জার্মানীতে আসার প্রথম মাসদুয়েক কেটে গেল বাসা, ভিসা আর নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে। একটা সমস্যার সমাধান করতে না করতে আর একটা এসে হাজির হয়। এক ধরনের বিরক্তি আর খুভ নিজের ভিতরে জমতে সুরু করেছে। এডমিনএ জব করার সময় দিনে শখানেক প্রবলেম সলভ করেছি। অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন ধরনের হেজিটেসন ছাড়াই। আর এখন নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগে । ভিসায় এর ঝামেলা শেয করতে না করতেই নতুন বাসা খুজার টেনসন চলে আসল , বাসা পারার পর এবার জব খুজার পালা । তিনমাস বসে বসে খেয়েছি। হাতের জমানো ইউরোগুলু ও কমতে শুরু করেছে । ক দিনে যা জার্মান শিখেছি তাতে কাজ খুজে পাবার মত লেভেল এ পড়ে না। ম্যাকডোনাল্ড, বার্গার কিং, ইন্ডিয়ান , পাকিস্তানি রেস্টুরেন্ট সহ অন্যান্য রেস্তুরেন্ট ঘুরা শেয হয়ে গেছে অনেক আগেই। সবাই মোবাইল নাম্বার রেখে ডাঙ্কে বলে বিদায় দেয়। পত্রিকা, ইন্টার্নেট এ তো আসেই। সাথে করে নিয়ে আসা জব সার্টিফিকেটগুলুকে এখন ভোজা মনে হয়। ইতিমধ্যে কিছু বাঙালি বড় ভাই এর সাথে পরিচিয় হয়েছে , যারা বছর ৭-৮ আগে আমাদের মত এজেন্সির মাধ্যমে না এসে আদম বা দালাল এর মাধ্যমে এসে অনেক কসরত করে এখান কার কাগজ পত্র ম্যানেজ করেছে । অনেক চেযটা করেও যখন কাজের ব্যবস্তা করতে পারছিলাম না শেযে উপায় না পেয়ে বড়ভাইদের দারস্ত হলাম । কিন্তু তাদের শিডিওল পাওয়া যে মুসকিল। যাই হোক বড় ভাই তার পরিচিত মহলে ফোন করে আবার কখনো নিজে সাথে করে নিয়ে যায় , কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। মাঝদিয়ে আমার মোবাইল এর ব্যালেন্স কমে। একদিন বরভাই এর ফোন পেয়ে তার বাসায় খাবার দাওয়াত পেলাম, আর যারার সময় তার জন্য ১০ ইউরো এর মোবাইল কার্ড নিয়ে যাবার অনুরোধ পেলাম , সাথে পরে ফেরত পাবার আশ্বাস । যদিও এই বরভাই এর কল্যানে বার্গার কিং এর কিচেন হেল্পার এর কাজ পেয়েছিলাম কিন্তু ১০ ইউরো আজ ও পেলাম না।
মাস ছয়েক পরের কথা ইতিমধ্যে ঘটেগেছে অনেক কিছুই , ভিসাও শেযের পথে, কিন্তু এখনো কোন ইউনিতে এডমিশম নিতে পারিনি , অন্যরা মুটামুটি ১০০০-১২০০ ইউরো দিয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এর মেয়াদ বাড়ানো পরিকল্পনা করে ফেলেছে। কি করব কি করব চিন্তা করে আবার গেলাম সেই জার্মান ডাক্তার ফেন্ড এর বাসায়,যে বাসায় আমি প্রথম এসে ছিলাম , যার কথা আগে এক লেখায় বলেছিলাম। সব শুনে সে ও বসে পড়ল ইন্টার্নেট এ। তাতে ও কাজ না হওয়ায় সাথে করে নিয়ে গেল তার ইউনিভার্সিটি এর ক্যারিয়ার সেন্টার এ। সব মিলিয়ে একটা বেলা খরচ করে ক্যারিয়ার সেন্টার থেকে কিছু ওপায় নিয়ে বের হলাম। অন্তত টেনশন কিছুটাও কমাতে পারলাম। আর আজকে আমি এখনও আমার সাথে আসা অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ স্টুডেন্টদের চেয়ে ভাল অবস্তানে থাকার পেছনে বড় একটি ভুমিকা আছে এই জার্মান ফ্রেন্ড এর। এই ফেন্ডকে নিয়ে বলতে গিয়ে মনে পরে এজেন্সি এর কথা, তাকে নিয়ে আরো কিছু বলার আগে এজেন্সি নিয়ে কিছু বলি
অক্টোবর ৪ ,২০১১ তে এজেন্সিতে ফাইল ওপেন করে ৩১৩৫ টাকা দিয়ে, কাগজ পত্র এর ফটোকপি দিয়ে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল এর অফার লেটার আসার ফোন কল পেলাম ২ দিন পর। হাম্বোল্ড ইন্সটিটিওট এর ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স এর অফায় লেটার। যেখানে লেখা ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ফি সব মিলিয়ে ৫৪০০ ইউরো এর মত। অফার লেটার নেবার সময় ডেডলাইন দিয়ে দিল ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দেবার। টাকা জমা দেবার পর ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে নতুন অফার লেটার সাথে ইউনি এর অফার লেটার আসবে। আর তাই যত তারাতারি পারা যায় টাকাটা যেন জমাদেই। যাই হোক ২ লাখ টাকা নিয়ে গেলাম । যেহেতু ভিসা হরার পর ফ্লাই করার আগে সব মিলিয়ে ৩.৫ লাখ টাকা এর মত লাখবে। তখন বাকি টাকা এর সাথে এই ৮০ হাজার টাকা দিব বল্লাম। কিছু না বলে ২ লাখ টাকাই জমা নিল। আর এম্বেসিতে সার্টিফিকেট আর পাসপোর্ট সহ অন্যান্য কাগজ এটাস্টেসন এর জন্য যেতে বলল । ২ লাখ টাকা জমা দিয়ে বসে আছি অফার লেটার এর আসায়। ইতিমধ্যে নিজে নিজে এম্বেসি থেকে কাগজ পত্র এটাস্টেসন করিয়ে এনে সেগুলু তাদের কাছে দিয়ে আসছি। মাস চলে গেল অফার লেটার আসেনা। মোবাইলে ফোনদিয়ে খোজ নিতে গেলে বলে, আজকে কথা হইসে আগামি সপ্তাহে আসবে। ১ মাস এর জায়গায় ২ মাস চলে গেল , এর মধ্যে ক্রিসমাস চলে এসেছে। ফোন না দিয়ে এবার সরাসরি গেলাম , এবার এপ্লিকেসন ফর্ম ফিলাপ করাল আর সিভি নিল । বলল ক্রিসমাস এর পর অফার লেটার চলে আসবে। ৬ ও ৯ বলে , অবশেযে জানুয়ারি ১৭, ২০১২ তে ফোন পেলাম অফার লেটার আসার। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি ৩ মাস পর পেলাম অফার লেটার। কিন্তু একি এমন কেন ? কেমন ছিল সে অফার লেটার তা দেখাব ও জানাব আগামি লেখায়।
আবারও আসি আমার সেই বন্ধুটির কথায়, ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স শেয এর পর এই সিটি ছেড়ে আসার সময় আমার বাইসাইকেলটা এ ফেন্ডকে দিয়ে আসতে চাইলাম , কারন আমি এখন যেখানে আছি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সাইকেল এ চলাচল টা তেমন সুবিধার না, আর আমার প্রয়োজন ও পরবে না। কিন্তু সে নিবে না তার কথা তুমি বিক্রিকরে দাও । পরে তার বার্থডে টে বলাম গিফট হিসেবে আমার সাইকেল টা দিলাম । এবার আর উপায় না দেখে নিল। তার কিছুদিন পর আবার তার ফোন… অনেকটা জড়তা নিয়ে সে যা বলল ,তাতে আমি উওর দেবার ভাযা হারিয়ে ফেললাম । বাইসাইকেল টা অনেক বেশি উচু তাই সে চালাতে পারে না, তাই সে বিক্রিকরে দিতে বলতেছে। তার এক ফ্রেন্ড ও নাকি কিনতে চাইছে। আমার গিফট এখন কি করবে এই জন্য আমাকে কল করেছে। এইটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু যখন আমার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার চাইল সে টাকা টা দেবার জন্য তখন আর কিছু বলাত ভাযা হারিয়ে ফেললাম । আরো আশ্চর্য হলাম বিক্রির পুরু টাকাটা আমার একাউন্টএ দেখে। নিজের দেশের লোক হয়েও টাকার বিনিময়েও যেখানে অন্যের কল্যানের পরিবর্তে পদে পদে সমস্যা আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিছে শত শত ছেলে মেয়েকে, সেখানে নিজের লাভের কথা না ভেবে কেন তার মুল্যবান সময় নস্ট করেছে এ প্রশ্নের জবাবে আমার বন্ধুটির সহজ উওর মানবিকতা,বন্ধুত্বতা এর জন্য… (চলবে )