৩ জুলাই ২০১২ জার্মানী এসেছি মাএ তিনদিন হল আর এ বাসায় এসেছি আজ সকালে।রাস্তাঘাট এখনো ঠিকমত চিনিনা তাই ইচ্ছে থাকলেও বাইরে ঘুরা হয় নি,স্কুলআর বাসা এই করে গত তিনদিন কেটেছে ।নতুন ল্যাপটর কিনব তাই কষ্টকরে দেশ থেকে বোঝাবেয়ে পুরুনোটা আনি নি।তাই আপাতত শুয়ে বসে দিন কাটছে ।ব্লকের টাকা আসতেও কিছুদিন সময় লাগবে।আগামী মাসখানেকের মধ্যে আর ল্যাপটপ কেনা হচ্ছে না।সাথে করে নিয়ে আসা সিমফোনী মোবাইলে শুয়ে শুয়ে গানশুনছি।
দরজায় কেউ একজন নক করায় উঠেগিয়ে দরজাখুলতেই এক হাই বলে হাত বাড়িয়ে তার পরিচয় দিল, সে আমার ই ফ্ল্যাটমেট ,মেডিকেলে পড়ছে ,আমার সাথে পরিচিত হতে এসেছে।কথাবলে খুবই ফ্রেন্ডলি মনে হল।যাবার সময় একটা কমিকস এর বই হাতে দিয়ে বলল ” ইও আর লারনিং ডয়েচ, হোপ ইউ কেন রিড দিস অলসো।” রাতে খাবার টেবিলে তার সাথে আবার দেখা হলো ।জানতে পারলাম সে আগস্টে বাংলাদেশ যাচ্ছে আইসিডিডিআর,বিতে একটা রিসার্চ ওয়ার্ক এ ।আর সে জন্য সে এখন বাংলা ও শিখছে, কারন তাকে গ্রামের লোকজনের ইন্টারভিউ নিতে হবে।সাথে একজন দোভাষি থাকলেও সে চাচ্ছে নিজে কাজ নিজেই করতে।আর অনেকটা কাকতালিয় ভাবেই একজন বাংলাদেশি তার পাশের রুমে আসছে আর তার উপর আমি আইসিডিডিআর,বিতে জব করেছি , এটা যেমনটা তার জন্য আনন্দের অনেকটা আমার জন্য ও। কারন আমি জার্মান ভাষা শিখছি, আর সে বাংলা শিখছে। আর আমরা এখন থেকে প্রতিদিন একঘন্টা বাংলা আর জার্মান চর্চা করব। আমি ওকে বাংলা সেখাব আধঘন্টা, আর সে আমাকে আধঘন্টা জার্মান শেখাবে।
দুদিনেইতার সাথে ভাল একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। কথায় কথায় যখন সে জানতে পারল আমার ল্যাপটপ নেই আর কিনতে ও দেরি হবে,সাথে সাথে একমুহূরত চিন্তা না করে সে বলল আমারতো দুইটা ল্যাপটপ ,একটা তুমি ইচ্ছা করলে নিয়ে ইউজ করতে পার। অনেকটা অবাক হলাম তার এই ব্যবহারে। মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল যখন জানতে পারলাম আগামী মাসে অন্য বাসায় চলে যেতে হবে।এ বাসাটা একমাসের জন্য আমার জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে।তো যথারীতি মাসশেষে বাসা বদলানোর সময় যতটানা খারাপ লেগেছে তার চেয়ে বেশি বিশ্মিত হয়েছি যখন আমার এক ফ্ল্যাটমেট তার গাড়ি নিয়ে ড্রপদিতে চাচ্ছে আর সেইযে বন্ধু তার ল্যাপটপ ফেরত দিতে গেলে সে বলে আমারতো এটা এখন লাগবে না তুমি সাথেকরে নিয়ে যাও।নতুন ল্যাপটপ কিনে তখন এটা দিয়ে যেও। তখন ভাবছি একমাস ও হয়নি তাদের সাথে পরিচয় অথচ কত আন্তরিকতা কতটা বিশ্বাস থাকলে বাবার কাছথেকে গিফটা পাওয়া ল্যাপটপটি অজানা অচেনা ছেলেকে দেওয়া যে কিনা অন্যআর এক বাসায় চলে যাচ্ছে। রাস্তাদিয়ে হাটছি আর ভাবছি তার আর আমার বিশ্বাস এর ব্যবধানের কথা।আমি ও তো বিশ্বাস করছিলাম।
মন পড়ছে সেপ্টেম্বর ২০১১ এর কথা বেশি না ১১ মাস আগের কথা।বিএস এসবি এর অফিস থেকে মোটামুটি ১৩/ ১৪ লাখটাকা খরচ এর একটা হিসাবনিয়ে বেরিয়েছি। পকেট থেকে এজেন্সি এর লিস্টটাতে দেখলাম মতিঝিলেই আরও একটা এজেন্সি আছে।ভালকরে খেয়াল করে দেখি আরে একই বিল্ডিং এর দু ফ্লোর নিচের তলায় অফিস, কিন্তু সেখানে গিয়েদেখি বিএসএসএল এর মত তেমন কোন বড়সর রিসিপসনতো দুরের কথা সাইনবোরড ও নাই।ভিতরে ঢুকে জানতে চাইলে এককোনায় একটা টেবিলে বসা কেরানিগোছের লোক বলল্লতার বস যিনি একজন উকিল তিনি স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেস করেন।তার আর তাদের অফিসের কন্ডিশন দেখে যততারাতারি এখান থেকে বেরোনো যায় তাই ভেবে পরে আসব বলে বের হলাম। এবার গন্তব্যস্থল রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির রাইফেল স্কয়ার সংলগ্ন আমবালা ইনন এর দোতলার ভিসা ওয়াল্ড ওয়াইড অফিস ।হয়নি।অফিসের বরণণাটা দিচ্ছি তারকারনটা পরে বলছি।ওদের অফিসে যেতে তাদের নিজস্ব আলাদা লিফট আছে যাদিয়ে যাবার পর লিফটের ঠিক সামনেই ই রিসিপসন।লিফট এর দরজা খুললেই দেখবেন ঠিক সামনর সুসজ্জিত একটা রিসিপসনএ দুজন সুন্দরি হাসিমুখে আপনারদিকে তাকিয়ে আছে আর অফিসরুমের চারদিকে সাজানো সোফায় অনেকেই বসে আছে যারা হয় আপনারই মত জালে আটকাতে এসেছে। সামনেই ই বিশাল এলসিডি টিভি চলছে। চারপাশের দেয়ালে সাজানো আছে ভিসার চেয়ারম্যানের বিশ্বর বিভিন্ন দেশের আকরষনীয় লোকেশনে, ইউনির সামনে তোলা ছবি, তারিখ ও লোকেশন সহ।তো ঢুকতেই রিসিপশনিসের প্রশ্ন আগে কারো চসাথে কথাবলেছিলাম কিনা তার মানে তাদের অনেকগুলো (শিকারী) কাউন্সিলর এর সাথে কথা হয়েছে কিনা। না উওরে সে একজনকে ফোন করে বলল নতুন (শিকার) স্টুডেন্ট ,পাঠাব? ফোন রেখে অপেখা করতে বলল। বসেবসে দেয়ালে টানানো ছবিগুলো দেখছি। সামনের শোকেজে রাখা বিভিন্ন এয়ারড ও ক্রেসড যাদের একটিতে লেখা only!member of German Bangladesh Businesses Association । কিছুক্ষন পর আমাদের ডাক পরতেই অফিসের ভিতরের দিকে আর একটা রিসিপসন আর ওয়েটিং এরিয়া পার হয়ে ছয় নাম্বার রুমে ঢুকলাম।বেশ সাজানো গোছানো একটা রুম। প্রতিটি দেয়ালে ঝুলছে ছবি। এখানে শুধু চেয়ারম্যানের ছবি না। যে কাউন্সলর এর রুমে ঢুকেছি তার ও ছবি ।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সাথে তোলা ছবি।পেছনের সেলফে রাখা ফাইলের সারি।দেয়ালের ই এক জায়গায় একটা প্লাস্টিক প্লেটে বড়বড় করে ” ক্রয়সুএে এই বিল্ডিয়ের ২য় ও ৩য় তলার মালিক ভিসা ওয়াল্ড এর উকিল ……” লেখাটা দেখে একটু অবাক হলেও পুরুনো একটা কথা মনে পরেগেল। বছর খানেক আগে একদিন আগের জব এর বস দুপুরে ফোন করে বলল মোতালেব প্লাজায় আসতে (সাধারনত তখন দুপুরে আমি ইউনিতে থাকতাম) বলল কি একটা কাজে এখানে এক অফিসে যাবেন সাথে আমাকেও নিয়ে যাবেন । দশমিনিট পর মোতালেব প্লাজার সেই অফিসে ঢুকেতো দেখি চমঙকার ডেকোরেশনে সাজানো অফিস। শুনেছি কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে এর পেছনে। কিছুদিন পর যখন ইউনিপে টু ইউ এর মালিক ১২০০ কোটি টাকা নয়ে পালালো। তখন বুঝলাম কোটিটাকার ডেকোরেশন এর অফিস আসলে পাবলিকের বিশ্বাসযোগ্যতা অরজন এর জন্য।এতখন ভিসা অফিসের বরননা দেবার নিশ্চয় বুঝেছেনা।
হায়রে বিশ্বাস।”কিছু কিছু মানুষ অন্যর অসহায়ত্ব দেখে তা দূর করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিশ্বাস এর চিন্তা না করেই।,”
নতুন বাসায় ঢুকে বাড়িওরার কাছ থেকে ওয়াইফাই এর পাসওয়ারড নিতেই আবার কৃতঙ্গচিওে মনে পড়েগেল বন্ধুটির কথা। চারমাস পর সে বাংলাদেশ থেক ফেরার পর তার লেপটপ ফেরতদেবার সময় তার একটি কথায় মনটা ভরে গেল।”আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি”। বাঙালিদের সরলতা আমাকে মুঙ্দ করে।” এ সরলতার সুযোগের অপব্যবহার যে অনেকেই করছে তা আর তাকে বলা হয় নি।হয়ত কোনদিন বলা ও হবে না। (চলবে)