আমার এই লেখাটি পড়ার পরে যদি আমাকে আপনার বাঙাল বিদ্বেষী মনে হয় তবে সেটার দায়ভার একান্তই আপনার আমার নয়।
ছোট্ট একটা ঘটনা কিন্তু সেটা কাল এবং পাত্রের বিবেচনায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আমার মনে রেখাপাত করে গেছে। প্রেক্ষাপটে সকলেই বাঙালি আর সময় শুধু বাঙালি নয় পুরো মুসলিম জাহানের সবচেয়ে আনন্দের দিন তথা ঈদ উল ফিতর এর দিন। আগেই বলেছি ঘটনা একেবারেই তুচ্ছ, আপনি হয়তো আমলেই নিতেন না।
প্রাককথনে আর বিরক্ত না করে মূল কাহিনী অতি সংক্ষেপে তুলে ধরছি। জনৈক ব্যক্তি তাঁর 7/8 বছরের ছেলে সহ ঈদের নামাজ আদায় করতে এসেছেন। এ তো অনেক খুশির কথা, এতে মন্দের কি আছে? মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যাচ্ছে তবে ঠান্ডা কমে নি। মিউনিখের বাতাস এখনো কনকনে ঠান্ডা আর মোটা মোটা কাপড় গুলো এখোনো তুলে রাখার সময় হিয়নি। যাইহোক, এই জ্যাকেট বা ভারী কাপড় গুলোর অনেক রকম ব্যবহার হতে পারে। জনৈক ওই বাঙালি ভদ্রলোক তাঁর পরিহিত মোটা কাপড়গুলো খুলে দুটো জায়গা রিজার্ভ করে রাখলেন তাঁর কোনো পরিচিত আত্মীয়ের জন্য। নামাজ মসজিদের ভেতরে হওয়াতে ওই ভারী জ্যাকেটগুলোর এমন বিকল্প ব্যবহার উনি নিশ্চিত করতে পেরেছেন।
নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় 30 মিনিট পরে নামাজ শুরু হলেও ওনার ওই কুটুমদের আবির্ভাব হলো না। এর মধ্যে মসজিদ এর ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষের আগমনে সব জায়গা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। করোনা কালীন এই সময়ে ঠিক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই তাই কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই নামাজ আদায় করতে হবে। কোথাও জায়গা না পেয়ে 27/28 বছরের এক যুবক জনৈক ওই ব্যক্তির একটি জ্যাকেট কিঞ্চিত সরিয়ে সেখানে জায়নামাজ বিছিয়ে আসন পাতলেন।
অমনি শুরু হল ..
ওই মিয়া দেহেন না জ্যাকেট দিয়া জায়গা আটকাইয়া রাখছি। এতো আগে আইসা আপনার লাইগা জায়গা রাখছি আমি? দেইখা তো শিক্ষিত মনে হয়, সব বুজেন এইডা বুজেন না? এমন আরও অনেক কটু কথার তীক্ষ্ণ বাণে ওই যুবকের গোষ্ঠী উদ্ধার করলেন।
নেহায়েত ভদ্র ওই যুবক কোনো উচ্চবাচ্য না করে শুধু সরি বলে চুপ করে গেলেন। এদিকে নামাজের জন্য কাতার সোজা করতে ইমাম সাহেব নির্দেশনা দিলেন তবুও সেই ভি আই পি ব্যক্তিদের কোনো দেখা নেই। নামাজ শেষ হওয়া অবধিও এলেন না তাঁরা।
ভাবছেন এইটুকুন ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে লেখার কি আছে? এমন রাজ্যের ঘটনা বাংলাদেশে নিত্য দিনের সমাচার। সমস্যাটা এখানেই এটা বাংলাদেশে নয় এটা জার্মানি। আপনি এইযে আপনার ছোট্ট ছেলেটাকে সামনে রেখে এমন আচরণ করলেন, ও যদি এই স্বভাব রপ্ত করা শুরু করে? ও যদি ওর স্কুলে গিয়ে বসার বেঞ্চ ছাড়াও আরও একটা দুটো বেঞ্চ রিজার্ভ করা শুরু করে? ও যদি পার্কে খেলতে গিয়ে দু তিনটে খেলার জায়গা একাই দখল করা শুরু করে? কে নিবে সেই দায়ভার আপনি?না আপনি না আপনার দেশের ঘাড়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত এই দোষ বর্তায়।
আমাদের মানে বাঙালিদের এই সব চাই প্রবণতা আজ বাংলাদেশকে একটা রুগ্ন আর দূর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সর্বগ্রাসী মনোভাব পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্রের সর্বস্তরে পরিলক্ষিত। এই চাই চাই খাই খাই স্বভাব দুর্নীতির বীজ বলা যেতে পারে। দয়া করে এই কলুষিত মনোভাব আর এই কুপ্রবৃত্তি সাথে করে নিয়ে আসবেন না।
আপনি এখানে আপনার দেশকে প্রতিনিয়ত প্রতিনিধিত্ব করেন। হোক সেটা স্বল্প কিংবা বৃহৎ পরিসরে, তাই চেষ্টা করুন সর্বপ্রকার সংকীর্ণতাকে পরিহার করে একজন ভালো মানুষ হতে তারপর না হয় একজন ভালো বাঙালি হবেন।
মিউনিখ, জার্মানি