Mahmud Al Hasan is with Salma Ferdous Omi in Bremerhaven, Germany.
ফ্যামিলি – রিইউনিয়ন ভিসা অভিজ্ঞতা (N.B : For DAAD scholarship holders)
সবথেকে বিলম্বিতার সম্মুখীন হতে হয় এই ভিসার ক্ষেত্রে যা আমরা সকলেই জানি। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। কিন্তু কিছু বিষয় যা আমি ফেস করেছি তা শেয়ার করার জন্যই এই লেখা।
# ২১ অক্টোবর আমার ওয়াইফ এম্বাসি ফেস করে (এম্বাসির ওয়েবসাইটে উল্লেখিত সকল ডকুমেন্ট নিয়ে)
-প্রশ্নঃ কেন যাবেন, কোথায় যাবেন, হাসবেন্ড কি করে, দেশে কি করত। কোন দৈবাৎ কারনে ভিসা অফিসার বলে বসল আপনার ত ল্যাংগুয়েজ সার্টিফিকেট লাগবে (যেটা ডাড দের লাগেনা)। তখন আমার ওয়াইফ জোর দিয়ে সেটা বল্লেও অফিসার শুনলনা। পরবর্তিতে ও যখন বলল আমি দেশে যব করতাম (আগে ভুল করে বলেছে স্টাডি করতাম কারন আমি মাস্টার্স এর সাথে জব করতাম) তখন অফিসার খান্ত হল। যেটা বুঝলাম এম্বাসি তে নিজেকে দৃড়ভাবে উপস্থাপন করা খুব জরুরি।
তো ইন্টার্ভিউ শেষে শুরু হল অপেক্ষার পালা ভেরিফিকেশনের জন্য। হঠাত ২২ নভেম্বর জার্মানিতে আমার এড্রেসে (ব্রেমারহাভেন) স্টেট আউসল্যান্ডার অফিস থেকে চিঠি পাই যেখানে পাসপোর্ট, রেসিডেন্স পারমিট, ইউটিলিটি বিল,ডাড এর ফাইনান্সিয়াল পেপারস, হাউস কন্ট্রাক্ট নিয়ে যেতে বলল।আমি তো বেজায় খুশি এত আগে চিঠি পেয়ে যেখানে দেশে ভেরিফিকেশন ই হইনি তখনো। অনেকে বলল হয়ত হয়েছে আমরা জানিনা, আবার অনেকের ভেরিফিকেশন নাকি লাগেনা…
সব কাগজ নিয়ে গেলাম, অফিসার বলল সব ওকে কিন্তু কোনো যব নেই? আমি বল্লাম ডাড স্কোলারদের আলাদা সাপোর্ট দেয় স্পাউসের জন্য। কিন্ত সে মানবে না, সে বলতে লাগল আমার এনাফ ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট নাই। কি এক্টা অবস্থা। ভাবতে লাগলাম যে দেশ এত কিছু সাপোর্ট দিল শেষে কিনা ভিসা অফিস এই কথা বলবে? আমাকে বলল পরে যোগাযোগ করতে কারন তারা আমার ডকুমেন্ট যাচাই করবে। আমি নগদে ডাড কন্টাক্ট পারসনকে জানালাম, সে আমাকে আমার রেস্পন্সিবল পারসোনের কন্টাক্ট ইনফো চাইলো যাতে সে তার সাথে মেইলে যোগাযোগ করতে পারে। আমি দিলাম। ডাড থেকে বারবার মেইল করা সত্তেও কোনো রিপ্লাই আসেনি আউসল্যান্ডার অফিস থেকে। না পেরে এক সপ্তাহ পর আবার গেলাম। এবার অন্য অফিসার আমার ফাইল হ্যান্ডেল করছে। তাকে আবার সব বুঝালাম যে ডাড কি, খায় না মাথায় দেয়.. এবার সে টাকা হিসাব করতে বসল (এনুওয়ালি কত পাব রেন্টসাবসিডি, স্পাউস এলোয়েন্স সহ)।
উল্লেখ্য আমার এমাউন্ট দেখান ছিলঃ
-মাসিক ৮৫০+ রেন্ট সাবসিডি ২০৮ (মাসিক) + স্পাউস এলোয়েন্স ২৭৬ (যেটা কার্যকর হবে স্পাউস আসার পর থেকে)
কিন্তু এখানে রেন্ট সাবসিডি টা ভ্যালিড ছিল ডিসেম্বর ৩১ পর্যন্ত কারন ডাডের নিয়ম মত স্পাউস আসার আগ পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে আলাদাভাবে রেন্ট সাবসিডির জন্য এপ্লাই করতে হবে, ফাইনালি স্পাউস আসার পর ওরা কন্টিনিউয়াস কত করে পাব রেন্ট সাবসিডি সেটার সার্টিফিকেট দিবে, এর আগে নয়।
ব্যাস ঝামেলার সুযোগ পেয়ে গেল, অফিসার বলল আমাকে এমন কোনো লেটার দেখাতে হবে যাতে উল্লেখ থাকবে যে আমি রেন্ট সাবসিডি পেতেই থাকব ওই ২০৮/- করে কন্টিনিউয়াস। আমি ডাড কে জানালাম, তাদের একই কথা এটা তো ওদের নিয়মে নেই। তারা একমাত্র স্পাউস আসার পরই এমন লেটার দিতে পারবে। ডাড মেইলে আউসল্যান্ডার অফিসে কন্টাক্ট করল বাট নো রিপ্লাই।
এর মধ্যে ৫ ডিসেম্বর দেশে ভেরিফিকেশনে গেল। আমার বাসা,স্পাউসের বাসা, কাজী অফিস একই জেলায় হউয়ায় একই দিনে সব জায়গায় হয়ে গেল। খুব ফেয়ারলি হল (কোনো টাকা-পয়সা চায়নি যেটা অনেকের কাছেই চেয়েছে, অবাক করা কথা হলেও সত্যি)।
ভাবলাম এবার হয়তো কাজ আগাবে। বাট এস ইউসুয়াল নো রিপ্লাই। ইভেন ডাড থেকে ওদের ফোন দিলেও তারা রেস্পন্স করেনা। আমি না পেরে মিড ডিসেম্বরএ আমার কো-অর্ডিনেটরের সাথে দেখা করে সব বললাম। তিনি অমায়িক মানুষ। সে নিজে আউসল্যান্ডার অফিসে ফোন দিল এবং ডাড এর অথোরিটির সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করল। তারা আবার ও সেই লেটার চাইলো। এবার ডাড আরেকটি লেটার দিল যেখানে আমার সব পেমেন্ট + রেন্ট সাবসিডি কি,ওদের রুলস কি, কিভাবে এটা মেইন্টেইন হয় ক্লিয়ার করে দিল। আমি নিয়ে গেলাম এটা আউসল্যান্ডার অফিসে। এবার আরেক অফিসার। তাকে আবার শুরু থেকে সব বুঝান লাগল। সে লেটার পড়ে বলল এবার সব ঠিক আছে। বেজাই খুশি নিয়ে ফিরলাম।
এক সপ্তাহ গেল, দেশে কোন নিউজ নাই। ২১ ডিসেম্বর আবার গেলাম খোজ নিতে। ক্রিস্মাস ব্রেকের আগ মুহুর্তে। অফিসার বলল সে ডাড কে মেইল করেছে আবার যাচাই করতে অই লেটার ওদের কিনা এবং ঠিক আগের মতই রেন্ট সাবসিডি কন্টিনুয়াস কত পাব এটা জানাতে পারবে কিনা। কিন্তু অফিসার এখনও ডাড থেকে রিপ্লাই পাইনি তাই তারা অপেক্ষা করছে। আমিও ট্রাই করলাম বাট বুঝলাম ডাড কন্টাক্ট পারসন ছুটিতে।
এক ভাই এর কাছ থেকে শুনলাম এরা হয়তো বাৎসরিক একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট থাকবে কিনা সেটা হিসাব করে। একজনের জন্য ১০২৩৬/-, ২জনের জন্য ২০৪৭২/-, হিসাব করে দেখলাম রেন্ট সাবসিডি যা পাই ওটা যদি কন্টিনুয়াস পেতে থাকি একমাত্র তাহলেই এই এমাউন্ট এনুওয়ালি মিট করে। তখন ভাবলাম যেহেতু ডাড এই কন্টিনিউয়াস লেটার এখন দিতে পারবেনা তাই একটা মিনি জব কন্ট্রাক্ট যদি ম্যানেজ করা যায় তাহলে অল সুড বি অকে। যেই ভাবা সেই কাজ। অনলাইনে একটা মিনি জবে এপ্লাই করলাম এবং আল্লাহর রহমতে ২ দিনেই কন্ট্রাক্ট পেয়ে গেলাম।
পরদিন (২৭ ডিসেম্বর) কন্ট্রাক্ট নিয়ে গেলাম আউসল্যান্ডার অফিসে। এবার আবার অন্য অফিসার, সে বলল তারা ডাড থেকে রিপ্লাই এর অপেক্ষা করছে, আমি জোর করলাম এবং জব কন্ট্রাক্ট দেখালাম। সে দেখে বলল এটাও ভ্যালিড জানুয়ারি ৩১ পর্যন্ত, সো এমন লেটার আনো যা প্রুফ করে তুমি এর পরেও জবে ইনভলভ থাকতে পারবা।
আবারো জব অথোরিটি কে ফোন দিয়ে রিকুয়েস্ট করলাম যেন আমাকে কন্ট্রাক্ট এক্সটেন্ড করে দেয় এটলিস্ট, আমার জব করা ইম্পরট্যান্ট না,শুধু কাগজ দিলেই হচ্ছে। লাকিলি সে হেল্প করতে রাজি হল। আর আমি অনলি একদিন জব করলাম যাতে একটা পেস্লিপ শো করতে পারি। এবার এই জব কন্ট্রাক্ট এক্সটেনশন লেটার নিয়ে জানুয়ারি ৪ এ আবার গেলাম। এবার আবার অন্য অফিসার। তাকে সব বুঝাই বললাম। সে বেশ হোপ দিয়ে বলল পে স্লিপ টা পেলে যেন শুধু অদের মেইল করে দেই, আর ওরা নাকি বাংলাদেশের এম্বাসিতে মেইল করেছে দেশের ভেরিফিকেশন রিপর্ট জানার জন্য এবং এরা ডাডের রিপ্লাই ও পেয়েছে। দেশ থেকে রিপর্ট পেলেই এরা এদের ডিসিশন জানিয়ে দিবে। এবার অনেক রিলিভড হলাম।
১৫ জানুয়ারি পে স্লিপ মেইল করলাম। এরা বলল এখনও দেশের থেকে রিপ্লাই পাইনি। আবার অপেক্ষা। ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের এম্বাসিতে ফোন দিলাম, সব বললাম,আমার ফাইল চেক করে বলল আমার ভেরিফিকেশন রিপোর্ট নাকি এখনো জমা হয়নি। চিন্তা করা যায়? জার্মানিতে সব কাজ হয়ে গেল কিন্তু দেশেই ৩মাস পার হলেও ভেরিফিকেশন রিপোর্ট জমা হয়নি। অফিসার বলল ওদের মেইল এড্রেসে একটা মেইল করতে যাতে তারা সেটা ফরওয়ার্ড করতে পারে যারা ভেরিফিকেশন করে তাদের কাছে (ল’ইয়ার এজেন্সি), মেইল করলাম। ওরা জানালো মেইল ফরওয়ার্ড করা হয়েছে।একদিন পর খোজ নিয়ে জানলাম আমার ওয়াইফের বার্থ সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন নাকি ২ দিন আগে হয়েছে এতোদিন পরে। তার মানে ডিসেম্বরে একদিনে সব ভেরিফিকেশন হলেও শুধু বার্থ সার্টিফিকেট বাদ ছিল।
আমি এক সপ্তাহ পর ২ ফেব্রুয়ারি এম্বাসিতে আবার যোগাযোগ করি যে ওরা সব ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পেয়েছে কিনা। বলা হল মেইল করতে।করলাম। এবার ওই দিনই একজন ফোন দিল ওয়াইফকে যে তারা রিপোর্ট পেয়েছে। কি করা লাগবে মেইলে জানাবে। এটা বলার আধা ঘন্টা পরই সেই কাং্খিত মেইল এসে গেল। The decision has been taken….
ফাইনালি ৬ ফেব্রুয়ারি ভিসা কালেক্ট করা হয়।
প্রায় সাড়ে ৩ মাস অসম্ভব বাধা বিপত্তির পর অবশেষে সফলতা…
অনেক কিছু শিখেছি এই ভিসা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েঃ
– এই প্রক্রিয়া খুবই আনপ্রেডিক্টেবল ও নেগ্লিজেন্সের শিকার। সো আপনি যত বেশি খুচাবেন তত বেশি আপডেট পাবেন,এবং কাজ আগাবে।
– ডাড স্কলারদের অনেকেই এমন ফাইনান্সিয়াল প্রোব্লেমের শিকার হয়েছে, সো যদি প্রথমেই একটা মিনি জব কন্ট্রাক্ট ম্যানেজ করে রাখা যায় তাহলে অনেক আগেই কাজ মিটে যায়। কারন সব ডাড কন্টাক্ট পারসন একরকম রেস্পন্সিভ হয়না।
-ভিসা ইন্টার্ভিউ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে যেন নিজের স্টেটমেন্ট সেইম থাকে। যেমন বিয়ে কোথায় হয়েছে, কাজি অফিস বললে যেন কাজি, এলাকার লোকজন সবাই যেন এক কথা বলে।
-জার্মানিতে অনেক কিছুই ইংরেজিতে বুঝানো মুশকিল, তাই নিজে কিছু জার্মান জানা বা জার্মান কোনো বন্ধুকে সাথে নিয়ে যাওয়া বেটার।
লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল, কিন্তু এই ডিটেইল হয়তো কারো স্ট্রাটেজি বিল্ডাপ করতে সাহায্য করবে।
সকলের জন্য শুভ কামনা।