প্রথম পর্ব :
হানিমুন থেকে সংসারে :
অনেক দিন থেকে ভাবতেছি কিছু একটা লিখবো । কিভাবে আমার জন্য অসম্ভব সব কিছু ১ বছরের মধ্যে সম্ভব হয়ে গেল ।
মনে পরে সেইদিনটি ১৫ অগাস্ট ২০২০
এমিরেট্স এর বোয়িং ৭৪৭ এর উড়োজাহাজে বসে আম্মাজানকে কল করে বলেছিলাম এখন থেকে এভাবেই কথা হবে । ভার্চুয়াল জীবনটাকে মেনে নিয়ে চলতে হবে । মনে পরে আপু আমাকে বিদায় দিতে এসেছিল তার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারতেছিলাম না । নিজেকে বারবার বলেছি, আমি এমনটা চেয়েছি, আমাকে এইটা মেনে নিতে হবে ।
ফ্রাঙ্কফুটে লাগেজ নেয়ার পরে মনের মাঝে একটা অসাধারণ অনুভূতি হয়েছিল । যেন স্বপ্নের রাস্তায় পা দিয়ে ফেলেছি । কাওরান বাজারে বাসে উঠার জন্য যে আমি হেল্পারের সাথে মারামারি টাইপ করতাম (আসলে পা ধরে আকুতি করা :P) সেই আমি আজকে একটা দেশে এসেছি যার গল্প হয়তো টেলিভিশনের পর্দায় অথবা ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চে দেখতাম । মনে পরে আমার বন্ধুরা আমার জন্য ইউরোপের মধ্য স্থানে অবস্থিত এসেনের রেলস্টেশন দাড়িয়ে ছিল ।
তারপরের কিছুদিন কেটেছে অন্বেষণে । অবাক হয়েছি কিভাবে মাটির নিচে দিয়ে এরা সব যায়গায় রেললাইন করে রেখেছে , অবাক হয়েছি রাস্তায় কোন কাগজের টুকরা পরে থাকতে না দেখে ( আমি তো কাগজের টুকটার সাথে আরও অনেক কিছু দেখে বড় হয়েছি 😛 ) অবাক হয়েছি কিভাবে একটা শহর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে হয় তা দেখে । প্রথম ১-২ মাস এনআরডব্লিউের প্রত্যেকটা শহর ঘুরে ঘুরে কেটে গেছে । নিজেকে অনেক অনেক ভাগ্যবান মনে হত সেই সময়টাতে। ঠিক যেন হানিমুনে এসেছি বউ ছাড়া 😛
তারপর হা তারপর থেকে অবাক হওয়া কিছুটা কম কম মনে হতে লাগলো । মনে হতে লাগলো এমনই তো হওয়ার কথা। উচ্চগতির ট্রেন, পৃথিবীর সব নামী দামি স্টোর , টাকা থেকে ইউরোর হিসেব সবই তো স্বাভাবিক ।
আমি শুরুতে থাকতাম একজন বাঙালি ভাইয়ার সাথে । মনের দিক থেকে অসাধারণ ভাইয়ার কাছে অনেক কিছু শিখতে থাকলাম যেমন কিভাবে চলতে হবে, কি কি খেতে হবে, জার্মান নিয়মনীতি সব কিছুর সম্পর্কে ধারণা হতে থাকলো । যেমন ১০ বছরের অভিজ্ঞ কারো কাছে নতুন সংসার নিয়ে সাজেশন নেয়া । 😛
পরের ১ মাস চলল কাজের সন্ধান । ২.৫ বছরের সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজ করে আসা আমি কাজ থেকে কামলার সন্ধানে মত্ত । পেয়ে গেলাম একটা কাজ ডিএইচএলে । কিন্তু জার্মান ভাষার সেই দুর্বলতা। ইয়া/নাইন ( জার্মান ভাষায় হাঁ/না ) দিয়েই চালিয়ে যেতে থাকলাম । কাজের মাঝে , পড়াশুনার চাপে , রান্নার ধোঁয়া সব মিলিয়ে জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল । সারাদিন আর সারারাত যে কিভাবে কাটতে লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব না । জার্মানিতে বিদ্যমান বন্ধুর কাছে মনের দুঃখ বলার পরে তাদের কথা শুনে দেখা যায় আমি অনেক ভাল আছি। বাসার খাবার, পুরান ঢাকার বিরিয়ানি, শওকতের কাবাব যেন চোখের সামনে ঘোরাঘুরি করতে লাগলো ঠিক যেন বিয়ের পরে অবিবাহিত জিবনে ফেরত যাওয়ার আকুতি । সপ্তাহে ২ বার করে বাজার করার পরে ও দেখি কিছু না কিছু রেখে এসেছি । কি যে একটা অবস্থা।
আর যদি কেউ আমাকে গুগল সার্চ বার মনে করে রাস্তায় কিছু জিজ্ঞাসা করে বসে তখন চলে খেলা। আমি ২-৩ বার ইয়া/নাইন বলার পরে প্রশ্ন জিজ্ঞাসাকারী হয়তো সঠিক তথ্য পায় আর না হলে আমাকে সামনাসামনি পাগল আর মনে মনে ছাগল টাইপ কিছু ভেবে প্রস্থান করে । আর আমি ও ভাবতে থাকি জীবন মানেই তো জি-বাংলা । কাহিনি ভাল লাগলে পরে আবার লিখবো। আপাতত কামলা দিতে যেতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এখানে বিয়ে সংক্রান্ত যেসব অভিজ্ঞতার কথা লিখা হয়েছে সব আমার বিবাহিত বন্ধু অথবা বড় ভাইদের কাছে থেকে নেয়া।
ধন্যবাদ
মোঃ রাশেদুল ইসলাম