অনেক আগের কথা, আমি তখন ক্লাস ৯ এ পড়ি, সময়টা ২০০৫। প্রথম আলো পত্রিকার সাথে ‘ছুটির দিনে’ নামের একটা ম্যাগাজিন দিত (এখনও দেয়)। ওই ম্যাগাজিনে ”বিদেশে পড়াশোনা” নামক একটা অধ্যায় থাকতো। একদিন সেই মাগাজিনে দেখলাম সুইডেনে পড়াশোনা নিয়ে লেখা। খুব ভালোলাগলো ইউরোপের মতো একটা যায়গায় ফ্রিতে লেখাপড়া করা যাবে। আবার পার্ট টাইম কাজের সুযোগও নাকি অনেক। সেইদিন থেকে আমার মাথায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার ভুত মাথায় চাপে। নিজেকে ওভাবে তৈরি করতে থাকলাম। এসএসসি, এইচএসসি শেষ হওয়ার পর ২০১০-এ IELTS প্রিপারেসন শুরু করলাম ভর্তি হলাম রাজশাহীর মেনটরস কচিং-এ। ২ মাসের মাথায় ব্রিটিশ কাউনসিল থেকে এক্সাম দিলাম। ওভারঅল ৬ পেলাম। কিন্তু কপালটা এতই খারাপ লেট হয়ে গেলো ২০১০এর সেমিস্টার ধরতে পারলাম না ২০১১ থেকে সুইডিশ সরকার নন ইউরোপিয়ানদের জন্য টিউশন ফি আরোপ করলো। মন মেজাজ খারাপ।
কি করি বুঝে উঠতে পারছিলাম না, এর মধ্যে ফেসবুকে ফিনল্যান্ডে বাংলাদেশি ছাত্রদের একটা গ্রুপের কল্যাণে ফিনল্যান্ডে পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারি। সেখানেও ফ্রি। সবকিছুই ভালো। কিন্তু বাধ সাধল ব্যাচেলরের এন্ট্রান্স এক্সাম। মহা ঝামেলা। অনেক পড়াশোনা করার প্রয়োজন। তারপর শুনলাম এই এক্সাম নাকি নেপালে দিতে হবে। আর তখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। সবাই বলল এখন গেলে কোন কাজ পাবিনা। খবরে দেখতাম tier-4 এর লোভে IELTS ছাড়া ইংল্যান্ডে গিয়ে অনেক ছাত্র দেশে ফিরে এসেছে আবার শুনলাম অনেকে যারা সর্বস্বান্ত হয়েছে তারা নাকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। শেষমেশ ফিনল্যান্ড এমনকি বিদেশ যাওয়ার চিন্তা বাদ গেল। এদিকে আমার এইচএসসির পর এইসব করতে গিয়ে ১ বছর লস হল। বাসায় বকাবকি করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিলো অনার্স শেষ করতে। আর কড়া ভাবে বলে দিল অনার্সের আগে বিদেশ যাওয়ার কথা যেন আর মুখে না আনি।
কি আর করা ভর্তি হলাম। আর বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকলাম। তখন আমার পছন্দের তালিকায় ছিল নরওয়ে। টিউশন ফি নাই, জীবনযাত্রার মান খুব ভালো মোটকথা সবকিছুই ভালো। অনার্স যখন শেষের পথে তখন কোর্স খুজতে শুরু করি। এখানেও একটা ঝামেলায় পরলাম আমার মেজর ”টুরিজম ম্যানেজমেন্ট” মাস্টার্সের জন্য ইংরেজিতে শুধু University of Stavanger এই এটা পড়ানো হয়। আর সেখাতে বাংলাদেশি কাওকে খুজে পেলাম না। আস্তে আস্তে নরওয়েও বাদ দিলাম। খুজতে থাকলাম নতুন কোন দেশ। নেদারল্যান্ডস, আমেরিকায় আসতে বলল অনেকে। কিন্তু যে টাকায় আমার সারাবছর থাকা খাওয়ার খরচ হয়ে যাবে সেটা টিউশনফি কেন দিবো। সেখান থেকেই আমার জার্মানি’র চিন্তা শুরু। আমার মেজর রিলেটেড অনেক সাবজেক্ট পেলাম। ফেসবুকে বিসাগ গ্রুপ আর জার্মানপ্রবাসের ওয়েবসাইটের কল্যাণে অনেক কিছু জানলাম। এই দুইটা থেকে সব খুঁটিনাটি বিষয় জানতে থাকলাম। এবার নতুন করে আবার সব শুরু করলাম। শুরু হল মিশন জার্মানি।
(চলবে)
[…] মিশন জার্মানি পর্ব- ১ (প্রেরণা) […]