জার্মানিতে আসার দ্বিতীয়দিন দুপুরবেলা এক বাঙ্গালি ভাইয়ের বাসায় খেতে গিয়েছিলাম। ব্যাপারটা এমন না যে আমি আসতে না আসতেই কেউ আমাকে দাওয়াত করে নিয়ে গিয়েছিল। ব্যাপারটা হচ্ছে ওনার একটা প্রয়োজনীয় জিনিস আমাকে আনতে বলেছিল এবং পরদিন দুপুরে সেটা নিতে এসে আমি তখনো খাইনি বলে উনি বললেন, বাসায় রান্না করা আছে। আসো, খেয়ে নাও!
আমার বাসার সামনেই ওনার বাসা বলে আমিও কথা না বাড়িয়ে চলে গেলাম। উল্লেখ্য, উনিও তখন জার্মানিতে নতুন। আমার মাত্র একমাস আগে এসেছেন উনি। তো খেতে বসেই বললেন, একটু অপেক্ষা করো; সালাদ করে নিই।
এবার সালাদ করতে গিয়ে শশা কেটে ওনার কপাল গেলো কুঁচকে। আরে! এখানকার শশা এমন কেন! ওনার রুমমেট এবং আমি দুজনেই দেখলাম আসলেই শশাটা কেমন যেন! একদমই আমাদের দেশের শশার মতো না। তিনজন তিন টুকরো কামড় দিয়েও দেখলাম। না, স্বাদও বিচ্ছিরি! এখানকার শশা দিয়ে আর যাই হোক, সালাদ খাওয়া যাবে না। তো সেদিন সালাদ ছাড়াই আমরা দিব্যি ভাত খেয়েছি এবং সেই শশার গল্প ভুলেও গেছি।
তার কিছুদিন পর আরেক বাঙ্গালি ভাইকে সুপারমার্কেটে শশা কিনতে দেখে বললাম, ‘ভাইয়া, এই শশা কিইনেন না। এখানকার শশা মজা নাই।’ উনি আমার দিকে এক নজর আর হাতের শশার দিকে আরেক নজর তাকিয়ে বললেন, ‘এটা শশা না। এটার নাম জুকিনি। এটা একটা সবজি; রান্না করে খেতে হয়।’
আমি হেসে বললাম, আরে, অমুক ভাইতো তাহলে শশা মনে করে জুকিনি নিয়ে গিয়েছিল সেদিন! উনি অন্য দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কাউরে বইলো না। এই কাজ আমিও করছি। এখানকার শশা দেখতে অন্য রকম এবং জুকিনি দেখতে অনেকটা শশার মতো বলে প্রথম প্রথম জার্মানি এসে বেশির ভাগ মানুষই শশা মনে করে জুকিনি কিনে নিয়ে যায়।
তো যারা এই ভুল করেনা, তাদের দলে নিজেকে আবিষ্কার করে বুঝলাম মানুষ আসলেই দুইভাবে শেখে— হয় ঠেকে, নয় দেখে। ভাগ্যিস, আমার আগেই দেখার সুযোগ হয়েছিল, ঠেকা লাগেনি।