নন্দিনী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছে। ভাল বংশের, মোটামুটি সুন্দরী ও বুদ্ধিমতি মেয়ে হওয়ায় বিভিন্ন পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগল। শেষমেশ বিয়ে হলো কানাডায় পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যবসায়ী মুকুলের সাথে। আর দশজন বাংগালি মেয়ের মত সংসারে পুর্ণ মনোনিবেশ করল সে। ৮ সদস্যের পরিবারের রান্না-বান্না থেকে শুরু করে সব কাজ হাসিমুখে করত সে।
দুই বছরের মাথায় ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিল নন্দিনী। এরপরের একবছর সুখে কাটলেও বিপত্তি বাঁধল যখন তার দেবর ঢাবির একটা মেয়েকে (মিতু) বিয়ে করে ঘরে আনল। কয়েকমাসের মধ্যেই ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের জন্য স্কলারশিপ পেল মিতু। মুহুর্তেই পরিবারের সবাই তাকে ভিন্ন চোখে দেখলে লাগল। আদরের অন্ত নেই, এমনকি শ্বাশুড়ি তাকে বাসার কোন কাজও করতে দিতেন না।
পরিবারের জন্য সবকিছু বিসর্জন দিয়েও কারো কাছ থেকে তেমন প্রশংসা না পাওয়ায় ধীরে ধীরে অভিমানী হতে লাগল নন্দিনী। একদিন সাহস করে মুকুলকে বলেই ফেলল, “আমি ডাক্তারি প্র্যাক্টিস করার পরিক্ষা দিতে চাই।”
বউকে অসম্ভব ভালবাসে বিধায় নন্দিনীর মনের কষ্ট বুঝতে বাকি রইল না মুকুলের। সে বলল, “ঠিক আছে। কিন্তু পরিবার সামলিয়ে কিভাবে এত পড়াশুনা করবে তুমি?”
“আমি এক বছরের জন্য দেশে ফিরে যেতে চাই। আম্মার সাথে কথা হয়েছে। বাচ্চাসহ ওদের সাথেই থাকব।”
“ঠিক আছে, আমি মার সাথে কথা বলব।” মুকুল আশ্বস্ত করল।
কথা উঠাতেই মা রাগতস্বরে প্রশ্ন করলেন, “আমরা কি ওকে লেখাপড়া করতে নিষেধ করেছিলাম?”
যাইহোক, অনেক কষ্টে মাকে বোঝাল মুকুল।
একমাস পরে ঢাকায় মার বাড়িতে এসে দিনরাত পড়াশুনা করতে লাগল নন্দিনী। আত্মীয় স্বজন অনেক কটুক্তি করতে পারে। সেজন্য দেশের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখল সে।
দেশে ব্যবস্থা না থাকায় এক বছর পরে ভারতে গিয়ে ডাক্তারীর বিশেষ পরীক্ষা দিল নন্দিনী। ঈর্ষান্বিত রেজাল্ট নিয়ে পাশ করল সে। কিছুদিন পরে কানাডায় ফিরে গিয়ে প্র্যাক্টিস শুরু করল। একইসাথে শ্বাশুড়ি ও চাকুরিজীবি জা’র সাথে সংসারের কাজ ভাগ করে নিল নন্দিনী।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সবাই অনেক ভাল আছে।
“হে নারী, তুমি যতই শিক্ষিতা ও সংসার-প্রাণ হও না কেন, এ সমাজের খুব কম মানুষই তোমার ত্যাগের যোগ্য প্রতিদান দেবে। কিন্তু তুমি আত্মনির্ভরশীল হলে এ সমাজই তোমাকে মাথায় তুলে রাখবে। এটাই চরম বাস্তবতা।”