতো। তবে তথ্যের অকাট্য প্রমাণ পুলিশের কাছে নেই।

তথ্যমতে, ফ্রিদেল রথ নামের সতেরো বছর বয়েসী এক তরুণ হারম্যানের প্রথম শিকার। রথের বন্ধুরা পুলিশকে জানায় হারম্যানের সাথে সর্বশেষ রথকে তারা দেখেছে। পুলিশ তার বাড়িতে হানা দিয়ে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরের সাথে দ্বিগম্বর অবস্থায় আটক করে, কিন্তু রথের কোন হদিস তারা করতে পারে না। কিশোরকে যৌন হেনস্তার দায়ে তার নয় মাসের জেল হয়। অনেক পরে যখন হারম্যানের এই খুনোখুনির খবর পুলিশ জেনে যায় তখন সে পুলিশকে জানায়, রথের  কাটা মুণ্ডু চুলার পেছনে প্যাকেট করা ছিল যখন পুলিশ তার বাসায় আসে। জেল থেকে বেরিয়ে সতেরো বছরের পিয়ানিষ্ট ফ্রিটৎস ফ্রাঙ্কেকে হত্যা করে একই কায়দায়। এছাড়া, ভিলহাইম শুলজ, রোনাল্ড হাচ, হ্যান্স জনেনফেল্ড সহ আরও প্রায় দুই ডজন শিশুকিশোরতরুণ এই শহর থেকে হারিয়ে যেতে থাকে একে একে। তদন্তের সময় প্রমাণিত হয় এদের সবাই হারম্যানের বিকৃত রুচির নিষ্ঠুর শিকার। তার শেষ শিকার  সতেরো বছরের এরিখ যাকে হারম্যান খুন করে ১৯২৪ সালের ১৪ জুন এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন খন্ড খন্ড দেহ পাওয়া যায় বিখ্যাত হেরেনহয়জার গার্ডেনের মুল গেটলাগোয়া লেকের পানিতে। 

হ্যানোভার শহরকে দ্বিখণ্ডিত করেছে এই লাইনে নদী। এর মাঝেই মানুষের খন্ডিত হাড়গোড় খুঁজে পাওয়া যায়।

একদিকে সে নিজেই পুলিশের বিশ্বস্ত ইনফর্মার কারণ তার মাধ্যমে পুলিশ বহু অপরাধীকে গারদে পুরতে পেরেছে, অপরদিকে তলে তলে সে খুনোখুনির এক জগতে নিজেকে জড়িয়েছে। একারণেই তার ধরা পড়া নাটকীয়তায় ভরা।

১৯২৪ সালের মাঝামাঝি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে শিশুরা খেলতে গিয়ে মানুষের হাড়গোড় খুঁজে পেতে থাকে। এলাকার অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। শহরের বিভিন্ন স্থান হতে শিশু কিশোর তরুণেরা হারিয়ে যাচ্ছে, যাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।  শুধুমাত্র ১৯২৩ সালেই পুলিশের কাছে ৬০০ অভিযোগ জমা হয় টিএনএজ বয়সী বাচ্চাদের অভিভাবক থেকে। পরে পুলিশ বাধ্য হয়ে নদীর দুই ধারে পুংখানু অনুসন্ধান করে অন্তত ৫০০ মানবদেহের অংশবিশেষ খুঁজে পায় যার অধিকাংশই কিশোর বয়সীর ছেলেদের।

কিন্তু পুলিশের সন্দেহে কেউ নাই। তবু তারা হারম্যানকে সন্দেহ করল একারণে যে, সে অতীতে সে শিশু কিশোরদের যৌন হয়রানীর কারণে বেশ কবার জেল খেটেছে এবং ফ্রিদেল রথের হারিয়ে যাবার সাথে হারম্যানের সংযুক্তি আছে। কারণ ফ্রিদেল রথের বন্ধুরা পুলিশকে জানিয়েছিল সর্বশেষ তারা তাঁকে হারম্যানের সাথে দেখেছে। পুলিশ গোপনে তার উপর নজরদারি শুরু করে। কিন্তু প্রায় সব পুলিশই ওর চেনা। তাই নজরদারি কাজে দেয় না। এরপর বার্লিন থেকে দুজন নতুন অফিসার আনা হয় শুধু মাত্র ওর উপর নজর রাখার জন্যেই।

হারম্যানের বাসায় তল্লাশি

১৯২৪ সালের ২২ জুন। এই দুই পুলিশ ছদ্মবেশে হানোভার মেইন স্টেশনে হারম্যানকে চোখে চোখে রাখছিল। এরই মধ্যে তারা লক্ষ্য করলো হারম্যান ১৫ বছর বয়েসী এক কিশোরের সাথে বাগবিতণ্ডা করছে। ছেলেটির নাম কার্ল ফ্রম। হারম্যান  কার্লকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয় এই বলে যে কার্ল জাল টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছে। পুলিশ কার্লকে ধরে নিয়ে যায়, এবং কার্ল পুলিশকে জানায় সে গত চারদিন ধরে হারম্যানের সাথে তারই বাসায় অবস্থান করছে। এসময় হারম্যান তাঁকে উপর্যপুরি বলাৎকার করে এবং গলায় ছুরি ধরে ভয় দেখায়। তথ্য পেয়ে কালবিলম্ব না করে হন্যে হয়ে থাকা পুলিশ হারম্যানকে গ্রেফতার করে যৌন হয়রানীর মামলা করে। দ্রুত পুলিশ হারম্যানের বাড়িতে গিয়ে সার্চ করে বহু রক্তাক্ত পোশাক, বিছানা বালিশ রক্তে মাখা অবস্থায় পায়। হারম্যান সব অস্বীকার করে বলে, সে কসাই খানার কাজ করার কারণে এই অবস্থা। কিন্তু কিশোর বয়সী বাচ্চাদের পোশাক পাওয়া নিয়ে তার বক্তব্য পুলিশকে সন্তুষ্ট করতে পরে না। সারা জার্মানি থেকে পুলিশ সন্তান হারিয়ে যাওয়া পিতামাতাকে আমন্ত্রণ করে হারম্যানের বাসা থেকে সংগৃহীত পোশাক পরীক্ষা করতে এবং বহু অভিভাবক স্বীকারোক্তি দেয় যে এগুলা তাঁদের সন্তানদের পোশাক।

সন্দেহের পর পুলিশ তাকে গেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে।

উপায়ন্তর না দেখে পুলিশের কাছে সে সকল অপরাধ স্বীকার করে। কীভাবে ছেলেদের সে ধরে আনত, এরপর কথার চলে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতো এবং কী উপায়ে তাঁদের দেহ কাটা হতো, অতঃপর সেগুলো বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলা হতো। সে নিজেই স্বীকার করেক্ষিপ্তবৎ যৌন আবেগথেকে এহেন ঘৃণ্য কাজে সে সংযুক্ত হয়েছে।

আদালতে বিচার চলছে হারম্যানের।

জল্পনা শেষে২৪ এর ডিসেম্বরে শুরু হয় ট্রায়াল। এই বিচার জার্মানির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ সৃষ্টি করে। দেশি বিদেশি বহু সাংবাদিক হ্যানোভারে আসে সংবাদ তৈরির উদ্দেশে। বিচার শেষে  ১৯২৫ সালের ১৫ এপ্রিল ভোরবেলায় তাকে শিরচ্ছেদ যন্ত্রবিশেষে (Guillotine) চড়িয়ে ধড় থেকে মস্তক কেটে ফেলা হয়। মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে তার শেষ উক্তি, “ভদ্রলোকসকল, আমি দোষী, কিন্তু যন্ত্রণাদায়ক হলেও আমি মানুষ হিসেবেই মারা যাব। আমি অনুতপ্ত কিন্তু মৃত্যুর ভয় আমার নেই (I am guilty, gentlemen, but, hard though it may be, I want to die as a man. I repent, but I do not fear death)

ধারাবাহিক ধর্ষণ আর হত্যার শিকার হওয়া কিশোর তরুণদের খণ্ড বিখন্ড দেহাবশেষ একত্রে এখানে কবরস্থ করা হয়েছে। তাঁদের স্মরণার্থেই এই স্মৃতিসৌধ।

সেই থেকে শতবছর পরেও কাহিনি এক কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে হ্যানোভারে। বাড়ির বৃদ্ধরা আজও চঞ্চল শিশুদের বশে আনার জন্যে  দ্য ভ্যাম্পায়ার অব হ্যানোভার’, ‘দ্য বুচার অব হ্যানোভার‘ – হারম্যান নামের ইতিহাসকুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের নাম নিয়ে থাকে।

২৯.১২.২০১৭
জাহিদ কবির হিমন
হ্যানোভার, জার্মানি 

mm

By Jahid Kabir Himon

এডিটর (Editor): জার্মান প্রবাসে মাস্টার্স in Internet Technologies And Information Systems Leibniz University Hannover বর্তমানে বার্লিনের একটি কোম্পানিতে রোবটিক্স প্রোসেস অটোমেশনে (RPA) কাজ করছি

Leave a Reply