-এইটুকু ভাত নিছিস কেন্ ?
-কি দিয়া খাবো ! খালি মাছ আর সবজি !
-প্রতিদিন কি মাংশ খাওয়া লাগবে নাকি ? আর খালি মাংশ খাইলে স্বাস্থ্য টিকবে?
-বলছে তোমারে। মাংশে সব ভিটামিন থাকে….হে হে হে….. 😀
………
………
মোটামুটি সপ্তাহে ৩/৪ দিন এই কনভারসেশন হতই আম্মুর সাথে। হেতু একটাই – ” মাছ সবজি রান্না ,আর না আর না !! ” ঘটনাটা পুরোটাই উল্টে যায় ঠিক দেশের বাইরে আসার পর থেকে। জার্মানিতে অন্য কারো কি অভিজ্ঞতা বলতে পারব না ,কিন্তু বনের চিত্র হলো শাক-সবজির তুলনায় আরাবিয়ান শপের গরু-মুরগির দাম কম। আর একবেলা রান্না করলে বাকি ২/৩ বেলা নিশ্চিন্ত। লজিক মতে, আমার সেইই রকম ফুর্তিতে দিনাতিপাত করা উচিত !
কিন্তু সমস্যার শুরু হয় প্রথমত রন্ধন -প্রণালী নিয়ে। দেশ থেকে নিয়ে আসা, প্লাস মিনি-এশিয়া থেকে কেনা – হাজারটা পদের মশলার কম্বিনেশন করলেও বাসার মত রান্না আর হয় না। বিশ্বাস করেন ,মাংশ রান্নার ট্রায়াল যে কত প্রকার ও কি কি ,একটা বই লিখে ফেলতে পারব এখন ! কয়েকটি উদাহরণস্বরূপ : প্রথমে পেয়াজ ভাজা এবং পরে মুরগি অথবা আগে মুরগি ভাজা, পরে পেয়াজ ও মশলা অথবা আগে শুধু মশলা ভাজা ,পরে মুরগি,পেয়াজ….. ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও শুনতে একই মনে হচ্ছে ,আমি ১০০% গেরান্টি দিতে পারি প্রত্যেকটা ট্রায়াল এর টেস্ট আলাদা (বিফলে মুল্য ফেরৎ 😛 ) এবং বলাবাহুল্য, সব প্রকারেই দেশী স্বাদ অনুপস্থিত 🙁 ।
সমস্যা নাম্বার-২ , যেটা আমি এখন পর্যন্ত আমার মার কাছে স্বীকার করিনি । এই আমিষ খাদ্যটা এখন সবচেয়ে বিরক্তিকর খাদ্য ! কোনো ভেরিয়েশন ছাড়া একটা খাওয়া ,কয়দিন খাওয়া যায় এই জিনিস ! চিরশত্রু সবজি এখন অমৃতের মতো। আর মাছের কথা তো ……কিছু বললাম না আর। অগত্যা স্থান ,জাতি নির্বিশেষে ,সবসময়ই চলতে থাকে দেশী স্বাদের খোঁজ !
গত বছর বড়দিনের ছুটিতে প্যারিস যাওয়া হয়েছিল। যাওয়ার আগে বিশ্বস্তসূত্র(!) মতে পাওয়া খবর,প্যারিস এর “গার দে লিস্ট ” এলাকায় বাংলাদেশী ক্যাফে আছে, যেখানে নাকি সম্পূর্ণ দেশী আবহাওয়ায় ,দেশী স্বাদের খাবার পাওয়া যায় ! খবরটা শোনামাত্রই সে যে কি এক শিহরিত অনুভূতি … 😉 । উদ্দেশ্য ,আইফেল টাওয়ার দেখি বা না দেখি ,ওই ক্যাফের দর্শন করতেই হবে। কিন্তু সেই আকাঙ্খিত সফরখানা খুব একটা সহজ ছিল না। কারণ প্রথমত “গার দে লিস্ট ” এলাকাটা ভালই বড় ,এরপর তো ইনফিনিটি সংখ্যক গলি আছেই !
মোটামুটি তিন থেকে চার ঘন্টা লাগলো সেই বহুকাংখিত ক্যাফে খুঁজে বের করতে। বাইরে থেকেই দাড়িয়ে দেখলাম কিছুক্ষণ। খুব একটা বড় না ক্যাফেটা , ছোট্ট ঢোকার দরজা, রাস্তার পাশের অংশটা গ্লাস করা আর উপরের সাইনবোর্ডটাতে লিখা “বাংলা ক্যাফে”। ভেতরে যাবার পর ,ওপাশ থেকে প্রথম উক্তি – “ভালো আছেন? কোথা থেকে আসছেন? ” .. আহা….সেই চেনা ভঙ্গী ,সেই চেনা খাবারের ঘ্রাণ ! ভেতরে দেশের হোটেলের মতই চেয়ার-টেবিল গুলো সাজানো। আরো কিছু দেশী লোক সেখানে ভোজনে ব্যস্ত ,রাজনৈতিক আলোচনাও চলছে তুমুল গতিতে। আমি আর খাব কি,শুধু এগুলোই দেখছি !
প্রাথমিক আলাপচারিতার পর খাবারের অর্ডার দেয়া হলো। যেহেতু লাঞ্চ আওয়ার চলছিল,সুতরাং ভাতই খেতে হবে ,সাথে মাছ ,সবজি,ভর্তা,ডাল। কথা বলতে বলতেই কিছুক্ষণ পরই খাবার সার্ভড ! এতদিনের সেই তল্লাশ আজ যেন তার সার্থকতা পেল,একদিনের জন্য হলেও। বেশ তৃপ্তি করে খেলাম ,আর মনে মনে ভাবছিলাম – “আমি পাইলাম , আমি উহাকে পাইলাম ….!”
বি.দ্র. : যেই তিনদিন প্যারিস এ ছিলাম অন্তত খাওয়া নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় নি। আই উইশ ,পৃথিবীর সবগুলো শহরে যদি এইরকম বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট থাকতো ! 😛
বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট আমার ধারনা সবখানেই আছে, ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট নামে। এমন কি নয়-উলমের মতো ছোট্ট শহরেও বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট আছে