জার্মানিতে যারা ফুলটাইম চাকুরী করছেন বিভিন্ন সেক্টরে তাদের জন্য নতুন বছরের শুরুতে সবসময় একটা চিন্তার বিষয় হচ্ছে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করা। মূলত রেগুলার ইনকাম ট্যাক্স এর বাইরেও জার্মান সরকার, জার্মান এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি, এমপ্লয়ার এবং এমপ্লয়ি সবারই তাদের কিছু হিসেব নিকেশ থাকে বছর শেষে।
বিভিন্ন বেসিক খরচ যেগুলো সরাসরি ইনকাম রিলেটেড (যেমন কাজের জন্য ল্যাপটপ বা ফোন কেনা) সেগুলো ট্যাক্স রিটার্নে উল্লেখ করে আবেদন করলে বেশ খানিকটাই ফেরত পাওয়া যায়।
আবার সরকারি কোন সহযোগিতা গ্রহণ (যেমন kurzarbeitgeld বা শর্ট-টাইম ওয়ার্ক সাপোর্ট), করলে এটা আবার নেগেটিভ হতেও পারে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্লাস-মাইনাস করে টাকা ফেরত পাবারই কথা এবং সেটা কোন খরচ ছাড়াই আগে থেকে হিসেবও করা যায়।
যাই হোক, ২০২১ এ আমরা ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করতে পারবো ২০২০, ২০১৯, ২০১৮, ২০১৭ সালের জন্য। তবে অন্যান্য বছরের থেকে ২০২০ সালের হিসেবটা একটু আলাদা কারণ করোনার কারণে আমাদের অনেকেরই চাকুরী ফুল্টাইম থেকে কমে সীমিত-সময়ের (Kurzarbeit) হয়েছে যেই সময়ে আমরা শর্ট-টাইম ওয়ার্ক বেনেফিট (Kurzarbeitgeld) পেয়েছি জার্মান এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি থেকে। আবার অনেকের চাকুরীই চলে গিয়ে আন এমপ্লয়মেন্ট বেনেফিট পেয়েছেন। অনেকে চাকুরীর পরিবর্তন করেছেন, ইত্যাদি। নতুন, পুরাতন, বছরের মাঝে চাকুরী শুরু বা পরিবর্তন, Kurzarbeitgeld , যেই ক্যাটাগরিতেই আপনি পরেননা কেন, জার্মান ট্যাক্স ফাইলিং একটা স্ট্রেসফুল কাজ হতে পারে, বিশেষ করে কাটখোট্টা জার্মান ভাষায় বুঝেশুনে তথ্য পূরণ ও পোস্ট এর মাধ্যমে সেটা লোকাল ট্যাক্স অফিসে পাঠানো।
তো এই কষ্ট থেকে বাচতে অনলাইনে ইংরেজিতে বেশ কিছু সার্ভিস আছে যেখানে গিয়ে খুব সহজেই তথ্য ফর্ম পুরন করে অনলাইনেই ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করা যায় কিছু ফি এর বিনিময়ে। ভাল দিক হচ্ছে, এসব টুল বা এপ্লিকেশনে তথ্য দিয়েই দেখা যায় যে আনুমানিক কত টাকা ফেরত পাওয়া যেতে পারে (অথবা ক্ষেত্রবিশেষে কত টাকা আরও দিতে হতে পারে) এবং এতে কোন ফি’ই দিতে হয়না যতক্ষণনা ফাইনালি সাবমিট করা হচ্ছে।
উদাহরণ:-
এবার আসি প্রসেস এ।
ট্যাক্স ফাইল করার জন্যে মূলত একটা ডকুমেন্ট লাগে lohnsteuerbescheinigung বা income tax certificate । এটি আপনার এমপ্লয়ার জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই আপনাকে দেবার কথা কিংবা চাকুরী শেষ হবার মাসে। অনেক কোম্পানিই বেতনের স্টেটমেন্ট এবং ইনকাম ট্যাক্স রিলেটেড কাগজপত্রের জন্য অনলাইন সার্ভিস ব্যবহার করে থাকে (যেমন DATEV) , যেটাই হোক, সেখান থেকেই এই এক পাতার ডকুমেন্টটা সংগ্রহ করবেন। একই বছরে একাধিক জায়গায় চাকুরী করলেও সমস্যা নেই, সব যায়গা থেকেই এই ডকুমেন্টটা পাবেন এবং সংগ্রহ করে রাখবেন। এই ডকুমেন্টে আপনার ট্যাক্স আইডি থেকে শুরু করে সারা বছরের হিসেব নিকেশ দেয়া আছে একটা টেবিলে। এটা হাতে থাকলে এবার অনলাইনে টুল বা এপ সিলেক্ট করার পালা। ইংরেজি সাপোর্টেড বেশ কয়েকটি এপ্লিকেশন আছে, যেমন:
– https://www.steuergo.de
– https://wundertax.de/en
– https://taxfix.de/en/
আরও বেশ কিছু আছে, তবে আমি নিজে এইগুলো ট্রাই করেছি, তাই এগুলোই শেয়ার করলাম। সবগুলো অপশনই খুব সহজ করে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেয়া থাকে স্টেপ বাই স্টেপ, তাই কোন টেনশন নেই। সাইন আপও ফ্রি, আপনি প্রতিটি স্টেপ এর পরেই আনুমানিক রিটার্ন এমউন্ট দেখতে পারবেন। সব তথ্য দেয়ার পরে ভাল ভাবে, কয়েকবার সব রিভিউ করবেন যেন কোন ভুল না থাকে, সময় নিয়ে পুরো কাজটা করবেন। তারপর ট্যাক্স সাবমিট করতে গেলে প্লাটফর্মভেদে ২৫-৪০ ইউরো ওয়ানটাইম ফি চার্জ করবে এবং আপনার হয়ে ওরাই জার্মান ভাষায় সব কাগজপত্র ট্যাক্স অফিসে পাঠিয়ে দেবে।
কাজ শেষ, এবার ট্যাক্স অফিস থেকে চিঠি আসার অপেক্ষা করতে থাকুন। সাধারণত এই সাবমিশন শেষে, প্রায় ৪-১২ সপ্তাহ এর মাঝেই আপনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিবে ট্যাক্স অফিস। অবশ্য ক্ষেত্র বিশেষে কিছু স্পেশাল খরচ বা সাধারণ লিমিটের চেয়ে বেশী খরচ দেখানোর কারণে ট্যাক্স অফিস প্রমাণ হিসেবে খরচের রশিদ চাইতে পারে। তাই অযথাই বেশী বেশী রিটার্ন পাওয়ার আশায় প্রমাণ ছাড়া অযথা খরচ দেখাতে যাবেন না।
যারা এতদূর পড়েছেন তাদের জন্য বোনাস ইনফোঃ অন এভারেজ ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করলে ১০০০ – ২০০০ ইউরো রেঞ্জ এ ফেরত পাওয়া যায়। তো আর কিসের ভাবনা, রেডি হয়ে ট্যাক্স রিটার্নটা ফাইল করেই ফেলুন। অনেক টাকাপয়সা ফেরত পেলে আমাকে দিতে হবেনা, নিজেই ভালমন্দ কিনে খাইয়েন