Rafi Mohd Yeasin Rahman
নার্সারিতে থাকতে লিজা ম্যাডাম নামের একজন ম্যাডাম ছিলেন, খুব আদর করতেন আমাকে। লিটল এঞ্জেলস স্কুলে পড়তাম, লাল হাফ প্যান্ট আর সাদা প্যান্ট পড়ে স্কুলে যেতাম, লাল টাই ছিল ছোট্ট একটা ইউনিফর্ম এর সাথে। লিজা ম্যাডাম A B C D খুব সুন্দর করে সুর করে পড়াতেন। সুরটা এখনো কানে বাজে। তারপর ধীরে ধীরে এই ইংরেজি ভাষার সাথে সখ্যাতা বাড়তে থাকে। আজকের জন্যে ইংরেজি তথা English For Today ভালো লাগলেও SSC, HSC তে চৌধুরী এন্ড হোসেন সাহেব প্রচুর যন্ত্রণা দিয়েছেন। সেন্টেন্স স্ট্রাকচার, টেন্স, হাবিজাবি বহু গ্রামারের প্যাঁচঘোচে জীবন অতিষ্ট।
HSC শেষ হবার পর তাদের হাত থেকে রেহাই পেলাম ভেবেই ২-৩ রাত শান্তিতে ঘুম দিলাম। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে দেখি আরে সব ইংরেজিতে। পড়লাম বিপদে, হাল্কা বিপদ বেশী না। আমার “ইয়েস নো ভেরি গুড, পাউরুটি বিস্কুট” টাইপের ইংরেজি দিয়ে পাশ করে গেলাম কোর্স। আসলে মুখস্থ করতাম আর উগড়ে দিতাম খাতায়। বুঝে না পড়লে আমার পড়া মাথায় ঢোকে না, কিন্তু যে সময়ে পড়া শুরু করতাম সে সময়ে বুঝে পড়ার টাইম থাকত না। তো পাশ করে গেলাম এখানে। দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিব, দিতে হবে IELTS। খেলা শুরু এখান থেকেই……IELTS কি কমবেশি আমরা সবাই জানি যে ইংরেজিতে যে আমি পারদর্শী এটা বোঝানোর একটা কাগুজে সার্টিফিকেট। ইউনিভার্সিটি আর সাবজেক্ট অনুযায়ী এর রিকোয়ারমেন্ট উঠানামা করে। তা নাহয় বুঝলাম, কিন্তু এই যে পরীক্ষা, এটা আমার চৌধুরী হোসেনের চেয়ে হাজারগুন কঠিন। কেন কঠিন সেটা একটু পরেই বলছি। আমার নিজের উদাহরণ দেই, আমি IELTS এর প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি ২০১৯ এর শুরুর দিকে। পরীক্ষা দেই ২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে IDP থেকে। শুরুতে কোচিং করতে হবে তাই কোচিং খুঁজতে খুঁজতে ৩ টা কোচিং সিলেক্ট করি
১. Wings Dhanmondi (ULAB এর পাশে)২. Saint Jhones ( লালমাটিয়া) ৩. Mentors ( কলাবাগান)
আমি ভর্তি হই Wings এ, বাসা থেকে কাছে আর যাতায়াত সহজ তাই। এই কোচিং-টা প্রফেশনাল লোকজন টার্গেট করে শিডিউল ফ্লেক্সিবিলিটি আর তাড়াতাড়ি মডিউল কভার দেওয়ার কারণে। তবে Saint Jhones এ বেশীভাগ ছাত্র। সময়টা একটু বেশী নিয়ে হাতে ধরে শেখায় তাই শেখার সুযোগ আর প্র্যাক্টিস বেশি করার সুযোগ পেতাম, এটা পরে বুঝতে পারি অবশ্য। তো যাই হোক, IELTS এর মডিউল পার্ট ৪ টা। বাংলায় বললে শোনা (Listening), লেখা (Writing), পড়া (Reading) আর বলা (Speaking)। আর IELTS দুই প্যাটার্নের হয়, একাডেমিক (Academic), যেটা আমরা স্টুডেন্টরা দেই; আর জি.টি. (General Training), যেটা অভিবাসন এর ক্ষেত্রে লাগে। এই দুই প্যাটার্নের ক্ষেত্রে Speaking আর Listening একই প্রশ্নে হয়, শুধু Reading আর Writing পার্ট আলাদা প্রশ্নে হয়। Listening পার্টে ৪০টা প্রশ্ন থাকবে ৪ পার্টে, ৩০ মিনিট সময় পাবেন উত্তর দিতে। আর ১০ মিনিট MCQ শিটে উত্তর ট্রান্সফার করার জন্যে পাবেন, উত্তর শুনে শুনে প্রশ্নেই দাগাবেন, তারপর সেগুলি শিটে তুলবেন। সহজ তাই না? জী না, কঠিন।
কেন কঠিন বলি, আমাদের মাতৃভাষা বাংলা এবং আমরা বাংলা শুনে বাংলায় রেস্পন্স করতে অভ্যস্ত। ইংলিশ গান শুনি ঠিকই কিন্তু লিরিক বুঝি না, হলিউডের ছবিতে বাংলা সাবটাইটেল ইউজ করে আমাদের যে Hearing Receptors আছে সেটাকে এমন একটা ঘুমন্ত অবস্থায় নিয়ে গেছি আমরা যে এখন স্বাভাবিক কথা বা কনভার্সেশন প্রসেসিং করতে হিমসিম খেতে হয় । আর ইংরেজিতে আমরা আমেরিকান
(১) এক্সেন্ট শুনে অভ্যস্ত, কিন্তু ব্রিটিশ (২), স্কটিশ(৩) কিংবা অস্ট্রেলিয়ান(৪) এক্সেন্ট এও পরীক্ষায় অডিও দিতে পারে।
এক্সেন্ট এর নামের পাশে ১,২,৩ দিয়ে কোনটা কতটা কঠিন এটা ইন্ডিকেট করলাম। আমার লিসেনিং অস্ট্রেলিয়ান এক্সেন্টে ছিল, আমার কপাল খারাপ। কেন ছিল তার একটা ব্যাখ্যা আছে অবশ্য আমার নিজের, পরে বলছি।Writing পার্টে ২টা প্রশ্ন থাকবে, ৬০ মিনিট সময়। প্রথম প্রশ্ন ১৫০ ± ১০ ওয়ার্ডে শেষ করবেন, ২য় টা ২৫০ ± ১০ ওয়ার্ডে। মার্ক ডিস্ট্রিবিউশন হবে প্রথমটায় ৪০ পরেরটায় ৬০ এমন করে। তাই আপনাকে সময় ও ভাগ করে নিতে হবে, প্রথমটার জন্যে ২০ মিনিট, পরেরটার জন্যে ৪০। বাচ্চাকাল থেকে আমরা এটা শিখে বড় হয়েছি যে যত লিখব তত বেশী মার্ক, এই কনসেপ্ট ভুলে যান, আপনাকে ওয়ার্ড লিমিটের মাঝেই গুছায়ে প্রশ্নের চাওয়া, আপনার দর্শন, যুক্তি আর বাস্তবতা সব তুলে ধরা লাগবে। এই পার্টে মানুষজনের একটু খারাপ হয়। আর কোন টপিক আপনাকে লিখতে দিবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই, আগে থেকে মুখস্ত করে গিয়ে কোন লাভ হবে না, এখানে কনফিডেন্স আর ঠান্ডা ব্রেন সবচেয়ে কাজে দিবে। “সিংগাড়ার মধ্যে আলু ঢুকল ক্যাম্নে!”
টপিকও যদি আসে সেটা নিয়েই লিখতে হবে,প্যানিক করা যাবে না।Reading পার্টে প্রশ্ন থাকবে ৪০ টা সময় ৬০ মিনিট, কিন্তু এখানে উত্তর শিটে ট্রান্সফার করার জন্যে আলাদা সময় পাবেন না। প্রশ্ন হবে ৩টা সেকশনে, প্রতি প্রশ্নের জন্য বিশাল বড় কিছু প্যাসেজ দেওয়া থাকবে। সেখান থেকে আন্সার বের করতে হবে। এটা পারা যায়, তেমন প্যারা না এটা,তবে প্রতি প্যাসেজ ১৭-১৮ মিনিটে শেষ করলে চেক দিতে পারবেন কোন কিছু বাদ আছে কিনা, কিংবা, কনফিউজড উত্তর আবার চেক করে নিতে পারবেন, “ওবু দশ বিশ” করে উত্তর দেওয়া লাগবে না। Speaking পার্টে ১৫ মিনিটের স্লটে আপনাকে ৩টা পার্টে কিছু প্রশ্ন করবেন ইন্টারভিউয়ার। কতগুলি প্রশ্ন করবে এটা ইন্টারভিউ যিনি নিবেন তার উপর নির্ভর করবে। প্রথমে নরমাল হাই হ্যালো, নিজের পরিচয় দিবেন, এর পর একটা টপিক দিবে আপনাকে যেটাকে কিউ-কার্ড বলে, তারপর ২ মিনিট প্রিপারেশন নিয়ে ৫ মিনিট টানা ওই টপিকটা সম্পর্কে বলবেন, শেষে ইন্টারভিউয়ার আপনাকে আপনার এর ৫ মিনিটের বক্তব্যের জের ধরে কিছু প্রশ্ন জানতে চাবেন। নিজের উপর কনফিডেন্ট থাকলেই হবে, ভালো করবেন।অনেক কঠিন লাগছে?? আমি আমার মত করে একপ্লেইন করি, আশা করি আপনারা ধরতে পারবেন খুব সহজেই। ওইযে চৌধুরী এন্ড হোসেন এর বইয়ের যে গ্রামার আমি গোজামিল দিয়ে আসছি, সেটাই আবার রিভিউ করা লাগসে আমাকে, এজন্য কঠিন আর কিছু না।
আপনার বই হবে Cambridge IELTS 6-14 /15, ভাজা ভাজা করে ফেলবেন যতটা সম্ভব, প্রতি বইয়ে ৪ সেট আগের বছরের প্রশ্ন থাকে। সবই সহজ, শুধু একটু স্ট্র্যাটেজি আর ট্যাক্টিক্স খাটালেই অনেক ভালো করা সম্ভব। ইংরেজি শুনলেই আমাদের মাঝে একটা প্যানিক কাজ করে সেটা এখান থেকেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ভোকাবুলারি প্রয়োগ নিয়ে কিংবা জানা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে, আমার ভোকাবুলারি খুব বাজে এখনো তবে পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে নিতে সেটা একটু রিচ হয়েছে। আপনি যত শব্দ জানবেন আর যতটা বেশী নতুন শব্দ ব্যাবহার করতে পারবেন, আপনার ইংরেজি তত বেশী সমৃদ্ধ হবে। বই, আর্টিকেল, ডকুমেন্টারি, মুভি এগুলি সবই আপনাকে হেল্প করবে যদি আপনি শিখতে চান। শেখাটা বোরিং, তবে সেটাকে ইন্টারেস্টিং করার দায়িত্ব আপনার। ইউটিউবে Mind Your Language সিরিজ, Tedx, Tedtalk, Trevor Noah কিংবা Rusell Peters এর শো দেখতে পারেন। মজা, নলেজ, ইংরেজি, ভোকাবুলারি সবই পাবেন। বই পড়েন চাইলে, আমি J.K. Rowling এর Harry Potter, Dan Brown এর Robert Langdon Series, Paolo Coelho পড়ে মজা পাইসি। CNN, The New York Times, The Washington Post সহ আরো অনেক পেজ আমি ফলো করি, পড়ি জানি, ভালো লাগে।
রাইটিং এর ক্ষেত্রে আপনার মক সেকশনের কোয়েসচেন সলভ করেন। স্পিকিং এর জন্যে একা একা নিজের মাথায় একটা টপিক নিয়ে কনভারসেশন চালানোর চেষ্টা করেন, অনেক গ্রুপ আছে ফেসবুকে যারা IELTS দিবে, তাদের সাথে জয়েন করলে ২-৩ জন মিলে গ্রুপ তৈরি করে কথা বলার প্র্যাক্টিস করেন, আস্তে আস্তে ইম্প্রুভ করবেন শিওর। স্পিকিং এর ক্ষেত্রে আমার পার্টনার আমার বেস্টফ্রেণ্ড ছিল, সে ইংরেজিতে পাকা। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি যেমন, ফ্লুয়েন্সি ও ইম্প্রুভ করেছে। জিমে গেলে ১ দিনে যেমন বডি হয় না, ঠিক তেমনি যে কোন কাজে একদিনে আপনি এক্সপার্ট হতে পারবেন না। ভুল হবে প্রচুর, করেন ভুল, ভুল থেকেই শিখবেন। আমার নিজেরো এখনো ভুল হয়। একটা সেন্টেন্স গুছাতে মাঝে মাঝে হিমশিম খাওয়া লাগে,তাই বলে কি থেকে থাকা যায়?? প্রচুর মক-টেস্ট দেন, অনলাইনে ফ্রীতে https://ieltsonlinetests.com/ থেকে প্র্যাক্টিস করতে পারেন।
আমি এটা থেকে মক দিসি নিজে নিজে। লেখা অনেক বড় হয়ে গেছে, ছোট্ট একটা বিষয় শেয়ার করি। IELTS দিতে পাসপোর্ট লাগে, সেটা করা না থাকলে করে ফেলেন। IELTS দেওয়ার জন্যে বাংলাদেশে British Council আর IDP টেস্ট নেয়, ২ টাই ভালো। আমি IDP থেকে দিসিলাম কারণ শুনসিলাম IDP থেকে দিলে নাকি .৫ বেশী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরো একটা বিষয় শুনসিলাম যে মাসের প্রথম আর শেষ পরীক্ষার প্রশ্ন নাকি সহজ হয়। আমি মাসের শেষেই দিসিলাম, কিন্তু লিসেনিং এ অস্ট্রেলিয়ান এক্সেন্ট ছিল। আর ইদানিং পেপার বেজড পরীক্ষার চেয়ে কম্পিউটার বেজড পরীক্ষার স্লট বেশি, তাই আগে আগে বুকিং দেওয়া ভালো। আসলে বুকিং দেওয়ার পর থেকেই আসল পড়াশুনা শুরু করে মানুষ কারণ সামনে একটা ডেডলাইন থাকে। প্যানিক না করে পড়াশুনা করেন, পড়তেই যেহেতু আসবেন একটা স্ট্রং IELTS রেজাল্ট আপনার যাত্রা পথটাকে আরো স্মুথ করে দিবে। আরো বিস্তারিত জানার জন্যে নিচের ওয়েবসাইটে একটা ঢুঁ দিয়ে আসতে পারেন।
https://www.cambridgeenglish.org/…/ielts/test-format/….ভালো থাকবেন সবাই, দোয়া করবেন।
( প্রশ্ন কিংবা জিজ্ঞাসা কমেন্টে করবেন প্লিজ, আপনার প্রশ্নের সাথে অনেকেই প্রশ্নের মিল থাকতে পারে, তারা জেনে নিতে পারবেন ইনফরমেশন। দয়া করে ইনবক্স করবেন না, আমি ইনবক্সে নিয়মিত না)