১. ২০০৯ সালে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে দেখা।
আমি বললাম, “আপনি রশিদ হলের অমুক ভাই না? কেমন চলছে ভাইয়া?”
“তেমন ভাল না ভাইয়া। বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছি। চাকরি ভাল লাগেনা।(উনি একটা মোবাইল ফোন কোম্পানিতে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে উচ্চ বেতনে চাকরি করতেন)।”
অবাক হয়ে বললাম,” এমন ঈর্ষনীয় ক্যারিয়ার নিয়েও আপনি অসুখী। কি বলেন!”
“আরে, ওখানে আগে থেকেই সব সেট-আপ করা আছে। ইনোভোটিভ কিছু করার সুযোগ নেই!”
এরপর ওনার সাথে আর দেখা হয়নি।

২. আমার বান্ধবির এক বন্ধু বিসিএস দিয়ে পুলিশে এএসপি হিসেবে কর্মরত। সে প্রায়ই বলে, “এত কম বেতনের চাকরিতে লোয়ার ক্লাস মানুষের সাথে ডিল করা আমার কম্ম নহে। তার উপর বিভিন্ন মহলের হুমকি ধামকি আছেই। আমি বিদেশ যেতে চাই!”

৩. ব্যাংকে কর্মরত এক বন্ধুর অভিযোগ,” প্রতিদিন কেরানির মত একই ধরনের হিসাব-নিকাশ করতে আর ভাল লাগে না রে, পাগলা। আহা! বিসিএস দিয়ে পুলিশে জয়েন করলে সুখি হতাম।”

৪. এক বুয়েটিয়ান বান্ধবি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করে। তার কথা, “অশিক্ষিত মন্ত্রী, ঠিকাদারের সাথে কাজ করতে করতে পেরেশান হয়ে গেলাম। এবার আমাকে মুক্তি দাও, প্রভু!”।

৫. স্পাউজ ভিসা নিয়ে জার্মানিতে আসা ভাবি সম্প্রদায়ের অভিযোগ, “সারাদিন ঘরে বসে আর কতক্ষণ জি-বাংলা দেখা যায়? তার উপর পাড়া প্রতিবেশিরা বাংলাও জানে না! আমি দেশে ফিরে যেতে চাই।”

৬. লেভেল ৩ এ পড়ার সময় এক বাসায় সাবলেট থাকতাম। এলজিইডির এক বুয়েটিয়ান ভাইয়ের গাড়ির ড্রাইভার ছিল আলিম ভাই। দুইটা মিষ্টি মেয়ে আর লক্ষী বউ নিয়ে ছিল তার লাল-নীল সংসার। মাসে ১২ হাজার টাকার আয় হলেও কখনোই তাদেরকে ঝগড়া করতে দেখিনি। কি সুন্দর বোঝাপড়া তাদের। এমন সুখী পরিবার আর একটাও দেখিনি। একদিন কারণ জিজ্ঞেস করতেই মেট্রিক পাশ ভাবি উত্তর দিল, “ভাই, আমরা নিজেদের সামর্থ্য বুঝি। সেজন্য নিজেদের সবটুকু নিয়ে সুখি থাকার চেষ্টা করি। যা নেই, তা নিয়ে মন খারাপ বা দুশ্চিন্তা করি না।”

সেদিন থেকে আমার মন আর কখনোই তেমন খারাপ হয় নাই।
জগতের সকল প্রানী সুখে থাকুক।

mm

By Shariat Rahman

আমি বর্তমানে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্সে সায়েন্টিফিক এসিস্ট্যান্ট (Wissenschaftlicher Mitarbeiter) হিসেবে কাজ করছি। ২০০৯ সালে বুয়েট থেকে আইপিইতে ব্যাচেলর আর ২০১২ সালে রাইন-ওয়াল ইউনিভার্সিটি অফ এপ্লায়িড সাইন্স থেকে বায়োনিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করি। অবসর সময়ে সোস্যাল মিডিয়া, আড্ডাবাজি আর খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।

Leave a Reply