কুল ডুড বলতে যতটুকু বুঝি, তার পুরোটাই জার্মানদের সাথে যায়। দেখা গেল, কোন ভাল বন্ধু আমার উপর মন খারাপ করেছে। কিন্তু আমাকে মুখ ফুটে কিছুই বলবে না। পরের দিন রাস্তায় আমাকে দেখে কপট হেসে, “হ্যালো” বললে বুঝতে হবে, কুছ তো গারবার হ্যায় দায়া! একবার ডর্মে এক জার্মান ছেলে ও মিশরের ছেলের মধ্য তুমুল ঝগড়া বেধেছে। জীবনে প্রথমবারের মত ইংরেজিতে ঝগড়া শোনার সুযোগ হলো! ওরা দুজনেই এক পা সামনে এসে শাসাচ্ছে, আবার দু পা পিছিয়ে যাচ্ছে। একসময় মনে হল, এখানে অনেক রক্ত ঝরবে! দুজনেই আমার ভাল বন্ধু ছিল। আর দশজন বাংগালির মত আমিও তাদের ঝগড়া থামাতে যাব, এমন সময় এক ডাচ বন্ধু বলল, “ভয় পেওনা। ওরা একটু পরেই থেমে যাবে।” আসলেই তাই ঘটল। পুলিশের ডান্ডার ভয় কার না আছে!
এরা খুবই বন্ধু পরায়ণ। ইংরেজিতে তেমন পারদর্শী না হওয়ার মুখ খুলতে চায় না, যেটাকে আমরা তাদের ‘নাক উচু স্বভাব’ ভেবে ভুল করি।
আপনি বিপদে পড়লে ও একটু জার্মান জানলে দরকার হলে আপনাকে বাসা পর্যন্ত পৌছে দেবে। এরা অল্প সময়েই কাউকে ‘ডু’ (তুমি) বলে ডাকে। তবে অত্যন্ত ফর্মাল বলে তাদের সাথে ভাব আদান-প্রদানে আমাদের অংগভংগি ও এটিচুড খুবই প্রভাব রাখে।
সবকিছুতেই শতভাগ পারফেক্ট, সেজন্য এরা অনেক ক্ষেত্রেই মাথামোটা ও কিছুটা গোয়ার।
আমার এক বৃদ্ধ বন্ধু প্রচন্ড গরমেও টেবিল ফ্যান চালায় না, কারণ অনেক বিল আসবে। কিন্তু সে ২৪ ঘন্টা টিভি চালায়ে রাখে! তড়িত প্রকৌশলের সমস্ত জ্ঞান দিয়েও তাকে বিষয়টা বোঝাতে পারি নি!
এদের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে পারিবারিক বন্ধন প্রচন্ড দৃঢ়। তবে মধ্যবিত্তদের অনেকেই শুধু বন্ধু বান্ধব নিয়ে জীবন কাটাতে পছন্দ করে। একই শহরে ভিন্ন বাসায় সংগী/ সংগীনি নিয়ে বাস করলেও ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ ও দাওয়াত দেওয়া-নেওয়া প্রায়ই ঘটে।
কেউ যদি জার্মান ভাষা শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করে, তাকে জার্মান শেখানোর সমস্ত ভার তারা নিজের ঘাড়ে তুলে নেয়। আপনি জার্মান শিখতে গড়িমসি করলেও ওরা আপনাকে প্রায় জবরদস্তি করে জার্মান শেখাবে 😉
ধরা যাক, আপনি বলতে চান, “আমাকে গ্লাসটা দিবে?” আপনি ইংরেজিতে বললেও সে আপনাকে সেটার জার্মান সাথে সাথে শিখিয়ে ছাড়বে!
পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে একটা ধ্বংস-প্রায় দেশ কিভাবে অল্প সময়ে প্রকৌশল দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ হতে পারে, তা জানার জন্য হলেও সবার জার্মানিতে বেড়াতে আসা উচিত।