জার্মানীর বেশিরভাগ স্টেইটে-ই একটা চমৎকার নিয়ম চালু করেছে। সুপারমার্কেট এবং ছোটখাটো দোকানপাট ব্যাতিত, যে কোন শপিংমল কিংবা বড় রিটেইল শপগুলোতে ঢোকার জন্য, করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগবে। বেশ কিছুদিন সুইডেনে থাকার কারণে, এই নিয়মটা সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। কালকে একটা ইলেকট্রনিকস স্টোরে (সাটুর্ণ) যাচ্ছিলাম, কিছু মাল-সামানা কিনতে। পথিমধ্যে, গার্ড আটাকাইয়া বলে, “ঐ বেটা, যাস কই। রেজাল্ট দেখা।” আমি তো আকাশ বাতাস ভাবতে লাগলাম, শালার কোন রেজাল্ট টা দেখাবো। SSC/HSC এর গোল্ডেনটা দেখাবো, নাকি ব্যাচেলরের সম্মানটা দেখাবো। কারণ TUM এর ফেল্টুমার্কা সিজি দেখাইলে, জীবনেও ঢুকতে দিবে না।
কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম, কিসের রেজাল্ট ভায়া। ব্যাটা বলে, ঐ লাইনে দাঁড়াও। ওখানে করোনার র্যাপিড টেস্ট করাইয়া যদি নেগেটিভ রেজাল্ট পাও, তাইলে দোকানে আসিও।আবার আমারে আংগুল দিয়া দেখাই দেয়, “No test. No shopping”।এক “No mask. No shopping” এর জ্বালায়-ই কুল পাইতেছিলাম না। আবার আসছে। নতুন রুল মারাইতে।
যাই হোক, বাধ্য হয়ে লাইনে দাড়ালাম। শপিং মলের ওখানে বেসিক্যালি ২ টা লাইন। একটাতে লোকজন করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে, মার্কেটে ঢুকার জন্য অপেক্ষা করছে। আরেকটা লাইনে, লোকজন সারিবদ্ধভাবে করোনার কুইক টেস্ট করাচ্ছে। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই রেজাল্ট। নেগেটিভ আসলে, আপনি ঐদিন, ঐ নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে, যে কোন যায়গায় ইচ্ছেমত শপিং করতে পারবেন(আই উইশ, গাউছিয়া, চাঁদনী চক এরিয়াতে যদি এমন একটা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সিস্টেম করে দেয়া যেত। কিন্তু করে অবশ্য লাভ নাই। পাশেই নীলখেত!!! )।
বড় কথা হল, এই পুরো টেস্টিং সিস্টেমটাই ১০০ ভাগ ফ্রি!!! কিন্তু এরপরে মার্কেটে ঢুকে, বেশ মজা পেয়েছি। প্রথমত, মার্কেটে অবস্থানরত, সবাই-ই আপাতদৃষ্টিতে করোনা মুক্ত। আর সার্টিফিকেট/টার্টিফিকেটের ঝামেলার জন্য, আজাইরা, খুশির ঠেলায়- ঘোরতে কেউ শপিং মলে আসতেছে না। সত্যিকারভাবেই যাদের কিছু দরকার, তারাই আসতেছে। একটু পরে, শপিংমল থেকে বের হয়ে, মিউনিখের মারিয়েনপ্লাটজ আর ওডিওপ্লাটজ এলাকাটা একটু ঘুল্লি মেরে দেখি। ভাই রে ভাই! পুরা টং দোকানের মত, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, করোনা টেস্ট সেন্টার। ফার্মেসি, দোকানপাট, প্রত্যেকটার চিপায় চিপায় টেস্ট সেন্টার। দেশে যেরকম সারি সারি টং এর দোকান দেখলে, এক কাপ চা খাইতে মন চায়। সেরকম, এখানে আসলেও মনে হয়, “আহা, একটু টেস্ট করে দেখি না। কি আছে জীবনে।” আমি ১৫-২০ মিনিটের মত, ঐ এলাকায় টো-টো করেছি। এটলিস্ট ১০-১২ টা টেস্ট সেন্টার চোখে পড়েছে৷ মানে ব্যাপারটা এমন যে, আপনি না চাইলেও টেস্ট না করাইয়া, বাসায় আসতে পারবেন না।
এবার আসি একট ভিন্ন প্রসংগে। আসছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আমরা প্রবাসী বাংলাদেশীরা, যতই “সামাজিক দুরত্ব”/”সীমিত পরিসর”/”বাংলাদেশের লকডাউন দুই নাম্বার” নিয়ে পাড়াপাড়ি করি না কেন, দিন শেষে ৮০ ভাগ লোকজন-ই ঈদের নামাজ, টুকটাক বন্ধুবান্ধবদের সাথে সেমাই-আড্ডা, ভাই-ভাবীদের কদমবুসি করে সালামী আদায়ের ব্যাপারে তৎপর থাকব, এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ভুল নাই। অনেস্টলি স্পিকিং, ঈদের আনন্দটা কেউ-ই মিস করতে চায় না। আর এবারের ঈদটা, খুব সম্ভবত পড়তে চলেছে সরকারি ছুটির দিনে। তাই আনন্দ করার সুযোগটাও একটু বেশি। কিন্তু সাথে সাথে, এটাও নিশ্চিত করা উচিত, সবাই যেন নিরাপদে থাকে। আর এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সবচেয়ে বড় মূলমন্ত্র হল, করোনার টেস্ট করানো। ঈদের সময়কার কিংবা ঈদ পরবর্তী যে কোন ধরণের সামাজিক গেট টুগেদারের আগে, আমরা হালকা করে একটা টেস্ট করে নিতে পারি। এতে হোস্ট ও নিশ্চিন্ত। গেস্টও নিশ্চিন্ত।
জার্মানিতে বিভিন্ন শহরে যেহেতু, মুদি দোকানের মত যেখানে সেখানে টেস্ট করানোর সুযোগ আছে (সপ্তাহে ৭ দিন), সেহেতু আমাদের এই সুযোগটাকে গ্রহণ করা উচিত। এতে করে, আমরা একটা নিরাপদ এবং আনন্দময় ঈদ কাটানোর সুযোগ পাব।
কিভাবে খুজে পাব টেস্ট সেন্টারঃ Google এ সার্চ করুন Corona Schnelltestzentrum. আপনার সামনে শত শত সাজেশান চলে আসবে। রেজিষ্ট্রেশন করে (না করেও যাওয়া পসিবল। ওখানে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করতে হবে আর কি), চলে যান সেন্টারে। ১৫-২০ মিনিটেই, আপনার মোবাইলে চলে আসবে সেই কাংখিত ফলাফল। আর আপনার যদি গুগল করতে মন না চায়, তাইলে “Corona quick test, corona schnelltest, corona rapid test” এই শব্দগুলো মোবাইলের সামনে একট আওড়ান। দেখবেন, বড়চোর ফেইসবুক, একটু পরেই আপনাকে টেস্ট সেন্টারের এড দেখানো শুরু করছে (এতির মত চোর, আর ন দেইক্ষি বাজী )।
তাহলে দেরী কেন। টেস্ট করুন। নিরাপদে থাকুন।
আপনাদের ঈদ ভাল কাটুক।
ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা সবাইকে।