কী ঘটবে যখন গ্রীস বের হয়ে যাবে ইউরো জোন থেকে? এটা এখন একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন? গ্রীসকে বেইল আউট এর জন্য আরো ৭.২ বিলিয়ন ইউরো ধার দিতে চায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কিন্তু কড়া শর্ত এবং রিফর্মেশন সাপেক্ষে। তবে সম্প্রতি গ্রীস উল্টো জার্মানির কাছে দাবি করে বসেছে প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ইউরো (মতান্তরে আরো বেশি), এটা তারা দাবি করছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে। এমনকি গ্রীসের জাস্টিস মিনিস্টার তাঁর দেশে থাকা সকল জার্মান প্রপার্টি বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন! গার্ডিয়ান থেকেঃ
Greece’s justice minister, Nikos Paraskevopoulos, said Athens was prepared to approve a court ruling to seize German property in the country – including the Goethe Institute, the German Archaeological Institute, German schools and holiday homes if Berlin refused to pay €341bn (£240bn) in compensation.
এমতাবস্থায় গ্রীসের ইউরো জোন থেকে বের হয়ে যাওয়া হয়ত সময়ের ব্যাপার। 🙂
এই ব্যাপারে বিবিসি কী বলছে? দেখে নিনঃ-
গ্রীস যদি ইউরো জোণ থেকে বের হয়ে যায় ?
এই শিরোনামে লেখার প্রেক্ষিতে আমার লেখাটি ।
গ্রীস কি ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসবে??
এখানে ছোট একটা বিষয় পরিস্কার করা দরকার ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন আর ইউরোপিয়ন মনিটরিং ইউনিয়ন এর ভিতর একটা পার্থক্য আছে ।পার্থক্যটা হল ইউরোপিয়ন ইউনিয়নভুক্ত ২৮ সদস্য দেশ ইছা করলে ইউরোকে নিজেদের একক মুদ্রা হিসেবে মেনে নিতে পারেন আবার নাও নিতে পারেন ইউ আইনে এটা বলা আছে।উদাহরনস্বরূপ ব্রিটেন যে কিনা ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের সদস্য কিন্তু ইউরোপিয়ন মানিটরিং ইউনিয়নের সদস্য না,
এবার ফিরে আসা যাক গ্রীস এর দিকে গ্রীস সম্ভবত ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে না ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের যে একক মুদ্রা বেবস্থা আছে সেটা থেকে বের হতে চাইতে পারে ।
এখন কথা হছে সেটা কি সম্ভব কিনা?
হা,সম্ভব,
এবার ফিরে আসা যাক মূল বিসয়বস্তুতে, গ্রীস কি ইউরোপিয়ন একক মুদ্রা বেবস্থা থেকে বের হয়ে আসবে কিনা? এখানে বলে রাখা ভাল যে,মিডিয়া, সংবাদ পত্র, সবাই কিন্তু বলছে যে গ্রীস ইউ থেকে বের হয়ে আসবে এটা দ্বারা বুঝান হয়েছে যে একক মুদ্রা বেবস্থা থেকে বের হয়ে আসবে । ইউরোপ থেকে নয় ।
ইউরোপ ইউনিয়নে থাকা মানে অবাধ যাতায়াত মানুষ,পণ্য, সেবা ও মূলধন ,সহজ করে বলতে গেলে ডবল ট্যাক্স যাতে দিতে না হয়, এক দেশের পণ্য ,যাতে অন্ন দেশে অবাধে বিক্রি হতে পারে,এক দেশের মানুষ যাতে অন্ন দেশে অবাধে গিয়ে কাজ করতে পারে এই উদ্দেসে।
এখন যেটা কিনা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন গ্রীস কি ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসবে?
মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন উত্তর কিন্তু দুইটা ।
হা/না,
কমপক্ষে হাজার কারন আছে যে গ্রীস বের হতে পারবে না ,বের হতে পারবে না বললে ভুল হবে,বলা যেতে পারে যে, গ্রীস যদি বের হয়ে আছে তাহলে গ্রীস হাজার টা দিক খেয়াল রাখতে হবে,
১।জীবনযাত্রার মাণ আশঙ্কাজনক ভাবে নিচে নেমে যাবে ।
২। বেকারত্ব বেড়ে যাবে।
৩।মুদ্রাস্ফীতি ৪০-৫০% হয়ে যাবে এখন যেটা আছে মাত্র ২%।
৪। দেশটি যেহেতু ঋণে জর্জরিত কান্ট্রি ক্রেডিট রেটিং B- /ccc1 যার মানে দাড়ায় শোচনীয়।
৫।এই রেটিং এর কারনে কোন দেশ গ্রিসের নিজের মুদ্রাকে গ্রহন করবে না,এর ফলশ্রুতিতে রপ্তানি করতে পারবে কিন্তু আমদানি করতে পারবেনা,আর আমদানি করতে যে বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে সেটা গ্রিসের কাছে নাই,আর কারো কাছ থেকে যে ধার নিবে সেটাও পাবে না কারন গ্রিস যে এটা ফেরত দিতে পারবে এটার গ্যারান্টি গ্রীস দিতে পারবে না,গ্রীস যদি ইউরোপিয়ন ইউনিয়নে থাকে তাহলে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নভুক্ত দেশের গ্যারান্টিতে ধার নিতে পারত ।
৬।আর ও অনেক কারন আছে বলার মত ।
তবে একটা মাত্র কারন আছে শুধু মাত্র সেই কারনে গ্রীস ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
সেতা হল রাজনৈতিক সিধান্ত, যদি গ্রিস এর বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সিধান্ত নেয় যে তারা এউ থেকে বের হয়ে আসবে তাহলেই সম্ভব তাছাড়া এটার কোন যুক্তিযুক্ত কারন নেই ।
এখন আসা যাক গ্রিস বের হয়ে গেলে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের কি হবে??
কেউ কেউ বলতে পারেণ ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা ।
ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন কিছুই হবে না তবে ইউরোপিয়ন ধারনাটা একটু বাঁধাগ্রস্ত হবে । অন্ন দেশ গ্রিসকে অনুসরণ করবে কিনা এটার উত্তর হছে সবাই কিন্তু কম বেশি ইউনিয়নে থাকায় কিছু কিছু সুযোগ ভোগ করছে, সুতরাং অন্য দেশ যেমন এতালি,স্পেন, এই পথ অবলম্বন করার কথা ভাবার কথা না।
অনেকি না বুঝেই বলার চেষ্টা করেন গ্রিস ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে গেলে ৩১৫ বিলিয়ন যে ঋণ নিয়েছে যার ৪৫% নিয়েছে (Europeion Financial stability Facility)EFSF,
সেটার কি হবে?
এটার মেয়াদ ২০৫৩ সাল পর্যন্ত এই ঋণ গ্রিসকে শোধ দিতে হবে, বাকি ঋণ ও শোধ দিতে হবে কারন সব ঋণ একটা দেশকে দেয়া হয়েছে্ এবং এর বিপরীতে কোন না কোন সম্পত্তি বন্ধক আছে ।
সবচেয়ে আলোচিত বিষয় যেটা গ্রিস চেষ্টা করছে জার্মানিকে চাপ দিতে, যাতে আরও কিছু ঋণ পাওয়া যায় অথবা ঋণ পরিশোধর এর মেয়াদ আর একটু বাড়ানো যায় ।
কিন্তু জার্মানি রাজী না হয়াতে জার্মানিকে চাপে ফেলার জন্য সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিতে চাইছে ।বিষয়টাকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করার জন্য সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে একটা ক্ষতি পূরণ মামলার রায় দেয়া হয়েছে যাতে বলে হয়েছে ১৬২ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ জার্মানিকে দিতে হবে ।।
কিন্তু জার্মানি সেই ১৯৬০ সালে ১১৫ মিলিয়ন মার্ক্স ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টাকে চুকিয়ে ফেলেছে এবং চুক্তিপত্রে বলা হয়েছিল আর কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না।
আর জার্মানি বলছে জার্মানি আত্মসমর্পণ করেছে মিত্র বাহিনির কাছে এবং সব দেনা পাওনা মিটিয়ে দুই জার্মানি (পূর্ব –পশ্চিম) এক করা হয়েছে, জার্মানির আর দেনা নাই ।
বিষয়টা যতটা টা অর্থনৈতিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
দেখা যাক কি হয় সামনে …
আরিফুর রহমান
[email protected]
সুন্দর কমেন্ট এর জন্য ধন্যবাদ।