জার্মানিতে এসে খুব লাকি না হলে ছোট খাট সো কলড অড জব আসলে সবারই করতে হয়েছে বা হয় । আমিও তার ব্যতিক্রম কেউ নই । যাইহোক শুরুতে ভেবেছিলাম কাজ করব না যতদিন ভাল জব বা নিজের স্টাডি রিলেটেড জব না পাই । পরবর্তীতে ভেবে দেখলাম কয়দিন আর আম্মুর আর বোনের টাকায় ফুটানি করব! 🙄 কিছু চিন্তা ভাবনা না করেই একটা রেস্টুরেন্টে যেয়ে বলি আমার কাজ লাগবে ওরা নিয়ে নেয় কিচেন হেল্প এ। ভাই রে ভাই এই দেশে কিচেন হেল্প মানে কাটা কুটি থেকে শুরু করে ফ্লোর ঝাড়া মুছা থেকে নিয়ে থালা বাসন মাজা! যেদিন প্লেট আর বড় পাতিল ধুইতে দিত আমার মনে হত আল্লাহ্‌ কেন যে আসছি , দেশেই তো ভাল ছিলাম ! দেশে তো এই সব কাজ নিজে করতাম না বরং ঘরের কাজে যে মেয়েটি সহায়তা করত সেই এইসব কাজ করত। ডিনার বা লাঞ্চে নিজের প্লেট খানা ও ধুইতাম না ! যেদিন এণ্ড শিফট থাকতো সেইদিন পুরা কিচেন ঝাড়ু ও মুছতে যেয়ে লাগতো, আল্লাহ্‌ আমারে উঠাই নাও! 😭😭 দেশে তো নিজের ড্রেসিং টেবিলের আয়নাও মুছে দেখি নাই। যাইহোক কাজ শেষে যখন হাতে কিছু ইউরো পেতাম তখন মনে হত আহা কাজটা খারাপ ও না! আবার সেই টাকা দিয়ে যখন ছুটির দিনে শপিং করতাম তখন তো নিজে কে দুনিয়ার সব থেকে ইন্ডিপেনডেন্ট মহিলা মনে হইত 😁। এভাবে যখন প্রায় ২ মাস যায় একদিন আমার বন্ধু শাওন ফোনে বলল বন্ধু আমিতো ফ্রনহফার এ জব পাইছি। খবরটা শুনে মুখে হাসি নিয়া খুশী খুশী গলায় কংগ্রেটস করলেও ভিতরে মনে হইছে কেউ বুকের মধ্যে চাক্কু বসায় দিছে! 😞এই ঘটনার কিছুদিন পর যখন শুনলাম হাসান ফোন কইরা বলে ব্রো আমার তো ডাইল্যাব এ স্টুডেন্ট জব হইছে! আগের বারের ক্ষত থেকে মনে হইল রক্ত ক্ষরণ শুরু হইল। যাইহোক দুঃখ ভরা মন নিয়ে শুরু করলাম স্টাডি রিলেটেড জব খোঁজা। হাসানের জবের খবরটা যেমনি দুঃখ এনে দিয়েছিল তার থেকে বেশি এনেছিল মোটিভেশন। এখানে চাকরি খোজার মোটিভেশন আমি আসলে প্রথম পাই হাসানের থেকে, ভাই আমার সব সময় বলত ব্রো এপ্লাই করতে থাকেন ইনশাল্লাহ চাকরি পেয়ে যাবেন। আমি সেজন্য ওর কাছে এখনও কৃতজ্ঞ, এত টা মোটিভেশন দেয়ার জন্য। পাশাপাশি ও কোথাও ভেকেন্সি দেখলেও আমাকে আর আমাদের বন্ধু সারকেলে জানাতো। এরপর বোন কে বলি সিভি টা দেখে দিতে। দিনে মিনিমাম ১০ টা জব আপ্পলাই করতাম, এক মাসের মাথায় আফটার ইন্টার্ভিউ , মিনিমাম ১৮ টা রিজেক্সন আসে! হতাশ হইনি তবুও ! প্রায় ২ মাস কয়েকটা জায়গায় ইন্টার্ভিউ দেয়ার পর নিজের ইউনিভার্সিটিতেই আলহামদুলিল্লাহ্‌ চাকরির অফার আসে। তখন মনে হয়েছিল ইউরেকা ! আমি পাইলাম ইহাকেই পাইলাম । যাইহোক এবার আসি মুল কথায়, সবাই জানি এখানে ল্যাঙ্গুয়েজ না জানলে স্টাডি রিলেটেড জব তো দুরের কথা সো কল্ড অড জব ও পাওয়া যায় না ! ব্যাপারটা হয় তো অনেক ক্ষেত্রে সঠিক আবার আপনি যদি নিজের ইউনিভার্সিটি বা অন্য কোন রিসার্চ ইন্সটিটিউতে জব খুজেন বা বড় কোন মালটি ন্যাশনাল কম্পানিতে খোঁজেন সে ক্ষেত্রে আপনার ভাগ্য ভাল থাকলে ল্যাঙ্গুয়েজে খুব ভাল না হলেও চলে। তাই বলে আমি বলবো না যে ল্যাঙ্গুয়েজ শিখার দরকার নাই , তা না। যেখানে থাকেন সেখানের ভাষা না বলতে পারা একটি বড় ব্যার্থতা বলে আমি মনে করি। সো যে যেই সাব্জেটেই পড়েন না কেন এখানে থাকতে হলে ভাষা শিখাটা খুবই জরুরী । আসলে আমাদের দেশের জব সিচুয়েসন কম্পেয়ার করে আমি কম্পুটার সায়েন্সের ছাত্রি হবার পর ও এখানে এসে শুরুতে ভয়ে জব এপ্লাই করার সাহসে কুলায় নাই। পরে বুঝতে পারলাম এখানে আসলে সব ফিল্ডের চাকরিই এভেইলেবল শুধু প্রয়োজন একটু সাহস ও মোটিভেশনের ! আর মেয়েদের কে তো এখানে সবার আগে প্রায়োরিটি দেয়া হয়। সো ভাইয়ারা না হলেও আপারা একটু ধরজো ধরে জব খুজলেই নিজের পছন্দ মতো জব পেয়ে যাবেন। সারভাইভেলের জন্য আসলে সব কাজই করা যায় বা এই দেশে আসলে সব কাজই সমান কিন্তু ভাই কার মন চায় সারা দিন ক্লাস কইরা বিকালে থালা বাসন মাজতে? বলতে পারেন আপনি তো আইটি স্টুডেন্ট তাই জব পাইছেন, আমি বলবো আরে ভাই আপনিও চেষ্টা করে দেখেন না! চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নাই। যদি কিছুটাও মোটিভেশন পান এই পোস্ট পড়ে তাহলে আজকে থেকেই মুল্যবান সময় কাজে লাগিয়ে, নিজের সিভি তৈরি করে এপ্লাই শুরু করেন। আর হ্যা চাকরি পাইলে আমাকে কিন্তু মিষ্টি মুখ করাইতে ভুলবেন না! সবার জন্য শুভ কামনা!

শুভ কামনা তার জন্যে যেই  ব্যাক্তি এরকম একটা লেখা লিখতে আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে 🙂

কাহিনিটা ২.৫ বছর আগের কেউ হুদাই Congratulations দিবেন না প্লীজ লাগে😭😭
বি: দ্র: অড জব বলেছি বলে কেউ মাইন্ড খাইয়েন না ! আমি কিন্তু এই জব কিছু দিন করছি সো চিল!

mm

By Bithi Anjuman

আমি বিথী । বার্লিন, জার্মানিতে লেখাপড়া করছি।

3 thoughts on “চাকরি ও বাস্তবতা !”
  1. Jena, Nuremberg & Gottingen এই তিনটা cities এর মধ্যে কোন city সবচেয়ে ভালো হবে good part time job possibilities & living cost with compatibility অনুসারে?

Leave a Reply