আবাসন সমস্যার সমাধান !!!
বিঃদ্রঃ লেখাটা মিউনিখের এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে লেখা। কিন্তু অন্য সিটিতেও বাসা খোজার পদ্বতি মোটামুটি একই। শুধু নামটা পরিবর্তন হবে।
মিউনিখে বাসা পাওয়া নিয়ে একটা বড় ভাইয়ের ডায়ালগ খুবই মনে ধরেছিল।
“মিউনিখে জব পাইবা, এডমিশান পাইবা, এমনকি জার্মান ভালবাসাও পাইবা!!! কিন্তু মাগার বাসা পাইবা না।” 😂😂😂😂 এবং আসলেই তাই। এখানে বাসা মানে হল সোনার হরিণ।
রফিউল সাব্বির ভাইয়ের একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। ভাইয়া সদ্য জব নিয়ে মিউনিখে আসেন। হন্যে হয়ে বাসা খুজতেছেন। বিভিন্ন জায়গায় বাসার ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু বাসা পাচ্ছেন না (হ !!! এখানে বাসা পাইতেও, বাসার মালিকের কাছে ইন্টার্ভিউ দেয়া লাগে। কিচ্ছু করার নাই। গেবন কঠিন। 🙄🙄🙄)।
একজায়গায় বাসা দেখতে গিয়ে দেখে, ঐ বাড়িওয়ালা একই টাইমে ৩০-৪০ ক্যান্ডিডেট ডাকছে। আরেক জায়গায়, ভাই নাকি পুরা ১ বছরের বাড়ি ভাড়া, এডভান্স হিসেবে বাড়িওয়ালাকে দিয়ে দিতে চাইছে। তাও বাসা পায় নাই। এই হল অবস্থা। 😪😪😪
স্টুডেন্টদের অবস্থা তো আরো করুন। ওদের না থাকে টাকা, যেটা দিয়ে প্রাইভেট বাসাগুলো নিবে। কারণ প্রাইভেট বাসার ভাড়াই শুরু হয় ৪০০/৫০০ থেকে। আর মেক্সিমাম লিমিটের তো মা বাপ নাই।
আবার Studentenwerk থেকে বাসা পাইতেও ১-২ সেমিস্টারের বেশি সময় লেগে যায়। তাও নিয়মিত ওদেরকে না গুতাইলে, মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বাসা পাবেন না। এবং এটা একদম সত্য কথা। বিদ্যা ছুয়ে বলতেছি।
সো বুঝেন এবার। যারা ১-২ মাস বাসা খুজে হয়রান হয়ে যাইতেছেন, তাদেরকে বলি, “এইতো তবে শুরু। যেতে হবে বহুদূর।” হতাশ হলে হবে না। আর লাকটাও খুব-ই ইম্পোর্টেন্ট।
কয়েকদিন ধরে ইনবক্সে/গ্রুপে প্রচুর মেসেজ পাইতেছি। “ভাই বাসা দেন। ভাই বাসা দেন।” তাই ভাবলাম একটু বয়ান দেই। জনতার উপকারে আসবে।
আসুন এখন মুশকিল কা আসান নিয়ে আলোচনা করি।
১. এডমিশান পাওয়ার সাথে সাথেই Studentenwerk munich এর সাইটে এপ্লাই করে দিবেন, বাসার জন্য। এটা অফার লেটার পাওয়ার সাথে সাথেই করবেন। একদম দেরী করবেন না। ওদের ওয়েবসাইটে দেখবেন, ৩ টা অপশন চুজ করতে পারবেন। আপনি যদি তাড়াতাড়ি বাসা পেতে চান, তাহলে যে সব ডর্মের ওয়েটিং পিরিয়ড স্বল্প, ওইগুলোতে অপশন দিবেন। ইউজুয়ালি যেইসব বাসা, ইউনি থেকে একটু দূরে, ওগুলো তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। সো এটা মাথায় রাখবেন। বাসা ভাড়া ২৩০-৪৫০ এর মধ্যে ভেরি করে।
২. এরপরে বিভিন্ন ওয়েবসাইট/গ্রুপগুলোতে ট্রাই করতে পারেন। যেমনঃ wg gesucht, immobilien münchen, international friends Munich, esn tumi, esn lmu….এরকম শত শত ফেইসবুক গ্রুপ আর ওয়েবসাইট আছে। ওখানেও লং টার্ম/শর্ট টার্মের অফার পাবেন অনেক।
কিন্তু সাবধান !!! এইসব গ্রুপে প্রচুর চোর চ্যাচ্চর আর ধান্ধাবাজ লোকজন আছে, যারা মানুষের টাকা হাতাই নেয়। সো এইসব গ্রুপে সাবধানে ডিল করবেন।
৩. এটা খুব ইফেক্টিভ পদ্ধতি। এটা হল বাংলা পদ্ধতি। Bangladeshi students in munich, Bangladeshi community in munich নামের দুইটা গ্রুপ আছে, যেখানে মিউনিখ প্রবাসী বেশিরভাগ বাংলাদেশীরাই আছেন। এইসব গ্রুপে পোস্ট করতে পারেন। অনেক বাংলাদেশীরই এই ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। অনেকে টেম্পোরারি বেসিসে রুম শেয়ার করে। অনেকে বাসার কাউচে/গেস্ট রুমে জায়গা দেয়। এরকম অপশন পেলে অবশ্যই নিয়ে নেয়া উচিত। এতে করে, আপনি নতুন শহরে আসার পরে একটা মেন্টর পেলেন। প্লাস ওইখানে মাথা গুজানোর ঠাই নিয়ে, অন্য বাসাও খুজতে থাকলেন।
অনেকেই আছে, বিদেশে এসে বাংগালীদের সাথে মিশব না, এরকম চুলকানি-মূলক মনোভাব থাকে। তাদের জন্য এই পদ্বতি প্রযোজ্য নয়।
৪. Studentenwerk এর কিছু টেম্পোরারি এবং ইমারজেন্সি রুম থাকে। ওগুলোতে ট্রাই করতে পারেন। ওখানে শর্ট টার্মের জন্য রুম দেয়। কিন্তু এই রুমগুলো পেতে হলে, ওদের অফিসে এসে সরাসরি কথা বলতে হবে। দেশ থেকে ম্যানেজ করাটা খুব টাফ।
৫. প্রাইভেট কিছু Student dorm আছে, যেগুলার লিস্টিং ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে পাবেন। ওগুলোতে ট্রাই করতে পারেন। ওগুলোর ভাড়া বেশি হলেও, তাড়াতাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. যদি কিছুই ম্যানেজ করতে না পারেন, তাহলে youth hostel/hotel ই ভরসা। আল্লার নাম করে ওগুলা বুকিং করে দেন। পয়সা একটু বেশি যাবে। কিন্তু কি আর করার।
–
–
–
আর এতক্ষন যে কষ্ট করে টিপস গুলা দিলাম, এগুলা কিন্তু মাগনা না। জগতে সবকিছুর-ই মূল্য আছে। 🙄🙄🙄
দেশ থেকে আসার সময়, আমার জন্য বেশি করে প্রাণ আর রুচির আচার নিয়া আসবেন। শুধু তেতুল আর বড়ই। জলপাই/আম চইলতো ন। সাথে বোম্বে চানাচুর, শন পাপড়ি আর মিস্টার টুইস্ট আনতেও ভুলবেন না।
আর যারা চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আসবেন, তারা সিবিচের টক/মিষ্টি/ঝাল আচার আনবেন। সাথে শুটকি 😍😍😍।
এগুলা না আনলে জার্মানি তে ঢুকতে দেব না যে। মনে তাকে যেন। 😑😑😑
আপনাদের “ভাল-বাসা” খোজার অভিযান সফল হোক। 😀😀😀