প্রবাসের ঈদ ব্যাপারটা কি জিনিস সেটা নিয়ে আমার এই জীবনে চিন্তা করার সময় কিংবা সুযোগ কখনওই হয়ে উঠেনি। বিদেশ বলতেই আমরা যেমন চিন্তা করি – সুন্দর রাস্তা-ঘাট , পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আর সুন্দর সুন্দর কিছু লোকেশন।
হ্যা,আমার ভাবনা এর চেয়ে মোটেও আলাদা কিছু ছিলনা। হ্যা,সুন্দর রাস্তাঘাট কিংবা সুন্দর পরিবেশ সবই পেয়েছি,কিন্তু যেটা বিদেশে এসে আবিষ্কার করেছি তা হল কেমন একটা যান্ত্রিকতা আছে এখানের মানুষগুলোর মাঝে। ঢাকা শহরে আমরা যারা বড় হয়েছি তাদের হয়ত মনে হতে পারে যে এ আর নতুন কি? ঢাকা শহরের মানুষদের মাঝেও সেটা আছে। আমি তাদের সাথে একমত হলেও সেটা পুর্নাংশে নই। কারন ঢাকা শহরের জান্ত্রিকতার ছেয়েও হাজার গুনে বেশি যান্ত্রিকতা এখানে আছে। আর আমরা হলাম ১২ মাসে ১৩ পার্বণ পালন করা জাতি। আমাদের কাছে উৎসবে ছুটি না পেলে,কিংবা কোথাও একটু ঘুরতে না গেলে,সবাই মিলে পরিবারের সাথে উৎসব পালন না করলে তা রীতিমত বিভীষিকা ঠেকে। তাহলে বুঝুন, যখন ঈদের দিন আমার ২টা সাইন্টিফিক পেপারের প্রেসেন্টেশনের রিভিউ পাঁঠাতে হয়, বিকেলে আবার ক্লাস থাকে তখন তার কাছে এমন ঈদ তো একটু বেশিই নিষ্ঠুর ঠেকে।
ঈদের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মনে হল দেশে থাকতে মসজিদের ইমামের কথা শুনতে শুনতে এইবার আর ঘুম ভাঙল না। কি আর করা। মাথায় এক জিনিস ঘুরতে থাকল, যত যাই হোক মন খারাপ করা যাবেনা। না হলে কিছুক্ষন পরে মা’কে ফন করলেই সে ধরে ফেলবে। ছেলে ছাড়া প্রথম ঈদ তার। তার মন খারাপ হবে এমন কিছু করা যাবেনা। বিদেশে থাকলে আসলে পরিবারকে ভাল রাখার জন্য নিজে ভাল থাকার অভিনয় ঠিকই শিখে যায় সবাই।
ঘুম থেকে উঠেই গোসল করেই হাতড়ে বেড়ালাম প্রিয় পাঞ্জাবিখানা। কিন্তু মা আমার ভুলে পাঞ্জাবি দেয়নি। শুধু পায়জামা দিয়েছে। মনে মনে একলা একটু হেসে টিশার্ট আর জিন্স পড়েই রেডি হয়ে গেলাম। বের হওয়ার সময় হঠাত আবিষ্কার করলাম বাইরে ভালই ঠাণ্ডা পড়েছে,আকাশও মেঘলা। উইন্ড জ্যাকেট গায়ে চড়িয়ে ট্রামে উঠে মা কে ফোন দিলাম। মা আমার একটু বেশি ইমোশনাল কিনা,সে পারলে ওই পাড়ে বসেই আমাকে মিষ্টিমুখ করিয়ে দেয়। তার কড়া অর্ডার, মসজিদ থেকে বের হয়েই যেন কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার বাসায় নিয়ে যাই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলাম। নামাজ আদায় করলাম এক পাকিস্তানি মসজিদে। নামাজ শেষে অবাক করে দিয়ে তারা কাস্টারড খাওয়াল। আমি তো বেজায় খুশি! কাস্টারড খাওয়ার জন্য না, নামাজ শেষে এই বৃষ্টিতে মিষ্টি জাতীয় কিছু খুজতে হবেনা সেই সুখে!!!
নামাজ শেষে মা’কে এই মিষ্টিমুখের কথা বলায় সে বলেই ফেলল- আল্লাহ মায়ের দোয়া কবুল করেছে!!!
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম। এসে খিচুড়ি চড়ায় দিলাম। এর পর পড়তে বসলাম। এর মাঝে অবাক করে দিয়ে Dusseldorf এর এক বড় ভাই ফোন দিয়ে দাওয়াত দিল। একে আমি নতুন,তাই কিছু জানিনা চিনিনা। আমি খুব খুশি হয়েই ভাইয়া কে ধন্যবাদ দিলাম। মাঝে মাঝে ছোট কিছু অপ্রত্যাশিত ব্যাপার ঘটলে জীবনে বড় বড় ভাল লাগা কাজ করে।
বিকেলের দিকে মুভি দেখতে বসলাম ক্লাসে না গিয়ে। সন্ধ্যায় এক ফ্রেন্ড আসল বাসায়। আড্ডা দিতে দিতেই রাত হয়ে গেল। কিভাবে ঈদ শুরু হল আর কিভাবে শেষ হল সেতাই বুঝলাম না 😀
তবে পরেরদিন বাংলাদেশে ঈদ ছিল,আর ফেসবুকের কল্যানে সবার এত কালারফুল ছবি দেখে আমি সত্যিকারের বাংলাদেশের ঈদ মিস করছিলাম। 🙁
লেখার শেষে একটা কথাই বলব…
নিজের জীবন নিয়ে কখনও অভিযোগ করবেন না। কারন আপনার থেকেও কষ্টে অনেকে ঈদ পালন করছে। আপনার কাছে বোরিং ইদ,ঘুমিয়ে কাটানো ঈদ হতে পারে। কিন্তু আপনার মায়ের কাছে সেই ঈদের দিনেও আপনি আছেন। সেটা ঘুমিয়ে থাকুন কিংবা ঘরে বসে থাকুন না কেন। জীবনে যেমনই থাকব বলব – “আলহামদুলিল্লাহ্”