প্রথমেই বলে নি আমি সবকিছু একেবারে শেষ সময়ে করি। তো জার্মানিতে অ্যাপ্লাই করার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলনা। বাচেলরের ডিফেন্স ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হয়েছিলো। অযথা ৩ টা মাস নষ্ট করে যখন দেখলাম যে ইয়ুনি আসিসটে অ্যাপ্লাই করার লাস্ট ডেট ১৫ জুলাই তখন টনক নড়ল।  এরপর IELTS এর জন্য রেজিসট্রেশন করলাম ১৬ মে এক্সাম। মাত্র ১০ দিন প্রিপারেসান নিলাম। ৩০ তারিখ রেজাল্ট হল আল্লাহ্‌র রহমতে খুব একটা খারাপ হলনা ৬.৫ (L-7.5 R-6.5 S-6.5 W-5.5) পেলাম।

মিশন জার্মানি পর্ব- ১ (প্রেরণা)

এরপর তড়িঘড়ি করে ইয়ুনি আসিসটের মাধ্যমে ৩ টা ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করলাম। সময় মত সব ডকুমেন্ট পাঠালাম  OCS কুরিয়ারের মাধ্যমে। এই কুরিয়ারের সার্ভিস খুব ভালো। খরচ মাত্র ১৪০০ টাকা। গ্রুপের পোস্ট সার্চ করে জানলাম DBBL এর ভার্চুয়াল কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা যায়। সব ঠিকই ছিল কিন্তু কেন জানি ইয়ুনি আসিসট আমাকে জানালো যে তারা টাকা কাটতে পারছেনা। আমি DBBL কে জানালে তারা প্রথমে বলে সব ঠিক আছে কিন্তু পরে বলে আমার নাকি ইয়রোর বিপরিতে ডলার কম আছে যদিও আমার ১২২ ডলার ছিল। আমার লাগত ১০৫ ইয়রো।  শেষে ইয়ুনি আসিসট জানালো কার্ড দিয়ে আর পেমেন্ট করা যাবেনা আপনাকে এখন ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ট্রান্সফার করতে হবে। পড়লাম মহা ঝামেলায়। অতঃপর আমার খালামনির সহযোগিতায় পার হলাম। উনি নেডারল্যান্ডস থেকে টাকাটা ট্রান্সফার করে দিলেন। যদি বাইরের এরকম কোন সুযোগ থাকে তাহলে সেটারই চেষ্টা করুন। এদেশের ব্যাংক বাবস্থা যে একেবারে ফালতু তা ওইদিন বুঝেছি।

১০ জুনের মধ্যে ইয়ুনি আসসিটের সব কাজ শেষ করে অপেক্ষা করতে থাকলাম। অনেক অপেক্ষার পর ৮ জুলাই তারা জানায় ভার্সিটিতে আমার ডকুমেন্ট ফরওয়ার্ড করা হয়েছে। আবার অপেক্ষা করতে থাকলাম। ২০ জুলাই ইয়ুনি আসিসট ছাড়া একটা ভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করেছিলাম (West Coast University of Applied Sciences) ওখান থেকে অ্যাডমিশনের মেইল আসে। ২৮ জুলাই অ্যাডমিশনের মেইল আসে Brandenberg Univesity of Technology-Cottbus থেকে। এটার জন্যই আমি অপেক্ষায় ছিলাম।

আমি এম্বাসিতে মে মাসে মেইল করে জেনেছিলাম যে আমার খালামনি/খালু নেডারল্যান্ডস থেকে জার্মানির স্টুডেন্ট ভিসার জন্য স্পন্সর করতে পারবে কিনা। তারা বলেছিল যে পারবে। কিন্তু শেষ সময়ে এসে এম্বাসি জানায় যে তারা বাংলাদেশি কোন ছাত্রের জন্য স্পন্সর গ্রহন করেনা ব্লক অ্যাকাউন্ট করতেই হবে। এখন কি করি। আগস্ট মাস পড়ে গেছে সময় হাতে আর নেই বললেই চলে কারন ১৯ তারিখ আমার ইন্টারভিউ। কিভাবে কি করবো, এত টাকা কিভাবে মেনেজ করবো আর পাঠানো যে কি ঝামেলা তা অন্য ভাইয়া আপুদের পোস্ট পড়ে বুঝেছিলাম। যাইহোক সাহস করে বিসাগের ওয়েবসাইটে ব্লক অ্যাকাউন্টের পোস্টগুলো পড়ে আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করলাম ইন্টারভিউ ডেট চেঞ্জ করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিলাম । ফর্ম পুরন করে এম্বাসি থেকে এটেসটেড করে ৯ তারিখ ডয়েচে ব্যাংকএ কুরিয়ার করে দিলাম। এম্বাসি টাইমের ব্যাপারে খুব কঠোর। এটেসটেড করতে গেলে অবশ্যই ১ঃ৩০ এর মধ্যে যাবেন। আমি লেট লতিফ তাই ২ দিন ঘুরে তৃতীয় দিন এটেসটেড করতে পেরেছি।

১৯ আগস্ট ডকুমেন্ট পৌঁছানোর ৫ দিন পর ডয়েচে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার একটা মেইল আমাকে পাঠায়। এরপর আসলো টাকা পাঠানোর পালা। গ্রুপে টাকা পাঠানো সংক্রান্ত পোস্ট দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো। অনেকে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক পারমিশন দিতেই নাকি ১৫ দিন সময় নেয়। শেষ ভরসা খালামনি নেডারল্যান্ডস থেকে  টাকাটা পাঠালেন। ১ দিন পরই ব্যাংক থেকে কনফার্মেশন পেয়ে গেলাম। এর মধ্যে হেলথ ইন্সুরেন্স করে ফেললাম গ্রিন ডেলটা থেকে। খরচ পড়ল মাত্র ৪৬৪৩ টাকা। এবার সবকিছু রেডি করে ইন্টারভিউ-এর অপেক্ষা করতে থাকলাম। আজ এ পর্যন্তই ইন্টারভিউ নিয়ে লিখবো সামনের পর্বে।

(চলবে)

এছাড়া পড়তে পারেনঃ

mm

By Md Reza

Brandenberg Univesity of Technology-Cottbus তে পড়ছি এই winter-2015 থেকে। সবাই আমার লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হবেন এই প্রত্যাশা রইল। :)

Leave a Reply