২০১৫ সালের ফেব্রিয়ারি মাসে বই মেলাতে এসেছে বাংলা ভাষায় লেখা রাগিব হাসানের দুইটি বই। বই এর কিছু অংশ আমরা আমাদের এখানে শেয়ার করা হবে আপনাদের পড়ার জন্যে…হয়তো চট করে একটা অংশ পড়া দরকার, হাতের কাছে বইটি নেই তখন ঘুরে যেতে পারেন এখানে…অনলাইন এ বইটি কেনার সুজোগ ও রয়েছে(দেশে এবং বিদেশে)। বইটি কেনার জন্যেও অনুরোধ থাকলো কারণ তা থেকে লেখকের যথাযোগ্য সন্মান দেয়া হয় আর সেই সাথে ছাপানো বই পড়ার আমেজই আলাদা…সর্বপরি এই লেখাগুলো লেখার একটাই উদ্যেশ্য: লেখক চেয়েছেন যাতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গবেষণা কি এবং কিভাবে করতে হয় তা সহজে শিখতে পারে। সেই উদ্যেশ্যকে সফল করার ইচ্ছা নিয়েই আমাদের এই বিশেষ প্রচেষ্টা।লেখক এবং প্রকাশক উভয়কে আমাদের ধন্যবাদ এই পোস্টগুলো শেয়ার দেয়ার অনুমতি দেয়ার জন্যে।

[প্রকৌশলে উচ্চ শিক্ষার্থী অনেকের অনুরোধে লেখাটা আপডেট করে শেয়ার করলাম]

মার্কিন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইরেক্ট পিএইচডি করার সুযোগ আছে। অর্থাৎ, বিএসসি ডিগ্রিধারীরা সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পান। বাংলাদেশে অনেকের মাঝে একটা ভুল ধারণা দেখেছি — পিএইচডি করতে গেলে আগে মাস্টার্স থাকা প্রয়োজন। অন্তত মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা ঠিক না — সুযোগ্য প্রার্থীদের সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি করা হয়। আর পিএইচডি করতে করতে মাস্টার্স ডিগ্রিটা নেয়া বা না নেয়া অনেক জায়গাতেই ছাত্রের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। যেমন, আমার গ্র্যাড স্কুল ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স করতে হলে ৬টা কোর্স আর থিসিস লিখতে হতো। অনেক জায়গায় আবার ৬/৭টা কোর্স করলেই মাস্টার্স নেয়ার সুযোগ আছে। আমার কর্মস্থল UABতে ৩৬ ক্রেডিটের কোর্স করলে কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাওয়া যায়।

এবারে দেখা যাক, মাস্টার্স আর পিএইচডির মধ্যে সুবিধা অসুবিধা কেমন।

১) ফান্ডিং

মাস্টার্স পর্যায়ে ফান্ড পাওয়াটা বেশ কঠিন। মার্কিন অর্থনীতির এই দুর্দিনে মাস্টার্স পর্যায়ের ফান্ড প্রায় গায়েব হয়ে গেছে। কাজেই মাস্টার্সে ভর্তি হলে অন্তত ১ম সেমিস্টারে ফান্ড পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে টিউশন ফি দিয়ে পড়তে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই নাগালের বাইরের পর্যায়ে।

স্টেইট ইউনিভার্সিটি, অর্থাৎ রাজ্য সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন কম। যেমন, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে এক সেমিস্টারে খরচ পড়ে প্রায় ৩ থেকে ৬ হাজার ডলার, তবে বিদেশী ছাত্রদের জন্য বেশি চার্জ সহ মোট ফি প্রায় ১০/১২ হাজার ডলারের মতো। আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেই ফি এর পরিমাণ বেড়ে যাবে অনেকখানি। আমার এক সময়ের কর্মস্থল জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দিতে পারি, এখানে মাস্টার্স পর্যায়ে প্রতি সেমিস্টারের ফি প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার ডলার।

মাস্টার্সে ১ম সেমিস্টারে ভালো কাজ দেখিয়ে প্রফেসরের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশিপ (আরএ) যোগাড় করতে পারলে টিউশন মাফ হতে পারে, আর বেতনও পাওয়া যেতে পারে।

পক্ষান্তরে, পিএইচডিতে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ফান্ড দেয়া হয়, টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশীপ বা ফেলোশীপের মাধ্যমে। এর সাথে টিউশন ফীও মাফ করা হয়। যা বেতন দেয়া হয়, তা খুব বেশি না, তবে এদিক সেদিক করে বিদেশী ছাত্ররা ভালোই থাকতে পারে।

মাস্টার্সে ফান্ড দেয়া কম হয় বলে ভর্তির কড়াকড়িও কম, অ্যাডমিশন পাওয়া সহজ। পক্ষান্তরে পিএইচডির অ্যাডমিশন পাওয়াটা কঠিন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই কয়েকশ মাস্টার্স ছাত্র থাকে, কিন্তু পিএইচডি ছাত্র নেয়া হয় জনা দশেক/বিশেক প্রতি বছরে।

২) সময়

মাস্টার্সে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই বছর। আর পিএইচডিতে জায়গা ভেদে ৫ থেকে ৭ বছর। কাজেই ভেবে নিন, আপনার হাতে এতোটা সময় আছে কি না। জব মার্কেটের অবস্থা পাল্টায় নিয়মিত। আর বিষয়ও পাল্টে যায় — আজ যে বিষয়টি একেবারে হট টপিক, ৫ বছর পরে সেটার কথা ভুলে যেতে পারে সবাই।

৩) খাটুনি

মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের খাটুনির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। মাস্টার্সের কোর্স রিকয়ারমেন্ট পিএইচডির প্রায় অর্ধেক, আর থিসিসের পার্থক্যও বিশাল (অনেক জায়গায় কোর্স করলেই চলে)। মাস্টার্সের থিসিস প্রায় ক্ষেত্রেই একটি মাত্র প্রজেক্ট নির্ভর, যেখানে পিএইচডি থিসিসে একাধিক রিসার্চ পেপারের কাজ নিয়ে বেশ বড় আকারের কাজ করতে হয়। এক সেমিস্টার খেটেই এক্সপেরিমেন্ট সহ মাস্টার্স থিসিস অনেকে লিখে ফেলে, যেখানে পিএইচডির গবেষণা শেষ হবার পরে থিসিস লিখতেই অনেকের এর চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। কাজেই কয়েক বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার মতো উদ্যম বজায় রাখতে পারবেন কি না, সেটা আগেই ভেবে দেখুন।

৪) চাকুরি

আপনার লক্ষ্য যদি হয় কোনো মার্কিন কোম্পানিতে চাকুরি পাওয়া, তাহলে তার জন্য মাস্টার্স করাই যথেষ্ট। অধিকাংশ চাকুরির জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি হলেই চলে। আর ২ বছর পড়েই চাকুরির বাজারে ঢুকতে পারছেন, যা বড় একটা সুবিধা।

অনেক চাকুরিতেই পিএইচডি থাকাটা কোনো অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসাবে ধরা হয় না। উদাহরণ দেই – গুগলে বিএসসি, মাস্টার্স, বা পিএইচডি সব রকমের লোকজনই নেয়া হয়। মাস্টার্সের চাইতে পিএইচডিতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় বেশি লাগে। কাজেই আজ যিনি মাস্টার্স নিয়েই ঢুকছেন সেখানে, ৩/৪ বছর পরে স্টক অপশন, বেতন, আর বোনাস সব মিলে কয়েক মিলিয়ন ডলার এগিয়ে থাকবেন। অধিকাংশ টেক কোম্পানিতেই পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে শুরুতে অল্প একটু বেশি বেতন থাকে, কিন্তু ৩/৪ বছর আগে যোগ দেয়া মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা সেই সময়টাতে তার চেয়ে অনেক বেশিই সুবিধা পেয়ে গেছে। গুগলে যখন ইন্টার্নশীপ করতাম, তখন অনেক গ্রুপের ম্যানেজারকে দেখেছি মাস্টার্স বা ব্যাচেলর্স করা, যেখানে তাদের অধীনে কাজ করা অনেকেই আবার পিএইচডি করা। কাজেই চাকুরির বাজারের অনেক জায়গাতেই পিএইচডি বা মাস্টার্সের কোনো পার্থক্য নেই।

আমার দুই ছাত্র সম্প্রতি আমার অধীনে UAB থেকে কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্স করে দুই খ্যাতনামা কোম্পানিতে চাকুরি পেয়েছে (Amazon ও VMWare)। তাদের বেতন বছরে লাখ ডলারের উপরে, আর সাইনিং বোনাস/বাৎসরিক বোনাসের হিসাব তো বাদই দিলাম। আর এরা মাস্টার্স শেষ করার আগেই যে চাকুরি পেয়েছে, যেসব গ্রুপে যোগ দিয়েছে, সেখানে আবার অনেক পিএইচডিধারীরাও কাজ করছে। বেতন পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা কিছুটা বেশি পায়, তবে সেটা বছরে হাজার পাচেক-দশেকের বেশি না। কিন্তু পিএইচডির ৬ বছরের তুলনায় আমার দুই ছাত্রের মাস্টার্সে দেড়-দুই বছর লেগেছে, সমতূল্য বেতনের চাকুরিও মিলেছে, সেটাই লক্ষনীয়।

অবশ্য একাডেমিক ও রিসার্চ লাইনে আবার পিএইচডি অপরিহার্য। কাজেই আপনার লক্ষ্য যদি হয় একাডেমিক বা রিসার্চ লাইনে থাকা, সেক্ষেত্রে পিএইচডি করতেই হবে।

# যেসব জিনিষ বিবেচনা করবেন

– আপনার মূল লক্ষ্য কী — রিসার্চ/একাডেমিক লাইন, নাকি চাকুরি?
– ফান্ড পাবেন কি পাবেন না? ফান্ড না পেলে টিউশন ফি অন্তত ১ম সেমিস্টারে দিতে পারবেন কি?
– ৫/৬ বছর আরো পড়ার ধৈর্য্য আছে কি?

সব বিচার করে বেছে নিন, পিএইচডি নাকি মাস্টার্স, কোনটিতে আবেদন করবেন। উল্লেখ্য, একবার একটা বেছে নিলে অন্যটাতে যেতে পারবেন না, তা কিন্তু না। দরকার হলে পরেও প্রোগ্রাম পাল্টানো যায়, যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ। সব ফ্যাক্টর বিবেচনা করে আপনার জন্য যেটা সর্বোত্তম, সেটাই বেছে নিন।

পিছু নিন আপনার স্বপ্নের।

‪#‎উচ্চশিক্ষা‬‪#‎পিএইচডি‬‪#‎মাস্টার্স‬‪#‎পরামর্শ‬

বই এর প্রকাশকের  পেজটি দেখতে করতে ক্লিক করুন আর ফেইসবুক পেজ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এবং দ্বিতীয় লিংক

গবেষণা: পিএইচডি করার রোডম্যাপ: রাগিব হাসান – পর্ব ৬

ভাগ্যের চাকা, দেয়ালে ঠেকা পিঠ, বনাম একাদশে বৃহষ্পতি: রাগিব হাসান – পর্ব ৩

mm

By Tanzia Islam

Tanzia Islam is an admin of BSAAG, learn german and Germanprobashe.com this is a volunteer work from her side for the Bangladeshi community. She is also an admin of Free Advice Berlin. Her volunteer activities are related to educational development, city development and environmental protection. Tanzia is a freelance writer and researcher. Currently she is a doctoral researcher at Technical University of Berlin.

One thought on “যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষা – পিএইচডি নাকি মাস্টার্স? রাগিব হাসান – পর্ব ১১”

Leave a Reply