-জাওয়াদ সাদিক অয়ন
আমাদের বুয়েট এনার্জি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম ফয়সাল ভাই যখন জানতে পারেন যে BSAAG এর সহযোগিতায় বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করার সুযোগ রয়েছে, তৎক্ষণাৎ তিনি তা অবহিত করেন ক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ মনির হোসেন ভাইকে।এরপর ক্লাবের নিয়মিত মিটিঙে সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি চূড়ান্ত করার পর সেমিনারটি আয়োজনের জন্য অনুমতি চাওয়া হয় ক্লাব মডারেটর প্রফেসর ডঃ জিয়াউর রহমান খান স্যারের কাছে।স্যারের সম্মতি পাওয়ার পর ডিএসডব্লিউ অফিসের মাধ্যমে ভেন্যু হিসেবে অডিটোরিয়াম ব্যবহারের অনুমতি পাই আমরা ।এরপর শুরু হয় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করার প্রক্রিয়াটি ।নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয় জন প্রতি ১০০ টাকা। অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য আমরা ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্য নেই। এছাড়া সেমিনারটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ ও সাড়া পাওয়ার পর আমরা মেইন ক্যাম্পাসে ক্যাফের সামনে একটি রেজিস্ট্রেশন বুথ বসাই। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে রেজিস্ট্রেশন বুথটি টানা তিনদিন চালু রাখি আমরা । ফেইসবুকে একটি ইভেন্ট পেজ খুলে সেখানে প্রচারণার পাশাপাশি সেমিনার সংক্রান্ত সকল প্রকার আপডেট নিয়মিতভাবে জানানোর ব্যবস্থা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার এবং স্কলারশিপের সকল তথ্য(স্লাইড)
বাংলাদেশে হয়ে গেল আমাদের ৯টি সেমিনার!
আমরা চাই আপনার ইউনিভার্সিটিতেই আসুক আমাদের সেমিনার আপা/ভাই! যদি আপনার ইউনিভার্সিটিতে করতে চান কোন সেমিনার তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন! যেকোন প্রশ্ন/সাজেশনের জন্য মেসেজ পাঠানঃ [email protected] বা ফেসবুক পেইজে! ধন্যবাদ।
BSAAG এর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হই যে আমাদের সেমিনারে আলোচক হিসেবে থাকছেন তানজিয়া ইসলাম আপু এবং শাহজাবীন কবির আপু।এরপর আমরা ক্লাবের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানাই সেমিনার আরেক আলোচক বুয়েট ইইই ডিপার্টমেন্টের সম্মানিত লেকচারার জনাব মারুফ আহমেদ স্যারকে।সকল ক্লাব মেম্বার ও ভলান্টিয়ারদের সক্রিয় ও স্বতঃস্ফুর্ত সংশ্লিষ্টতার কারণে এই সেমিনারটি আয়োজন করতে বিন্দুমাত্র প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয় নি আমাদের।২১শে মে নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়ে যায় সেমিনারটি। সেমিনারের শুরুতেই বক্তব্য দেয়ার জন্য মঞ্চে আহ্বান করা হয়েছিল তানজিয়া ইসলাম আপুকে।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত যে বিষয়গুলোকে ঘিরে আমাদের সবার মনে অহেতুক ভয় এবং সংশয় কাজ করে সেই বিষয়গুলোকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে আপু সবাইকে আশ্বস্থ করে তোলেন প্রথমেই।এরপর আপু BSAAG এর কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন।BSAAG এর ব্লগ এবং ওয়েবসাইটটি বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য একটি চমৎকার দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করতে পারে বলে তিনি মত দেন।এই ব্লগ,ওয়েবসাইট এবং ফেইসবুকের গ্রুপটির মাধ্যমে আমরা বিদেশে উচ্চশিক্ষারত বড় ভাইয়া-আপুদের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের কোন জিজ্ঞাসা থাকলে তা তুলে ধরতে পারি বলে জানান আপু।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহীদের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে এমন সম্ভাব্য সবকয়টি দেশ নিয়ে আপু একে একে আলোচনা করতে থাকেন।বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রতিকূলতাগুলো কি কি,সংশ্লিষ্ট দেশের ভার্সিটিগুলোর র্যাঙ্কিং কেমন, ভার্সিটিগুলো কি রকম স্কলারশিপ দেয়, টিউশন ফি গড়ে কি রকম,সেই দেশের ভাষা শিখে যেতে হয় কিনা,ভিসা পেতে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়,এমনকি দেশভেদে খাদ্যাভ্যাস বা সংস্কৃতির পার্থক্য কি রকম এরকম ছোট-বড় কোন বিষয়ই আপুর আলোচনা থেকে বাদ যায় নি। আমাদের দেশের অনেকের মাঝেই এরকম একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, ইউরোপের দেশগুলোতে গেলে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করে টিউশন ফি ম্যানেজ করে ফেলা যায়। আপু তার বক্তব্যে পার্ট টাইম জবের উপকারী এবং অপকারী দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং ভার্সিটিগুলো যেখানে বিভিন্নরকম স্কলারশিপ নিয়মিতভাবে অফার করে থাকে সেখানে আমাদের পার্ট টাইম জবের চিন্তা না করে স্কলারশিপগুলো পাওয়া যায় কিনা সেদিকে আরও বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপের তথ্য পাওয়া যায় এমন বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট সম্পর্কে আলোচনা করেন আপু।এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অনেকের মনে লো সিজিপিএ সংক্রান্ত যে ভীতি কাজ করে তা নাকচ করে দিয়ে আপু তার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করেন।এছাড়া আপু জার্মানীর ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে তার “ব্রেড এন্ড বিয়ার” সংক্রান্ত মজার ঘটনাটিও সবাইকে শোনান।এরপর আপু SOP লেখার কৌশল ও Recommendation Letter নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন সবাইকে।
এরপর বক্তব্য দিতে আসেন মিস শাহজাবীন কবির আপু।আপু হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে খুব সাবলীলভাবে নিজের হার্ভার্ড যাত্রার যাবতীয় অভিজ্ঞতা সবার সামনে তুলে ধরেন।নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে যেয়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে কি কি পদ্ধতি এবং কৌশল অবলম্বন করেছিলেন তা সবাইকে খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেন।
হাভার্ডে পড়তে যেয়ে সেখানকার পড়াশুনার চাপের সাথে কিভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন তা সবাইকে খুলে বলেন আপু।সপ্তাহ ঘুরে পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট,ক্লাসের সাথে তাল মেলাতে যেয়ে তাকে যথেষ্ট ঘাম ঝরাতে হয়েছে বলে জানান। কঠিন কোন বিষয় বুঝতে সমস্যা হলে অনলাইনে সিনিওর ভাইয়া আপুদের সাথে প্রায়ই পরামর্শ করতেন তিনি।তার বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি, ক্লাসে নতুন টপিক যেটা পরানো হতো তা বুঝতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য আগে থেকে কিছুটা স্টাডি করে ক্লাসে যেতেন তিনি।নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এরকম অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পর হার্ভার্ডে উচ্চ শিক্ষা আপুর ব্যক্তিগত জীবনে কি কি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে তা সবার কাছে তুলে ধরেন তিনি।
আপুর মতে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ধকলটার কারণে কর্মক্ষেত্রে এখন খুব স্বাচ্ছন্দের সাথে কাজ করতে পারছেন তিনি।পেশাগত কাজ করতে বাংলাদেশে এসে স্থানীয় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ের মানুষের সাথে তাকে কাজ করতে হয় এখন ।আপু বিশ্বাস করেন হার্ভার্ডে পড়তে যেয়ে তার মাঝে আত্ববিশ্বাস ও নেতৃত্ব দানের যে অদ্ভুত সক্ষমতা ও স্বাবলম্বী মানসিকতা তৈরী হয়েছে তার কারণেই এগুলো সব কিছু তার পক্ষে খুব সহজে করা সম্ভব হচ্ছে ।এমনকি আমাদের সবার সামনে দাঁড়িয়ে যে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারছেন তার কৃতিত্বও তিনি দেন তার হার্ভার্ডে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সময়কালকে। নিজের GRE প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলতে যেয়ে আপু বলেন যে তিনি প্রায় পুরো এক বছর সময় নিয়েছিলেন নিজেকে প্রস্তুত করতে । GRE পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানানোর পাশাপাশি তিনি GRE প্রস্তুতিতে অন্যদের চেয়ে একটু বেশী সময় নেবার কারণও সবার কাছে ব্যাখ্যা করেন।ভালো SOP লেখার টিপস দিতে যেয়ে তিনি জানান যে তার নিজের সপ লেটারটি খুব সংক্ষিপ্ত হলেও হলেও তা লিখতে সময় নিয়েছিলেন প্রায় সাত দিন।কারণ আপুর মতে SOP জিনিসটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রফেসরের কাছে নিজের সার্বিক দিক তুলে ধরার জন্য।
সবশেষে বক্তব্য দিতে আসেন বুয়েট ইইই ডিপার্টমেন্টের সম্মানিত লেকচারার আমাদের সবার প্রিয় জনাব মারুফ আহমেদ স্যার।স্যার এবছর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে তে।সময় স্বল্পতার কারণে স্যার কিছুটা সংক্ষেপে তুলে ধরেন বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে তার ভাবনাগুলোকে। GRE প্রস্তুতি আন্ডারগ্রাডের কোন পর্যায় থেকে নেয়া উচিত,কিভাবে খুব অল্প সময়ে GRE প্রস্তুতি নেয়া যায়, GRE পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর মাঝে কোনটির পরিবেশ তুলনামূলক ভালো, ভার্সিটি পছন্দ করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো খেয়াল না রাখলেই নয় এরকম নানারকম বিষয়গুলো স্যারের বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি।
সেমিনারে আমন্ত্রিত বক্তাদের নির্ধারিত বক্তব্য শেষে বক্তাদের উদ্দেশ্যে উপস্থিত শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়া হয়। মঞ্চে উপবিষ্ট হয়ে আমাদের আমন্ত্রিত আলোচকগণ উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কৌতূহলী প্রশ্নগুলি মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং নিজ নিজ অভিজ্ঞতা থেকে সেগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহকারে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন।উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বটি প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী ছিল।
প্রশ্নোত্তর পর্বটি শেষ হওয়ার পর আমন্ত্রিত বক্তাদের সাথে ফটোসেশনে মেতে ওঠেন সেমিনারে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।এরপর বুয়েট এনার্জি ক্লাবের পক্ষ থেকে সেমিনারে উপস্থিত সবার জন্য হালকা স্ন্যাক্স –এর ব্যবস্থা করা হয় এবং সবাইকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে একটি করে তথ্যবহুল ডিভিডি সরবারহ করা হয়।
সেমিনার পরবর্তী সময়ে ক্লাবের পক্ষ থেকে সেমিনারে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা যখন জানতে চেষ্টা করি, আমাদের আয়োজনটি তাদের কেমন লেগেছে,তখন তারা এই সেমিনারটি আয়োজনের জন্য BSAAG এবং বুয়েট এনার্জি ক্লাবকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ইস্যুতে এরকম প্রানবন্ত ও সময়োপযোগী সেমিনার নিয়মিতভাবে আয়োজন করতে অনুরোধ জানায়।আর এভাবে সবার হাসিমুখ আর শুভকামনা নিয়ে আমরা সেমিনারটি শেষ করি। সেমিনারটি আয়োজন করার সময় আমাদের বলা হয়েছিল যে কিছু টাকা বেচেঁ গেলে সমাজ সেবামূলক কাজে প্রদান করা হবে। এই তথ্য জেনেই এনার্জি ক্লাব সানন্দে নিঃসার্থভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের পরে একদিন তানজিয়া আপুর সাথে চায়ের আড্ডায় বসে নানান গল্পের ফাকে একটা খাম আমাদের হাতে চলে আসে ক্লাবের জন্যে। আড্ডা বেশি উপভোগ্য ছিলো নাকি ক্লাবের জন্যে ডোনেশন বলতে পারবো না তবে ভবিষ্যতে নিয়মিত এমন সেমিনার করার প্রত্যাশায় রইলাম।
বিজ্ঞপ্তিঃ
আমাদের উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার এবং স্কলারশিপের সকল তথ্য(স্লাইড)
বাংলাদেশে হয়ে গেল আমাদের ৯টি সেমিনার!
আমরা চাই আপনার ইউনিভার্সিটিতেই আসুক আমাদের সেমিনার আপা/ভাই! যদি আপনার ইউনিভার্সিটিতে করতে চান কোন সেমিনার তবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন! যেকোন প্রশ্ন/সাজেশনের জন্য মেসেজ পাঠানঃ [email protected] বা ফেসবুক পেইজে! ধন্যবাদ।
শাবিপ্রবিতে একটি কর্মশালা চাই। কতদিন চাইতে হবে ? 😛
মুখিয়ে আছে অনেক খানি আগ্রহ নিয়ে।
ইনশা আল্লাহ্, খুব তাড়াতাড়িই হবে। সাথেই থাকুন। 🙂
[…] Previous Next […]